সিজেকেএসের দুই পদে নির্বাচনকে ঘিরে কাউন্সিলরদের মিলনমেলা
নির্বাচনকে নির্বাসনে পাঠানোর দায়ভার নিতে রাজি নন কেউ
চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) কার্যনির্বাহী গঠন হওয়ার কথা নির্বাচনের মাধ্যমে। নির্বাচিতরা চার বছর জেলা ক্রীড়া সংস্থার দায়িত্ব পালন করার পর নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে নতুনভাবে নির্বাচিতদের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ প্রণীত স্থানীয় ক্রীড়া সংস্থার গঠনতন্ত্রে সেভাবেই উল্লেখ আছে বিষয়টি। তাতে করে কাউন্সিলররা প্রতি চার বছরে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে দায়িত্ব দেয়ার ও পরিবর্তনের সুযোগ পান। কিন্তু চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা হাঁটছে তার উল্টো পথে।
এখন থেকে ২০ বছর আগে— সেই ১৯৯৯ সালে জৌলুসপূর্ণ নির্বাচনের আনন্দঘন মুহূর্তের সাক্ষী ছিল চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস)। সেই ধারা বজায় ছিল আরও চার মৌসুমে। ২০০৩, ২০০৭ ও ২০১১ সালেও নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত হয়েছিল সিজেকেএসের কার্যনির্বাহী কমিটি। এরপরই ঘটে ছন্দপতন। ২০১৫ সালে কমিটি করা হয় সমঝোতার মাধ্যমে। সেই থেকে নির্বাচন আর দেখেনি সিজেকেএস। নির্বাচনকে বারবার নির্বাসনে পাঠানোর দায়ভার নিতে রাজি নন কেউই। আ জ ম নাছির বারবার বলে এসেছিলেন তিনি চান নির্বাচনের মাধ্যমে সবাই আসুক। কিন্তু দায়িত্ব নিতে আগ্রহীরা হাঁটেননি সেই পথে। তারা আবারও আ জ ম নাছিরের ঘাড়ে ভর দিয়ে পার হয়ে গেলেন নির্বাচনী তরী। একমাত্র আত্মগ্লানি থেকে স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ানো সহসভাপতি হাফিজুর রহমান ছাড়া। অবশ্য কোষাধ্যক্ষ এবং নির্বাহী সদস্যরা বলতেই পারেন তারা নির্বাচন জিতে এসেছেন।
কাউন্সিলররা দীর্ঘ আট বছর নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী প্রতিনিধি বাছাই করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত থেকে গেছে। সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন এবারে (২০১৯ সালের নির্বাচন) বেশ ক’বার ঘোষণা দেন এবার কোন সমঝোতা নয়, নির্বাচনই হবে। কিন্তু গত ৩ ডিসেম্বর মেয়রের সিটি কর্পোরেশন অফিসে সিজেকেএস নির্বাচন নিয়ে বৈঠকের পর সেদিনই অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে এবারও সমঝোতার কমিটি গঠনের দিকেই হাঁটছেন আ জ ম নাছির। বাস্তবে হয়েছেও তাই। তবে পুরোটা নয়। রাশেদুল আলম কোষাধ্যক্ষ পদে প্রার্থী হয়ে বসলেন। ফলে এই পদে নির্বাচন হবে সেটা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল ৯ ডিসেম্বরের পরেই। কিন্তু নির্বাহী সদস্য পদে মনোনয়ন জমা দেওয়া প্রবীন কুমার ঘোষ প্রার্থীতা প্রত্যাহারের পরদিন এসে ঘটা করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও পরের দিন থেকে আবারও ভোট চাইতে শুরু করেন কাউন্সিলরদের কাছে। ফলে কোষাধ্যক্ষের একটি ও নির্বাহী সদস্যের ১৩ পদের জন্য আবার সরব হয়ে ওঠে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গন।
দুটি পদে নির্বাচনে ভোট দিয়ে হলেও দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাবেন চট্টগ্রাম জেলা সংস্থার কাউন্সিলররা। তবে ভোটের আগেরদিন অর্থাৎ মঙ্গলবার থেকে স্টেডিয়ামপাড়ায় একটি প্রশ্ন সবার মুখে মুখে। মাত্র দুটি পদে ভোট দেয়ার জন্য কি আসবেন কাউন্সিলররা? ভোট হলেও দুটি পদেই বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের নেতৃত্বাধীন প্যানেল জয়লাভ করবে সেই ধারণা কাউন্সিলরদের মধ্যে। তবে সব সংশয় মিথ্যা প্রমাণ করে ঘড়ির কাঁটা আটটা হতে না হতেই এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে আসতে শুরু করেন কাউন্সিলররা। বেলা একটু বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে কাউন্সিলরদের সংখ্যা। বেলা এগারাটার দিকে এম এ আজিজ স্টেডিয়াম চত্বর পরিণত হয় কাউন্সিলরদের মিলনমেলায়। সবার মধ্যে উৎসব উৎসব ভাব। কারণ আট বছর পর অন্তত দুটি পদে হলেও ভোট দিতে পারছেন কাউন্সিলরা। ২০৭ জন কাউন্সিলরদের মধ্যে ১৭৮ জন এসেছেন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে।
