ফুটেজ/ সন্ধ্যায় খালি হাতে ‘আটক’ জিকু গভীর রাতে গ্রেপ্তার ‘অস্ত্রসহ’!

চট্টগ্রামের টাইগারপাস থেকে ‘অস্ত্রসহ’ তিনজনকে আটকের ঘটনায় চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি জিকু চন্দ্র দাশকেও সিআরবি থেকে গ্রেফতার করা হয়নি। নগরের ব্যস্ততম এলাকা জিইসি মোড় থেকে ২২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় তাকে গ্রেফতার করে ডিবি। পরে সাজানো অস্ত্র মামলায় আসামি করা হয়েছে জিকুকে। চট্টগ্রাম প্রতিদিনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এমন তথ্য। এই ঘটনায় চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে আসা আরেকটি সিসিটিভি ফুটেজ থেকে জানা যাচ্ছে, সিআরবির অভিযান ও এই ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার সবটাই সাজানো।

সোমবার মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পাঠানো একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রোববার (২২ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১.৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন টাইগারপাস রেলওয়ে পাহাড় সংলগ্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে একটি দেশীয় বন্দুক, একটি কার্তুজ, একটি ফোল্ডিং ছুরি ও একটি চাপাতিসহ জিকু চন্দ্র দাশ (২৬), মো. শোয়েব (৩০) ও মো.সাজ্জাত হোসেন (২৬) কে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ।

কিন্ত জিইসি মোড়ের ২২ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটের একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, সাদা পোশাকের একদল লোক টেনেহিঁচড়ে হোটেল জামান এন্ড রেস্টুরেন্টের সামনে নিয়ে আসছেন জিকু দাশকে। সেখানে তারা জিকু দাশের দেহতল্লাশি করেন। তবে সেসময় দেহতল্লাশি চালিয়ে জিকু দাশের কাছে কিছু পেতে দেখা যায়নি ভিডিওতে। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে একটি মোটরসাইকেল এসে থামলে জিকুকে প্রথমে সে বাইকে তোলা হয়। পরক্ষণে আরেকটি বাইক এলে প্রথম বাইক থেকে নামিয়ে তাকে দ্বিতীয় বাইকে তোলা হয়। বাইকের মাঝখানে জিকুকে বসিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে ওই স্থান ত্যাগ করেন তারা। ঘটনার পুরো সময়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক কনস্টেবলসহ বেশ কয়েকজন হকার ও সিএনজিচালক সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জিকু দাশের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে। সনৎ বড়ুয়ার তত্ত্বাবধানে থাকা বিউটিফিকেশনের কাজের দেখাশোনা করতেন তিনি। বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ থাকা জিকু ডাক্তার দেখাতে জিইসি মোড়স্থ মেডিকেল সেন্টারে যাচ্ছিলেন। এসময় হঠাৎ করে মোড় থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায় সাদা পোশাকের ডিবি সদস্যরা। পরদিন মিথ্যা একটি মামলায় তাকে আসামি করে কোর্টে চালান করে ডিবি পুলিশ।

জিকু দাশকে সন্ধ্যায় জিইসি মোড় থেকে গ্রেফতার করা হলেও গভীর রাতে সিআরবি থেকে অস্ত্রসহ গ্রেফতারের প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মিথ্যে মামলায় আসামি কেন করলো ডিবি— এই প্রশ্নের কোন উত্তর পাওয়া যায়নি কোথাও।

এই বিষয়ে জানতে সিএমপির অতিরিক্ত উপ কমিশনার (ডিবি উত্তর) মির্জা সায়েম মাহমুদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন ‘আমি গত কিছুদিন ধরে বিপিএলের ডিউটি করেছি। কাল মাত্র বিপিএলের ডিউটি শেষ হলো। এই বিষয়ে কিছু জানি না। আপনারা ইন্সপেক্টর রুহুলের সাথে যোগাযোগ করুন।’

ডিবির ইন্সপেক্টর রুহুল আমিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই বিষয়ে কথা বলতে চান না বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

প্রসঙ্গত, সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানায় জিকু চন্দ্র দাশ, শোয়েব, সাজ্জাতকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে ডিবি। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে রোববার (২২ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১.৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন টাইগারপাস রেলওয়ে পাহাড় সংলগ্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে একটি দেশীয় বন্দুক, একটি কার্তুজ, একটি ফোল্ডিং ছুরি ও একটি চাপাতিসহ তাদের গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ।

কিন্তু এরপর চট্টগ্রাম প্রতিদিনের অনুসন্ধানে দেখা যায় ভিন্ন তথ্য। তিনদিন আগে ২০ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৪ টায় মুরাদপুর থেকে গ্রেফতার করা হয় শোয়েবকে। সেই সংবাদের সূত্র ধরে আরো একটি ভিডিও ফুটেজ চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে আসে। যেখানে দেখা যাচ্ছে মামলার প্রধান আসামিকেও ভিন্ন জায়গা থেকে ভিন্ন সময়ে গ্রেফতার করেছে তারা। ওই সময় তাদের কাছ থেকে কোনো অস্ত্রও পাওয়া যায়নি।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!