সিসিটিভির সেই ৪৯ সেকেন্ড, পাথরঘাটার ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণের সেই মুহূর্ত

চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটা ব্রিকফিল্ড এলাকায় একটি পাঁচতলা ভবনে বিস্ফোরণের নেপথ্যে গ্যাস পাইপলাইনে লিকেজ হওয়া বা অতিরিক্ত গ্যাস জমে থাকার কারণে চুলা জ্বালাতে গেলে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে প্রাথমিকভাবে।

রোববার (১৭ নভেম্বর) সকালে কোতোয়ালী থানার পাথরঘাটা এলাকার বড়ুয়া ভবনের নিচ তলার বাসায় গ্যাস লাইন থেকে বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে। স্থানীয় লোকজন দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।

প্রত্যক্ষদর্শী বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘সকালে আমি প্রার্থনা সেরে নাশতা করতে বসি। এর পর পরোটা মুখে দিতেই বিকট আওয়াজ শুনি। মুখে পরটা নিয়েই নিচে নেমে দেখি চারপাশে তুফানের মতো দেয়ার ভেঙে উড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে। আতংকে মাথায় কাজ করছিলো না। চারপাশে সবাই ছোটাছুটি করছে। এক রিকশাওয়ালাসহ এক মহিলা সাথে সাথেই মারা গেল।’

পাশের বিল্ডিংয়ের গাড়ির ড্রাইভার জাবেদ দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আর ২ মিনিটের জন্য না হলে নিহতদের মধ্যে আমার নামও হয়তো পাওয়া যেতো। অন্যান্য দিন এই সময়ে এ ভবনের সামনে চায়ের দোকানে বসে চা খাই। কিন্তু আজকে স্কুল থেকে এসে আমার মালিকের জন্য নাস্তা আনতে যাচ্ছিলাম ওই পথ দিয়েই। আর মাত্র ২ মিনেটের দুরত্বে ছিলাম বলেই আমি বেঁচে যাই। আর একটু সামনে গেলে মৃত্যুর পথ থেকে আমিও ফিরতে পারতাম না। আমাদের গাড়ির ক্ষতি হয়েছে অনেক। রাস্তায় যারা ছিল তারা বাঁচতে পারেনি কেউ। বিস্ফোরণে এ ভবনের নিচের দেওয়াল ঝড়ের মতো উড়ে গিয়ে পড়ছিল তখন।’

বড়ুয়া ভবনের পাশের ভবনের মালিক দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঠিক ৯.০৪ মিনিটে ঘটনাটি ঘটে। বিকট একটা শব্দ হয় এতে আশেপাশের ৪-৫ টা ভবনের গ্লাস ভেঙে পড়ে। চারপাশে অন্ধকার হয়ে যায়। আমাদের সিসিটিভি ফুটেজে দেখতে পাই বিস্ফোরণে রিক্সাচালক ও যাত্রীসহ মুহূর্তের মধ্যেই মারা যান। বেশি ক্ষতি হয়েছে পথচারীদের। কারণ বিস্ফোরণের বাড়ির দেওয়াল উড়ে গিয়ে পড়ছিল।’

প্রত্যক্ষদর্শী আবু সালেহ দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যে গ্যাস লাইন উদ্ধার করেছে তা দেখলেই বুঝা যাচ্ছে এ গ্যাসলাইন অনেক পুরনো। আয়রনে পুরো পাইপ নষ্ট হয়ে গেছে। লিকেজ থাকার সম্ভাবনা তো আছেই। এসব থেকে প্রতিনিয়ত নানা দুর্ঘটনা ঘটছে কিন্তু তাও বাড়ির মালিকরা সচেতন না। এগুলো সারানোর কোনো উদ্যোগ ওনার নিচ্ছেন না।

কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহসীন দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে কিচেনে গ্যাস লাইনে লিকেজ ছিল বা অতিরিক্ত গ্যাস জমে ছিল আর তখন কেউ চুলা জ্বালানোর চেষ্টা করলে তখনি বিস্ফোরণ ঘটে।

ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক জসীম উদ্দীন দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, গ্যাসলাইন পুরোনো ছিলো। লিকেজ, ক্যেমিক্যাল, নাশকতা এসব আছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিস্ফোরণে দুটি আবাসিক ভবনের প্রাচীর ও সড়কের সীমানর প্রাচীর ধসে পড়েছে। তাছাড়া কত টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনো আমরা বলতে পারছি না।

চমেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক আলাউদ্দীন তালুকদার বলেন, সকাল ৯টার দিকে পাথরঘাটা থেকে আহত অবস্থায় কয়েকজনকে আনা হয়। তাদের মধ্যে ৭ জন নিহত হয়েছে।নিহতের তিনজন নারী একজন শিশুও রয়েছে। আহতদের হাসপাতালের ক্যাজুলটি ইউনিটে রাখা হয়েছে।

সাকী/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!