বরফে জিম্মি চাক্তাই রাজাখালীর মাছব্যবসা, পেছনে তিন সিন্ডিকেট

মাছ ব্যবসায়ী ও জেলেদের জিম্মি করে চট্টগ্রাম নগরের চাক্তাই ও রাজাখালী এলাকায় তিন সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলছে জমজমাট বরফ ব্যবসা। সেখানে গড়ে ওঠা মৎস্য অবতরণ, সংরক্ষণ ও বিপণন এলাকাকে ঘিরে প্রতিদিন প্রায় কয়েক হাজার পিস বরফ বেচাকেনা হয়। সিন্ডিকেটের এ উষ্ণতায় মাছ ব্যবসায়ী ও জেলেরা বাধ্য হচ্ছে তাদের কাছ থেকে বরফ কিনতে— এমনটাই অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

অভিযুক্ত তিন সিন্ডিকেটে আছেন বরফ ব্যবসায়ী সেলিম, মো. আজম এবং হাসান, মানিক, রাশেদ পারভেজ। সেলিম চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে সাবেক প্রার্থী বাহাদুর গ্রুপের সদস্য, মো. আজম কর্ণফুলী এলাকার জাহাঙ্গীর মেম্বার গ্রুপের সদস্য এবং হাসান, মানিক ও রাশেদ পারভেজ মহানগর আওয়ায়ী লীগের ফারুক আহম্মদ গ্রুপের সদস্য।

জানা গেছে, চাক্তাই, রাজাখালী, নতুন বাজার, লইট্যাঘাটা এলাকায় প্রতিদিন ২-৩ হাজার পিস বরফ বিক্রি হয়। এ বরফ কর্ণফুলী, ফিশারিঘাটসহ নগরের বেশ কয়েকটি স্থান থেকে ক্রয় করে সিন্ডিকেটটি। বরফ কল থেকে কেনা প্রতিটি বরফ ১০০-১৪০ টাকা হলেও, সেগুলো বিক্রি হয় অতিরিক্ত দামে। ইলিশ মাছের মৌসুমে প্রতিটি বরফ বিক্রি হয় ৫ থেকে ৬০০ টাকায়। আর মৌসুম ছাড়া এ বরফ বিক্রি হয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়।

ভুক্তভোগীরা জানান, বরফ কল থেকে বরফ কিনতে লাগে ১০০-১৪০ টাকা। কেনা এ বরফ আনতে লেবার খরচ ১০ টাকা, গাড়িভাড়া ১০ টাকা এবং স্টাফ খরচ ১০ টাকাসহ মোট খরচ পড়ে ১৭০ টাকা। অথচ সিন্ডিকেটটি মাছ ব্যবসায়ী ও জেলেদের কাছে অতিরিক্ত দামে তা বিক্রি করছে। পুরো মৎস্য বিপণন কেন্দ্র তাদের হাতে জিম্মি।

কাউকে জিম্মি করে বরফ বিক্রির ব্যাপারটা অস্বীকার করে বরফ ব্যবসায়ী সেলিম বলেন, বরফ কল থেকে পাইকারে বরফ কিনে সেগুলো রাজাখালী ও চাক্তাই নতুন বাজার এলাকায় বিক্রি করছি। খুচরা ব্যবসায়ীরা তো এটা করতে পারবে না। তাই আমরা করছি। অনেক সময় ব্যবসায় লোকসান হয়। এতে লাভ কম-বেশি হয়।

এ বিষয়ে বরফ ব্যবসায়ী আজম আহমেদ বলেন, আমরা বাজার থেকে বরফ কিনে এনে ক্রয়মূল্যের সাথে ব্যালেন্স করে বিক্রি করছি। বাজারে বরফের চাহিদা বাড়লে বাড়তি টাকা নিতে হয়। তবে ইলিশ মাছের মৌসুমে প্রতিটি বরফ সর্বনিম্ন ৪শ’ টাকা বা তার অধিক মূল্যেও বিক্রি হয়।

বরফ বেচাকেনা নিয়ে কোনো জেলে বা ব্যবসায়ীকে লাঞ্ছিত কিংবা হুমকির প্রশ্নই ওঠে না বলে তার দাবি।

সোনালী যান্ত্রিক মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি হাজী মোহাম্মদ আলী বলেন, চাক্তাই, রাজাখালী ও নতুন বাজার এলাকায় অতিরিক্ত দামে যারা বরফ বিক্রি করছেন, তারা সমিতির কেউ না। তাদের বিষয়ে প্রশাসন বলতে পারবে। এটা ভোক্তা অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট বিষয়। জিম্মি করে বরফ বিক্রি করা অন্যায়।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, সিন্ডিকেট করে কেউ অতিরিক্ত দামে বরফ বিক্রি করছে কি না সেটা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দেখা উচিত। যদি বরফে দাম বেশি নেয়া হয়, তাহলে মাছ ব্যবসায়ীরা এই টাকাটা উঠিয়ে নেবে ক্রেতার কাছ থেকে।
তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলবো। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের উচিত হবে বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো।

সিআর

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!