সিনহা হত্যায় ৬০ সাক্ষীর জবানবন্দি, রিপোর্ট দিতে আরও এক সপ্তাহ

মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডে সরকারি তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মিজানুর রহমান বলেছেন, ‘আগামি ২৩ আগস্টের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। কমিটি তদন্তে যা পেয়েছে তাই উপস্থাপন করা হবে।’ রোববার (১৭ আগস্ট) কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জের কার্যালয়ে গণশুনানি শেষে সাংবাদিকদের একথা জানিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ নিহতের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি সব কিছু উর্ধ্বে রেখে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে বলেই সবাই বিশ্বাস রাখতে পারেন। নিরপেক্ষ ও ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে এই পর্যন্ত ৬০ জনের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। রোববার (১৭ আগস্ট) সকালে ১১ জন সাক্ষী জবানবন্দি দেওয়ার জন্য গণশুনানির বুথে এসে রেজিস্ট্রেশন করেন। সেখান থেকে ৯ জনের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। বাকি দুজনকে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে বিশ্বাসযোগ্য না হওয়ায় তাদের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়নি।’

তদন্ত কমিটির প্রধান মিজানুর আরও বলেন, ‘সিনহা হত্যাকাণ্ডে টেকনাফ বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ, টেকনাফ থানা পুলিশ, সিনহার সুরতহাল তৈরিকারী পুলিশ কর্মকর্তা, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট তৈরিকারক ডাক্তার, হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শীসহ আরও ৫১ জনের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। রোববার আরও ১১ জন সাক্ষী দিতে এলে ৯জনের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে ৬০জন স্বাক্ষীর।’

এ বিষয়ে বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মৌলভী আজিজ উদ্দিন বলেন, ‘স্বাক্ষী দিতে স্বেচ্ছায় আসা ব্যক্তিদের মধ্যে পুলিশের সাজানো ব্যক্তি রয়েছে কী না এমন শংকা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে শুনানি গ্রহণকারীরা বক্তব্য শুনেই বুঝতে পারবেন কারা সাজানো এবং কারা বাস্তবিকভাবে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী।’

গণশুনানিতে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কমিটির অন্যান্য সদস্য, রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মনোনীত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের লে. কর্নেল সাজ্জাদ, চট্টগ্রামের ডিআইজি মনোনীত অতিরিক্ত ডিআইজি জাকির হোসেন এবং কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শাজাহান আলি। প্রথমে কমিটিকে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথা বলা হলে কমিটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ সময় আরও ৭ দিন বাড়ানো হয়। বর্ধিত সময় আগামী ২৩ আগস্টের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের কথা জানিয়েছেন কমিটির প্রধান মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ।

এ মামলায় রিমান্ডে নেওয়া পুলিশ সদস্যরা হলেন এএসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাফানুর রহমান, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন। এছাড়াও পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী মো. নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াছকেও জিজ্ঞাসাবাদ করছে র‌্যাবের তদন্ত দল। কারাগারে রয়েছেন অভিযুক্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রত্যাহার হওয়া পরিদর্শক লিয়াকত আলী, এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত। আদালত তাদের ৭দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। যে কোন মুহূর্তে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে র‌্যাবের একটি সূত্র।

উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ঘটনার পর পুলিশ বাদি হয়ে টেকনাফ থানায় দুটি মামলা করে। রামু থানায়ও একটি মামলা করা হয়। পরে ৫ আগস্ট কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। এতে ৯ জনকে আসামি করা হয়। আসামিরা হলেন- টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রত্যাহার হওয়া পরিদর্শক লিয়াকত আলী, এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, এএসআই লিটন মিয়া, পুলিশ কনস্টেবল সাফানুর রহমান, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, মো. মোস্তফা ও এসআই টুটুল। এদের মধ্যে আসামি মোস্তফা ও টুটুল পলাতক। রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া পুলিশের চার সদস্য ও পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন স্বাক্ষীকে গত শুক্রবার থেকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে র‌্যাব।

এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!