সিজেকেএসে করুণার পদ ছেড়ে ভোটের দাবি জোরালো হচ্ছে

সহ-সভাপতির খোলা চিঠিতে ক্ষোভ

চার বছর পর পর অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) নির্বাচন। কিন্তু গতবার আ জ ম নাছির উদ্দিন সমঝোতার মাধ্যমে কমিটি গঠন করায় নির্বাচন হয়নি। সব ঠিকঠাক থাকলে আট বছর পর আগামী ১৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে সিজেকেএস কার্যকরী কমিটির নির্বাচন— সবার প্রত্যাশা ছিল এমনই। সংস্থার গত দুবারের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনও ঘোষণা দিয়েছিলেন এবার সমঝোতা নয়, নির্বাচনই হবে। কিন্তু ৩ ডিসেম্বর মেয়রের সিটি কর্পোরেশন অফিসে সিজেকেএস নির্বাচন নিয়ে বৈঠকের পর নিশ্চিত হয়ে যায়, এবারও সমঝোতার কমিটিই হচ্ছে। এ নিয়ে বইছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।

এরই মধ্যে সিজেকেএসের বর্তমান সহ-সভাপতি হাফিজুর রহমান খোলা চিঠি দিয়ে জানালেন, আ জ ম নাছির উদ্দীন কর্তৃক যারা মনোনীত হয়েছেন, তাদেরকে করুণাভরা এই অসম্মানের পদ ছেড়ে দিয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে কাউন্সিলরদের রায়ে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে আসা উচিত।

খোলা চিঠিতে সিজেকেএস সহ-সভাপতি লিখেছেন, ‘২ ডিসেম্বর বিকেলে সিজেকেএসে ফুটবল সম্পাদকের কক্ষে নির্বাচনের মনোনয়ন নেওয়া বিভিন্ন প্রার্থীর সঙ্গে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনকে দেখতে পাই। এ সময় ওই কক্ষে উপস্থিত বেশ কয়েকজন আমাকে জানান, সিজেকেএস নির্বাচনের জন্য যারা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন, তাদের সবাইকে মনোনয়নপত্রসহ ৩ ডিসেম্বর বিকাল ৫টায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কনফারেন্স রুমে উপস্থিত থাকতে হবে।’

মনোনয়নপত্র নিয়ে নজিরবিহীন ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সিজেকেএসের বর্তমান সহ-সভাপতি হাফিজুর রহমান বলেন, ‘৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কনফারেন্স রুমে মনোনয়নপত্রসহ সকলে উপস্থিত হন। সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হওয়া ওই সভা রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলে। মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারী সকলেই ওই সভায় বক্তব্য রাখেন। প্রায় সকলের নিজ নিজ বক্তব্যের পুরো অংশই ছিল আ জ ম নাছির উদ্দীনের গুণকীর্তি। কেউ কেউ তাকে চাচা (আঙ্কেল), বাবার মত, স্টেডিয়ামের রূপকার, অবিসংবাদিত নেতা, স্টেডিয়ামে যা কিছু হয়েছে তা তিনিই করেছেন, আগামীতে তিনি না হলে এ স্টেডিয়াম চলবে না, আগামী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তাকে আবার দেখতে চাই ইত্যাদিসহ আরো অনেক বিশেষণে বিশেষায়িত করে বক্তব্য দেন। প্রত্যেকে তাদের মনোনয়নপত্র স্বেচ্ছায় ‘আ জ ম নাছির উদ্দীন যা করবেন, পদে রাখলে বা না রাখলেও তাদের কোন আপত্তি থাকবে না’— ঘোষণা দিয়ে মনোনয়নপত্রগুলো মেয়রকে জমা দেন।’

সিজেকেএসে করুণার পদ ছেড়ে ভোটের দাবি জোরালো হচ্ছে 1
সিজেকেএস নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম কিনছেন কাউন্সিলর মোহাম্মদ শাহজাহান। এই সময় সংস্থার বেশ কজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