নিকট অতীতে এতো বেশি সংখ্যক কাউন্সিলর ভোট দিতে আসেননি বলে জানান বেশ কৎজন সিনিয়র কাউন্সিলর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কাউন্সিলর সব পদে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করে বললেন, ’এভাবে আমাদের ভোটাধিকার গলাচিপে হত্যা করার অধিকার কারও নাই। সংস্থাতো চালাবেন তারা, অন্ততঃ আমাদেরকে ভোট দেয়ার সুযোগ দেয়া হতো। তাতে করে আমরা যোগ্যদের সংস্থার কার্যনির্বাহী কমিটিতে পাঠাতে পারতাম। অথচ, এখন এমন অনেক ব্যক্তি কমিটিতে এসেছেন যাদের কোন ক্রীড়া সংশ্লিষ্টতা নাই। তাদের দ্বারা ক্রীড়ার কোন উন্নতি হওয়া সম্ভব নয়।’
মাত্র দুটি পদে নির্বাচন উপলক্ষে যেভাবে স্টেডিয়াম এলাকা ভোট চেয়ে ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে তাতে করে সবকটি পদে নির্বাচন হলে নতুনভাবে জাগরিত হতো চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গন। তাতে কাউন্সিলরদের গুরুত্বটা আরেকটু বেশিই হতো।
এদিকে, বুধবারের নির্বাচনের আগে নির্বাহী সদস্য ও কোষাধ্যক্ষ এই দুটি পদ ছাড়া বাকি সব পদেই বিনা বাধায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন আ জ ম নাছির উদ্দীনের নেতৃত্বাধীন প্যানেলের প্রার্থীরা। যদিও আ জ ম নাছির উদ্দীনের প্যানেলের হয়ে মনোনয়ন জমা দেওয়া সহসভাপতি পদপ্রার্থী হাফিজুর রহমান তার মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ফলে সে পদটি খালি রয়েছে। আর সে পদে নির্বাচন কবে হবে বা আদৌ হবে কিনা তা পরিষ্কার হয়নি। এই পদটি ছাড়া বাকি তিনটি সহ সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন এডভোকেট শাহীন আফতাবুর রেজা চৌধুরী (পুনরায় নির্বাচিত), দিদারুল আলম চৌধুরী (নতুন নির্বাচিত) এবং এহেছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল (নতুন নির্বাচিত)। এদিকে এহেছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুলের বিপক্ষে কাউন্সিলর ও সহসভাপতি পদ বাতিল ঘোষণা চেয়ে লিখিত আবেদন করেছেন নির্বাহী সদস্য আবুল হাশেম। তিনি এহেছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুলের কাউন্সিলর মনোনয়ন গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
সাধারণ সম্পাদক পদে পুনরায় (পরপর তিনবার) নির্বাচিত হয়েছেন আ জ ম নাছির উদ্দীন। অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক পদেও পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম। যুগ্ম সম্পাদক পদে আমিনুল ইসলাম এবং মশিউর রহমান চৌধুরী। উপজেলা কোটায় প্রদীপ ভট্টাচার্য এবং হারুণ আল রশিদ। মহিলা কোটায় রেজিয়া বেগম ছবি এবং রেখা আলম চৌধুরী। বুধবারের ভোটের পর ১৬২ ভোট পেয়ে কেষাধ্যক্ষ পদে আবারও নির্বাচিত হয়েছেন শাহাবুদ্দিন জাহাঙ্গীর। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রাশেদুল আলম পেয়েছেন মাত্র ১৪ ভোট। নির্বাহী সদস্য পদে সৈয়দ আবুল বশর (১৬৮ ভোট), ওয়াহিদ দুলাল (১৬৬ ভোট), আবদুল হান্নান আকবর (১৬৪ ভোট), জি এম হাসান (১৬৪ ভোট), জহির আহমেদ চৌধুরী (১৬৩ ভোট), মোহাম্মদ শাহজাহান (১৫৯ ভোট), মোহাম্মদ ইউসুফ (১৬৮ ভোট), জমির উদ্দিন বুলু (১৫৮ ভোট), আবদুল বাসেত (১৫৫ ভোট), আবুল হাশেম (১৫৪ ভোট), হাসান মুরাদ বিপ্লব (১৪৮ ভোট), অহিদ সিরাজ চৌধুরী (১৪৫ ভোট) এবং নাসির মিয়া (১৪৪ ভোট) পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। আর এদের সবাইকে টেনশনে রাখা প্রার্থী প্রবীন কুমার ঘোষ পেয়েছেন ৩৮ জন কাউন্সিলরের ভোট।