সিজেকেএসে আবার সমঝোতার কমিটি, আবারও আ জ ম নাছির?

নির্বাচনের হাওয়া নিমেষেই উধাও

এখন থেকে ২০ বছর আগে— সেই ১৯৯৯ সালে জৌলুসপূর্ণ নির্বাচনের আনন্দঘন মুহূর্তের সাক্ষী ছিল চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস)। সেই ধারা বজায় ছিল আরও চার মৌসুমে। ২০০৩, ২০০৭ ও ২০১১ সালেও নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত হয়েছিল সিজেকেএসের কার্যনির্বাহী কমিটি। এরপরই ঘটে ছন্দপতন। ২০১৫ সালে কমিটি করা হয় সমঝোতার মাধ্যমে। সেই থেকে নির্বাচন আর দেখেনি সিজেকেএস।

কাউন্সিলররা দীর্ঘ আট বছর নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী প্রতিনিধি বাছাই করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত থেকে গেছে। সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন এবারে (২০১৯ সালের নির্বাচন) বেশ ক’বার ঘোষণা দেন এবার কোন সমঝোতা নয়, নির্বাচনই হবে। কিন্তু মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) মেয়রের সিটি কর্পোরেশন অফিসে সিজেকেএস নির্বাচন নিয়ে বৈঠকের পর অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে এবারও সমঝোতার কমিটি গঠনের দিকেই হাঁটছেন আ জ ম নাছির।

এর আগে ২০১৫ সালে সমঝোতা কমিটি গঠনের পর যারা বাদ পড়েছেন তারা প্রায় স্টেডিয়ামে আসাই ছেড়ে দেন। সাব-কমিটিগুলো গঠনের পর দেখা যায় বিনাভোটে নির্বাচিত এসব কর্মকর্তারা একেকজন ৩-৪টি পর্যন্ত কমিটির চেয়ারম্যান বা সম্পাদক হয়ে গেছেন। এতে স্টেডিয়ামে আনাগোনা কমে যায় আরও অনেক সংগঠকের। পরে অবশ্য দু একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বিষয়টি সাধারণ সম্পাদকের নজরে আনলে তিনি কমিটিগুলো পুনর্গঠনের নির্দেশ দেন এবং তা বাস্তবায়িত হয়।

এরপরও সুষ্ঠুভাবে সিজেকেএস পরিচালিত হয়েছে সেটা বলা যাবে না। কারণ সিটি মেয়র যতই আন্তরিকতা দেখান না কেন, কাউন্সিলরদের ম্যান্ডেটবিহীন চেয়ার পাওয়া কর্মকর্তারা গণতন্ত্রের চর্চা না করে অধিকাংশই স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বৈরাচারী মনোভাব দেখানোয় ক্রীড়ায় আসেনি কোন সাফল্য।

সিজেকেএস নির্বাচন নিয়ে সমঝোতার বৈঠক চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মিলনায়তনে
সিজেকেএস নির্বাচন নিয়ে সমঝোতার বৈঠক চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মিলনায়তনে

গতবার আর নির্বাচন করবেন না— একথা বলার পরও অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করা আর কাউন্সিলরদের চাপে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেন আ জ ম নাছির। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। সিজেকেএস নির্বাচন করার ইচ্ছা না থাকলেও কাউন্সিলরদের অনুরোধে তৃতীয়বারের মত সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্য সম্মত হন আ জ ম নাছির উদ্দীন।

নির্বাচনী তফশিল ঘোষণার আগে থেকে তিনি ঘোষণা দেন— ‘এবারে ওপেন করে দিলাম, সবাইকে সরাসরি নির্বাচন করে জিতে কমিটিতে আসতে হবে।’ মেয়রের এই এক ঘোষণায় দীর্ঘ ৮ বছর পর নির্বাচনের হাওয়ায় সরগরম হয়ে উঠে এমএ আজিজ স্টেডিয়াম চত্বর। সেই আনন্দ ফিকে হতেও সময় লাগেনি। নানা কাজে বিতর্কিত একটি পক্ষ নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া কঠিন হবে ভেবে আবারও সিলেকশনের অপতৎপরতা চালাতে থাকে শুরু থেকেই।

মেয়র ঠিকই বুঝেছেন, বেশিরভাগ কাউন্সিলর চান নির্বাচন হোক। আর যারা গতবার এবং এবার কাউন্সিলর হয়েছেন তাদের ভোটাধিকার হরণ করার অধিকার কি কারও আছে? হাতেগোনা কয়েকজন জনবিচ্ছিন্ন, সুবিধাভোগী, নামধারী সংগঠকের পাল্লায় পড়ে মেয়র কি বিতর্কিত হতে চাইবেন?

