সিটিসেল গ্রাহকদের অপারেটর বদলের বিজ্ঞপ্তি হাইকোর্টে স্থগিত

ঢাকা প্রতিদিন :
দেনার দায়ে বন্ধের কাছাকাছি চলে যাওয়া বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর সিটিসেল গ্রাহকদের অপারেটর বদলের পরামর্শ দিয়ে বিটিআরসির দুটি বিজ্ঞপ্তি স্থগিত করেছে হাইকোর্ট।
সিটিসেলের করা এক রিট আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেয়।
আদালতে সিটিসেলের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান। বিটিআরসির পক্ষে ছিলেন খোন্দকার রেজা-ই রাকিব, সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার সৈয়দ মাহসিব হোসেন।
citycell_32553
মোস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, আদালত বিজ্ঞপ্তি দুটি স্থগিত করে রুল দিয়েছে। ওই দুই বিজ্ঞপ্তি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আদালতে তারা দুটি যুক্তি তুলে ধরেছেন। টেলিকমিউনিকেশন আইন অনুসারে বিটিআরসি এ ধরনের গণবিজ্ঞপ্তি দিতে পারে না। তাদের সে এখতিয়ার নেই। আমরা রিটের যুক্তিতে বলেছি, আমাদের লাইসেন্স এখনো আছে। লাইসেন্স নিয়ে কার্যক্রম চালানো একটি মোবাইল ফোন অপারেটরের গ্রাহকদের অপারেটর পরিবর্তনের কথা বলে তারা কীভাবে এ ধরনের বিজ্ঞপ্তি দিতে পারে?
গত ৩১ জুলাই সিটিসেলের গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) দুই সপ্তাহের মধ্যে বিকল্প সেবা গ্রহণের জন্য গ্রাহকদের আহ্বান জানায়। পরবর্তীতে ১৭ আগস্ট আরো দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে আরেকটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে।
বিটিআরসির লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগের পরিচালক (লাইসেন্সিং) এম.এ. তালেব হোসেন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্ণিত অবস্থায় পিবিটিএল (সিটিসেল) এর গ্রাহকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিকল্প সেবা/ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আগামী ১৬ আগস্ট পর্যন্ত সময় দেয়া হলো।
১৯৮৯ সালে বিটিআরসি থেকে লাইসেন্স পায় সিটিসেল। বর্তমানে ৩৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক বিএনপি নেতা সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খানের মালিকানাধীন প্যাসিফিক মোটরস।
সিঙ্গাপুরের সিংটেল এশিয়া প্যাসিফিক ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের হাতে রয়েছে ৪৫ শতাংশ। এ ছাড়া ১৭ দশমিক ৫১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে ফারইস্ট টেলিকম লিমিটেডের হাতে।
এদিকে সরকারের রাজস্ব, টেলিযোগাযোগ সেক্টরের শৃংখলা বজায় রাখা ও জনস্বার্থ বিবেচনায় সিটিসেলের গ্রাহকসহ সংশ্লিষ্ট সবার এ অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।
সব থেকে পুরনো এবং দেশের একমাত্র সিডিএমএ মোবাইল ফোন অপারেটরটি প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড নামে ব্যবসা করে আসছে।
বিটিআরসির সবশেষ জুন মাসের হিসেবে দেশে ছয়টি মোবাইল ফোন অপারেটরের মোট গ্রাহক সংখ্যা ১৩ কোটি ১৩ লাখ ৭৬ হাজার, যার মধ্যে সিটিসেলের গ্রাহক মাত্র ৭ লাখ ২ হাজার।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন থেকে ২০১২ সালের ৭ আগস্ট পিবিটিএলের (সিটিসেলে) সেল্যুলার মোবাইল ফোন অপারেটর লাইসেন্সসহ ৮ দশমিক ৮২ মেগাহার্জ তরঙ্গ নবায়ন করা হয়। উক্ত লাইসেন্সের শর্ত অনুযায়ী সিটিসেল তরঙ্গ নবায়ন ফির দ্বিতীয় ও তৃতীয় কিস্তির অর্থ নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও অদ্যবধি পরিশোধ করেনি।
বিটিআরসি জানায়, সর্বশেষ সিটিসেলের কাছে টুজি মোবাইল অপারেটর লাইসেন্স সংশ্লিষ্ট তরঙ্গ নবায়ন ফির দ্বিতীয় ও তৃতীয় কিস্তি বাবদ ২২৯ কোটি টাকা, বার্ষিক লাইসেন্স ফি বাবদ ১০ কোটি টাকা, বার্ষিক স্পেকট্রাম ফি (২০১৩-২০১৬ সাল) বাবদ প্রায় ২৭ কোটি ১৪ লাখ ৩৭ হাজার ১৩৩ টাকা, রেভিনিউ শেয়ারিং (২০১৪-২০১৬ সাল) বাবদ আনুমানিক ২৭ কোটি ৪৪ লাখ ৬২ হাজার ৭২০ টাকা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল (২০১১-২০১৬ সাল) বাবদ প্রায় ৮ কোটি ৯২ লাখ ৩৭ হাজার ৭৪২ টাকা এবং প্রযোজ্য ভ্যাট বাবদ প্রায় ৩৯ দশমিক ৯২ কোটি টাকা ও বিলম্ব ফি বাবদ প্রায় ১৩৫ দশমিক ০৭ কোটি টাকা অর্থাৎ সর্বমোট প্রায় ৪৭৭ দশমিক ৫১ কোটি টাকা সরকারের রাজস্ব বকেয়া রয়েছে।
ঢাকা প্রতিদিন : এ বি নি :
এ এস / জি এম এম / আর এস পি :::

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!