সিডিএর বিজ্ঞাপনে ঢেকেছে মুরাদপুর ফ্লাইওভারের পথনির্দেশিকা

চট্টগ্রাম নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ও সর্ববৃহৎ মুরাদপুর ফ্লাইওভারটিতে শুলকবহরের দিকে উঠার পথসহ বিভিন্ন স্থানে পথ নির্দেশিকা টাঙিয়েছিল বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। তবে সেই সিডিএ-ই তাদের নির্মাণাধীন ১৬৫টি ফ্ল্যাট বিক্রির জন্য সেই সব পথ নির্দেশিকা ঢেকে দিয়ে টাঙিয়েছে বড় বড় বিজ্ঞাপনী ব্যানারে।

এর ফলে ভুল পথে চলে যাওয়াসহ বিভ্রান্ত হতে হচ্ছে ফ্লাইওভার ব্যবহারকারী গাড়ি চালকদের। কিন্তু যাদের এই সব তদারকি করার কথা সেই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন জানেই না বিষয়টি।

সরেজমিন দেখা যায়, মুরাদপুর ফ্লাইওভারটিতে শুলকবহরের দিকে উঠার পথে পথনির্দেশিকা ঢেকে দিয়ে সিডিএ স্কয়ারের ব্যানার টাঙিয়েছে সিডিএ। এর ফলে এই ফ্লাইওভার ব্যবহারকারী অনেক গাড়িচালক দিকভ্রান্ত হচ্ছেন। ভুল পথে চলে গিয়ে অনেক পথ ঘুরে আসতে হচ্ছে। এ নিয়ে সাধারণ পথচারীসহ গাড়িচালকদের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সিটি করপোরেশন এলাকাটি যখন অনেকটাই বিলবোর্ড ব্যানারমুক্ত, সেখানে সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন বিজ্ঞাপনী ব্যানার টাঙানোর বিষয়টি নগরজুড়ে জন্ম দিয়েছে বিস্ময়ের।

যদিও গত ১ ডিসেম্বর থেকে এই ফ্লাইওভারসহ চারটি ফ্লাইওভার আনুষ্ঠানিকভাবে সিডিএ থেকে বুঝে নেয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। কিন্তু যারা এসব বিলবোর্ড ব্যানার অপসারণ করার কথা তাদের স্থাপনাতেই ঝুলছে সিডিএর ব্যানার। বিষয়টি সিটি করপোররেশন জানেও না।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সাময়িকভাবে আমাদের নির্মাণাধীন ফ্ল্যাট বিক্রির জন্য এসব ব্যানার টাঙিয়েছি। আগামী ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত এসব ব্যানার ফ্লাইওভারের পথনির্দেশিকা ঢাকা অবস্থায় রাখার পর খুলে ফেলা হবে।’

অন্যদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহমেদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ফ্লাইওভারের উঠার পথে এভাবে পথ নির্দেশিকা ঢেকে কোনও ব্যানার টাঙানো যায় না। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে দেখছি। সত্যতা পেলে তা অপসারণসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জানা যায়, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নির্মাণাধীন ১৬৫টি ফ্ল্যাটের বর্গফুটপ্রতি ৫ হাজার টাকা দাম রেখেছে সংস্থাটি। নগরীর ২ নম্বর গেটের বেবি সুপার মার্কেট এলাকায় ‘সিডিএ স্কয়ার’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। প্রকল্পে ১৮ তলার দুটি ও ১৯ তলার একটি ভবন নির্মাণাধীন। এসব ভবনে ১ হাজার ৫০০, ১ হাজার ৮০০ এবং ২ হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট আছে। আগ্রহী ক্রেতাদের কাছে গত ২৮ নভেম্বর থেকে ফরম বিক্রি শুরু করেছে সিডিএ। চলবে আগামী ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত।

অন্যদিকে ১ ডিসেম্বর নগরীর টাইগারপাসে চসিকের সম্মেলন কক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে মুরাদপুর ফ্লাইওভারসহ চারটি স্থাপনা হস্তান্তর করা হয় সিডিএর পক্ষ থেকে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরশেনের (চসিক) পক্ষে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফ্লাইওভার চারটি বুঝে নেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। ফ্লাইওভারগুলো হচ্ছে মুরাদপুর আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার, বহদ্দারহাট এমএ মান্নান ফ্লাইওভার, কদমতলী ও দেওয়ানহাট ফ্লাইওভার।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর নগরীর মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত চার লেনের আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালের মার্চে। ২০১৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর ফ্লাইওভারটির মূল অংশ যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। শুরুতে পাঁচ দশমিক দুই কিলোমিটার দীর্ঘ এ ফ্লাইওভারের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৪৬২ কোটি টাকা। পরে ফ্লাইওভারের দুই নম্বর গেইট এলাকায় নতুন একটি লুপ এবং জিইসি মোড় এলাকায় আরও একটি র‌্যাম্প যোগ হয়ে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬৯৮ কোটি টাকা। গত বছরের ১ জুন যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় এ ফ্লাইওভারের এক হাজার ৩০০ মিটার দীর্ঘ লুপটিও।

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!