সিডিএ/ ছালামের বিদায়বেলার ৩ প্রস্তাব উড়ে গেল বোর্ডসভায়

১০ বছর সিডিএ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব শেষে বিদায় নেওয়ার পরও নিজের কর্তৃত্ব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন আবদুচ ছালাম। সে কারণে তড়িঘড়ি করে বিদায়ের শেষ সময়ে এসে সিডিএর ৪৩৫তম সভায় তিনটি প্রস্তাব তুলেছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী পরের বোর্ড সভায় পাসের জন্য এজেন্ডা আকারে উঠার কথা। কিন্তু ছালামের বিদায়ের পর নতুন চেয়ারম্যান দোভাষের প্রথম বোর্ড সভায় (৪৩৬ তম) ছালামের সব প্রস্তাবই নাকচ হল। বৃহস্পতিবার দুপুরে সিডিএর পূর্ণাঙ্গ বোর্ড সভায় সভাপতিত্ব করেন জহিরুল আলম দোভাষ। তবে এসব নিয়ে ভাবতে রাজি নন বিদায়ী চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম।

প্রসঙ্গত, এ বছরের ২৬ এপ্রিল সিডিএ চেয়ারম্যানের পদ থেকে বিদায় নেন আবদুচ ছালাম। এরপর সিডিএ চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি জহিরুল আলম দোভাষ।

গত ১৮ এপ্রিল সিডিএর ৪৩৫ তম বোর্ড সভায় বিদায়ী চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম তিনটি প্রস্তাব রাখেন। নিয়ম অনুযায়ী এসব প্রস্তাব পরের বোর্ড সভায় এজেন্ডা আকারে উঠার কথা। এসব প্রস্তাবগুলো হলো ব্যক্তি আবদুচ ছালামকে প্রধান করে বোর্ড মেম্বারদের সদস্য করে সিডিএর বর্তমান চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো মনিটরিং কমিটি গঠন। সিডিএ পরিচালিত চান্দগাঁও আবাসিকের সিডিএ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও মোহরার সিডিএ গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতি পদে বিদায়ের পর বহাল থাকা। এছাড়া নগরীর ব্যস্ততম এলাকা জিইসিতে আখতরুজ্জামান ফ্লাইওভারটির ২৮ থেকে ২৫ নম্বর পিলারের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গা হোটেল দি পেনিনসুলাকে বরাদ্দ দেওয়া।

তবে এসব বিষয় গত বোর্ড মিটিংয়ে তোলার পর গণমাধ্যমে প্রকাশ প্রকাশিত হলে নগরবাসীর মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। বিশেষ করে মনিটরিং কমিটিতে ছালামের কর্তৃত্ব ও স্কুল কমিটিতে ব্যক্তি ছালামকে রাখার বিষয়ে সরাসরি বিরোধিতা করেন নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ। আর ফ্লাইওভারের নিচে ভাড়া দেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ পেলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, পুলিশসহ সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর বিরোধিতা আসে।

পরে বোর্ড মিটিংয়ের আগেই ফ্লাইওভার ও মিড আইল্যান্ডটি নিজেদের কাছে রেখে সড়কটি সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে দেয় সিডিএ। ফলে ৪৩৬ তম বোর্ড সভায় উঠলেও সেটা সিটি করপোরেশনের সড়ক বলে তা নাকচ হয়। একই সভায় স্কুল কমিটিতে ছালামকে সভাপতি করা ও উন্নয়ন প্রকল্পের মনিটরিং কমিটির সভাপতি হিসেবে আবদুচ ছালামের কর্তৃত্ব কাটানোর প্রস্তাবনাটি নাকচ করা হয়।

জানতে চাইলে সিডিএর চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ বোর্ড সভায় বিধি মোতাবেক যা যা প্রস্তাব উঠছে তা পাস হয়েছে। আর যা বিধির বাইরে তা নাকচ করা হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, ওয়াসা ও রেলওয়ের প্রতিনিধিদের বোর্ড মেম্বার হিসেবে থাকার বিষয়টি আমি নিশ্চিত করতে চাই।’ তবে বিদায়ী চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের প্রস্তাবগুলো নিয়ে সরাসরি কোনো কথা বলেননি বর্তমান চেয়ারম্যান দোভাষ।

সিডিএর বোর্ড মেম্বার ও ৩৩ নম্বর ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বিদায়ের আগে ৪৩৫ তম সভায় নিজের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে যে তিনটি তুলেছিল তা ৪৩৬তম বোর্ড সভায় সর্বসম্মতিক্রমে নাকচ করা হয়েছে। এর ফলে সিডিএ থেকে আবদুচ ছালামের কোনও সম্পৃক্ততাই থাকলো না।’ এ সময় সিডিএ পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজের ছবি লাগানোর বিষয়টিও অনুচিত বলে মন্তব্য করেন এ বোর্ড মেম্বার।

জানতে চাইলে বিদায়ী চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি এখন সিডিএতে নেই। আমি এসব নিয়ে ভাবিও না। এসব নিয়ে কোনও কথা বলতে চাই না। বাদ দিন, বাদ দিন।’

এর আগে ২০০৯ সালের ২৩ এপ্রিল দুই বছরের জন্য সিডিএর চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পান নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম। এরপর ২০১১ সালের ২৬ এপ্রিল দ্বিতীয় মেয়াদে দুই বছর, ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ তৃতীয় মেয়াদে এক বছর, ২০১৪ সালের ২২ এপ্রিল চতুর্থ মেয়াদে এক বছর, ২০১৫ সালের ১৬ এপ্রিল পঞ্চম মেয়াদে দুই বছর এবং ২০১৭ সালের ২৩ এপ্রিল ষষ্ঠ মেয়াদে দুই বছরসহ ছয় দফায় ১০ বছর দায়িত্বপালন করেন তিনি।

আবদুচ ছালাম চেয়ারম্যান হওয়ার পর বড় বড় প্রকল্প বরাদ্দ এনে আলোচনায় আসেন। তার আমলে এমএ মান্নান ও আখতারুজ্জামান উড়ালসড়কসহ ছোট-বড় ৩২টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সিডিএ। তবে বহদ্দারহাট (এম এ মান্নান) ফ্লাইওভারের গার্ডার ধসে ১৩ জন পথচারী নিহত হওয়ার পর বিতর্কে পড়েন ছালাম। বর্তমানে নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগাপ্রকল্প, পতেঙ্গা-ফৌজদারহাট রিং রোড, লালখান বাজার-বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ সিডিএর ১১টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। তবে কাজ শুরুর দুই বছর পরও জলাবদ্ধতা নিরসন না হওয়া, রিং রোডের ওয়াকওয়ে ধসে পড়ার পর দায়িত্ব ছাড়লেও বির্তক ছাড়েনি তার।

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!