চট্টগ্রামের জেলে পল্লীতে সিত্রাং তাণ্ডব, হাজারো মানুষের বিধ্বস্ত ঘর ভাসলো সাগরে

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত চট্টগ্রাম ইপিজেডের জেলে পল্লী। এই এলাকার প্রায় দেড় শতাধিক পরিবার হারিয়েছে তাদের সর্বস্ব। খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে তারা।

সোমবার রাত ৯ থেকে ১০টার মধ্যে জেলে পল্লীতে ধ্বংসলীলা চালায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো জানায়, লাখ লাখ টাকার ঘরসহ সরঞ্জাম ও প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র সাগরে ভেসে গেছে তাদের চোখের সামনেই। কেনো পরিবার সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় না নিলেও পরিবার নিয়ে বেড়িবাঁধে দাঁড়িয়ে নির্বাক দৃষ্টিতে দেখেছে ঘূর্ণিঝড় ভয়ঙ্কর থাবায় সবকিছু তছনছ হয়ে যাওয়া।

তবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আকমল আলী রোডের জেলে পল্লীতে বিধ্বস্ত হয়েছে প্রায় ১৩০টি বসতঘর ও দোকানপাট। রাতের অন্ধকারে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো জীবন রক্ষায় বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিলেও জিনিসপত্র ও মালামাল সরিয়ে নিতে পারেনি। বসতঘর ও আসবাবপত্র হারিয়ে বিলাপ করতে দেখা গেছে অনেক পরিবারকে।

জগন্নাথ মন্দিরের দেখভালের দায়িত্বে থাকা অধীর জলদাশ বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় আমাদের সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ঘরবাড়ি ও মন্দিরের। রক্ষা করতে পারলাম না জগন্নাথ মন্দিরকে। সাংসদ এম এ লতিফ মন্দিরের বিদ্যুৎতের ব্যবস্থা করে দিয়ে ছিলেন। বেড়িবাঁধ উচ্ছেদের সময় সরকার আমাদেরকে পূর্ণবাসনের আশ্বাস দিলেও আমরা এখনো ভূমিহীন।’

তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র সুজন জলদাশ কান্না জড়ানো কন্ঠে বলেন, ‘আমার বই খাতা সব নিয়ে গেছে মা গঙ্গা। আমার বাবা-মা আমাকে আর লেখাপড়া করাতে পারবে না। শেষ হয়ে গেছে আমার লেখাপড়ার স্বপ্ন।’

চম্পা রানী জলদাশ বলেন, ‘রাত ১০টায় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে আমি তিন সন্তান নিয়ে বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়েছি। ভেবেছি ঘূর্ণিঝড়ের পর জিনিসপত্র খুঁজে নিব। কিন্তু ভাগ্য খারাপ অবশিষ্ট ঘরসহ কিছুই পেলাম না। আমার লাখ টাকার জাল ভেসে গেছে। একেকটি জালের দাম ১০-১৫ হাজার টাকা।’

জানা যায়, বেড়িবাঁধ সাগর পাড়ে লিজের জায়গায় যারা নিজ উদ্যোগে ঘর তৈরি করেছে তাদেরকে মাসে ৫০০ টাকা ঘর ভাড়া আর ৫০০ টাকা বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়। যারা শুধু ঘর ভাড়া নিয়ছেন তাদেরকে ১ হাজার টাকা ঘর ভাড়া ও ৫০০ টাকা বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়। এভাবে প্রায় দোকানপাটসহ হাজারখানেক বসতি ছিলো বেড়িবাঁধে।

বিশেম্বর জলদাশ নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমার ৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। দুইটি বোট, ১০০টি টং জাল, ২০টি বিনি জাল, রশি, ফোলা, বাঁশ, ঘরসহ বিভিন্ন মালামাল সব জলে গেছে। আমার মত এভাবে আরক ৭০ জন বদ্দারের ক্ষতি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় জীবন রক্ষায় বেড়িবাঁধ আশ্রয় নিয়েছি।’

ঘোনার মালিক শিবু প্রসাদ দে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রায় দেড় শতাধিক পরিবারের বসবাস এখানে। তার মধ্যে বদ্দার ৭০ জন, সাধারণ পরিবার ৮০টি। খাবারের দোকান, মুদির দোকান, তেলের দোকানসহ বিভিন্ন দোকান ছিলো এখানে। আমার ৪টি দোকানের ক্ষতি প্রায় ৩০ লাখ। ৪টি ঘোনার ২০ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।’

এ বিষয়ে কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি গতকাল রাত ৩টা পর্যন্ত বেড়িবাঁধ এলাকায় ছিলাম এবং তাদেরকে খাবার দিয়েছি। আজকে চসিকের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হবে। আগামীকাল চাল বিতরণ করা হবে।’

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!