হাফিজুর রহমান বলেন, ‘সভার প্রায় শেষ পর্যায়ে আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুরোধে আমি বক্তব্য রাখি। সেখানে আমি বলি, সিজেকেএসের গত নির্বাচনে কেউ মনোনয়নপত্র চোখেও দেখেননি। এবার মনোনয়নপত্র কেনার সুযোগ পেয়েছেন। গতবার চট্টগ্রামের পিটস্টপ রেস্টুরেন্টে ৯৭ জন কাউন্সিলর আ জ ম নাছির উদ্দীনকে বিনা নির্বাচনে কমিটি গঠন করার জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সে সভায় আমি বলেছিলাম আ জ ম নাছির উদ্দীন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন এবং বাকি সব পদে নির্বাচন হোক। কিন্তু ওই সভায় আমার কথা গৃহীত হয়নি। পরবর্তীতে এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। তখন আমি বলি, এবারও যদি সিলেকশন করা হয় গতবারের মতো আবারও আলোচনা সমালোচনা, ব্যক্তি আক্রমণ ইত্যাদি শুরু হবে। তাই আপনাদের ফরম আপনারা নিয়ে যান এবং পছন্দসই পদে নির্বাচন করুন। এ কথাটি আমি একাধিকবার পুনরাবৃত্তি করলে অনেককে বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখা যায়।’

তিনি বলেন, ‘ওই সভায় সর্বশেষ বক্তা হিসেবে আ জ ম নাছির উদ্দীন তার বক্তব্যের শুরুতে সবাইকে যার যার ফরম ফিরিয়ে নিয়ে যার যার পছন্দ অনুযায়ী পদে নির্বাচন করার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু উপস্থিত সকলেই তাকে সর্বসম্মতিক্রমে দায়িত্ব দিয়ে তিনি যা করবেন তা বিনা শর্তে মেনে নেওয়ার অঙ্গীকার করেন। আমি সহ-সভাপতি পদে না থেকে নির্বাহী সদস্য হিসেবে থাকতে চাইলে সভায় উপস্থিত সকলেই তাতে অসম্মতি জানান। মেয়র সঙ্গে সঙ্গে আমার তিনটি ফরমের মধ্যে সদস্য পদের ফরমটি সবার সামনে ছিঁড়ে ফেলেন। এরপর সভার সিদ্ধান্তে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পদে ২২টি মনোনয়নপত্র পূরণ করে পে-অর্ডারসহ নির্বাচন কমিশনারের কাছে জমা দেওয়া হয়। এভাবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ঘটনা জানাজানি হলে গতবারের মতো এবারও আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। চলছে ব্যক্তি আক্রমণও।’

সিজেকেএস নির্বাচন নিয়ে বর্তমানে যে আলোচনা-সমালোচনা চলছে তা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সিজেকেএসের সহ-সভাপতি প্রস্তাব হলো— ‘যেসব মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো সোমবার (৯ ডিসেম্বর) বিকাল ৫টার মধ্যে প্রত্যাহার অথবা ওই তারিখের পর সবার পদত্যাগ করা উচিত।’

এ বিষয়ে সিটি মেয়রের হস্তক্ষেপ কামনা করে তিনি বলেন, ‘আমরা কেউ ভোটে নির্বাচিত হইনি। আ জ ম নাছির উদ্দীনের করুণায় মনোনীত হয়েছি। এ ব্যাপারে তার সিদ্ধান্তে যখন আমরা মনোনীত হয়েছি, তার নির্দেশেই সকলকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ও পদত্যাগ করা উচিত। এ প্রক্রিয়ায় সকল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার হয়ে গেলে (দুই একটি প্রত্যাহার না হলেও) নির্বাচন কমিশনের পক্ষে পুনরায় তফসিল ঘোষণা করা সহজ হবে। নতুন তফসিল অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে কারো মনে আর দুঃখ বা ক্ষোভ থাকবে না। তখন যার যার পছন্দ অনুযায়ী পদে নির্বাচন করতে পারবেন। যাতে বিতর্কের উর্ধ্বে থেকে সিজেকেএসকে পরিচালনা করা সহায়ক হবে। আমি এ কাজের সহায়ক হিসেবে আমার সহ-সভাপতি পদে দাখিলকৃত মনোনয়নপত্রটি প্রত্যাহার করে নিয়েছি।’

মেয়রের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনার মনোনীত ২২ জন প্রার্থীর মধ্যে কমপক্ষে ২০ জন বিজয়ী হবেন। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর আপনার মনোনীতরাই (কমপক্ষে ২০ জন) বিজয়ী হবেন। তাই তাদেরকে আপনি পদত্যাগের নির্দেশ দিলে নতুন করে নির্বাচন হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!