গুটিকয়েক মতলববাজ কর্মকর্তা ফন্দিফিকির আর অন্ধকার পথে চেয়ারে বসার অপতৎপরতা চালালেও সিজেকেএস কার্যনির্বাহী কমিটির আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনে। মোট ৯০টি মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে— যা সিজেকেএস নির্বাচনের ইতিহাসে একটি রেকর্ড।

উল্লেখ্য, গতবার ছাড়া আগে অনেকবার সিজেকেএস নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু এত ব্যাপক সংখ্যায় মনোনয়নপত্র কেনার হিড়িক আগে কখনো দেখা যায়নি। একজন একাধিক পদেও ফরম কিনেছেন। বুধবার ফরম জমা দেওয়ার পরই বোঝা যাবে কারা কারা নির্বাচন করছেন। স্টেডিয়াম পাড়ায় জোর গুঞ্জন চলছে সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের গ্রিন সিগন্যাল ছাড়া কেউ প্রার্থী নাও হতে পারেন। তবে একমাত্র প্রার্থী হিসেবে মঙ্গলবার সদস্যপদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন উল্লাস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও সিজেকেএস রাগবি সম্পাদক প্রবীণ কুমার ঘোষ।

সিজেকেএস নির্বাচনকে স্বচ্ছ ও বিতর্কহীন করার লক্ষ্যে আ জ ম নাছির উদ্দীন মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নির্বাচনে আগ্রহী সবাইকে নিয়ে বসেন এবং তাদের কথা শোনেন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কনফারেন্স মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত রুদ্ধদ্বার সভায় জনাচল্লিশেক আগ্রহী প্রার্থী বক্তব্য রাখেন। বক্তারা প্রায় সবাই সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে সিজেকেএস কার্যনির্বাহী কমিটি গঠনের পক্ষে মত দেন। মেয়রও কাউন্সিলরদের সেন্টিমেন্টের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে সিজেকেএসের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করার লক্ষ্যে সবাইকে সুষ্ঠু নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের আহবান জানান।

সাধারণ সম্পাদক পদে আ জ ম নাছির উদ্দীনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের ব্যাপারে সভায় প্রস্তাব উঠলে সবাই তা সমর্থন করেন। অর্থাৎ সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তৃতীয়বারের মত দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন সিটি আ জ ম নাছির। তবে দলাদলি-গ্রুপিং না হওয়ার জন্য অন্যান্য পদেও নির্বাচন না করে সমঝোতার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য প্যানেল তৈরি করে জমা দেওয়ার জন্য অভিভাবক হিসেবে আবারও আ জ ম নাছির উদ্দীনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আগ্রহী প্রার্থীরা প্রায় সবাই মনোনয়নপত্র তার হাতে জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, বুধবার (৪ ডিসেম্বর) বেলা ৩টার মধ্যে তিনি একটি কমিটি দাঁড় করাবেন এবং মনোনীতদের
যথাসময়ে ডেকে পে অর্ডার নিয়ে ফরম জমা দেবেন। সে হিসেবে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে স্পষ্ট হয়ে গেল, চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থায় (সিজেকেএস) এবারও নির্বাচন হচ্ছে না, আবারও কমিটি গঠন হচ্ছে সমঝোতার মাধ্যমে। বিকেল ৫টার মধ্যেই নিশ্চিত হয়ে যাবে কারা এবারের সিজেকেএস কার্যনির্বাহী কমিটিতে স্থান পাচ্ছেন।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!