সিটি করপোরেশনের ‘দোহাই’, পতেঙ্গায় ঘরে ঘরে চাঁদাবাজি

চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা থানার বিজয়নগর এলাকা। এই এলাকায় প্রায় ৫০ হাজার লোকের বসবাস। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদন ছাড়াই দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এই এলাকার অলি-গলিতে ‘ডোর টু ডোর’ ময়লা-আর্বজনা পরিস্কার করার নামে ‘চাঁদা’ আদায় করে আসছে স্থানীয় একটি চক্র।

এলাকার প্রতিটি বাসা-বাড়ি থেকে আদায় করা হচ্ছে ১০০ টাকা করে চাঁদা। স্থানীয় বাসিন্দা ও ভাড়াটিয়া মিলে প্রায় আড়াই হাজার পরিবার থেকে প্রতিমাসে আড়াই লাখ টাকার ওপরে চাঁদা তোলে চক্রটি। অথচ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ময়লা পরিষ্কার করার লোক থাকলেও তারা এই চক্রের দাপটে এলাকায় ঢুকতে পারে না।

অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের সুপারভাইজারের সঙ্গে যোগসাজশ করে কর্পোরেশনের কথিত অনুমোদন দিয়ে চলছে এই চাঁদাবাজি। এই চক্রের মূলহোতা হলেন স্থানীয় যুবক নিজাম উদ্দিনসহ আরও কয়েকজন। তাদের নেতৃত্বে কয়েক লোক দিয়ে এলাকায় ‘ডোর টু ডোর’ ময়লা পরিস্কার করা হয়। আর মাস শেষে প্রতিটি পরিবারের কাছ থেকে অনেকটা বাধ্য করেই আদায় করা হয় টাকা। সিটি কর্পোরেশনের দোহাই দিয়ে চাঁদাবাজি করলেও কর্তৃপক্ষ এখনও নিরব।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিজয়নগর এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের লোকজন নালা-নর্দমা পরিষ্কার করতে আসে না। কর্পোরেশনের লোকজনের সঙ্গে যোগসাজশে নিজাম ও তার লোকজন ময়লা পরিষ্কারের নামে চাঁদা আদায় করে আসছে। কোন বিল্ডিংয়ে কত পরিবার থাকে সেই হিসেবে চাঁদা তোলা হয়। নিজাম নিজে গিয়ে পরিবার প্রতি ১০০ টাকা করে নেয়।

ময়লা পরিষ্কারের নামে টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের সুপারভাইজার খোরশেদুল আলম। তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি দায়িত্বরত অবস্থায় হচ্ছে তা নয়, আগের সুপারভাইজারের সময়ও এই রকম হয়েছে। আমি এই বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষেও জানিয়েছি।’

তবে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহীদুল আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিজয়নগর এলাকার সুপারভাইজার খোরশেদুল আলম আমায় কিছু জানাননি। ওই এলাকায় ময়লা পরিষ্কার করার জন্য কাউকে আলাদাভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। আমি পরিচ্ছন্নতা বিভাগের উপপ্রধান কর্মকর্তা মোরশেদকে বিষয়টি এখনই বলছি।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘২০১১ সাল থেকে এই কাজ করছি। এলাকার লোকজন ও স্থানীয় কাউন্সিলর বিষয়টি জানেন। ময়লা পরিষ্কার করে যার কাছ থেকে যা পাচ্ছি তাই নিচ্ছি। এই টাকা সংগঠনের লোকজনের মাঝে বিতরণ করছি। আপনি (প্রতিবেদক) চাইলে আপনাকে টাকা ওঠানোর হিসাব দেখাতে পারব।’

৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছালেহ আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগে যথেষ্ট লোকবল রয়েছে। বিজয়নগরে স্থানীয় একটি চক্র সংগঠনের নামে ব্যবসা করছে। তারা সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের লোকজনকে সেখানে ঢুকতে দিচ্ছে না।’

এ বিষয়ে জানতে সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতার বিভাগের উপপ্রধান কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরীকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করা হলে সংযোগ পাওয়া যায়নি।

এএম/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!