চট্টগ্রামে পুলিশের অ্যাপ ফিরিয়ে দেবে গাড়িতে হারিয়ে যাওয়া জিনিস

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ট্রাফিক বিভাগের বিশেষ অ্যাপ ‘আমার গাড়ি নিরাপদ’ ব্যবহারে করে উপকৃত হচ্ছেন যাত্রীরা। এই অ্যাপসটির মাধ্যমে কোনো কিছু হারানো গেলে তা সিএমপির কাছে থাকা আ্যাপসটির ডাটা বেইজ থেকে সহজেই গাড়ির চালকের সাথে ভুক্তভোগী যাত্রীদের যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

তবে এই অ্যাপসটির সুফল পেতে হলে যাত্রীকে অবশ্যই সেই গাড়িটির নাম্বার বলতে হবে, সেজন্য যাত্রীদের গাড়িতে উঠার আগে সিএনজির নাম্বারটি বা সিএনজিতে থাকা কিউআরকোড স্ক্যান করারও অনুরোধ জানানো হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।

সোমবার (৩১ জানুয়ারি) এক সিএনজি যাত্রীর হারানো গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ফিরিয়ে দেওয়া হয় এই অ্যাপসটির মাধ্যমে।

২৭ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৯টায় নগরীর গরিবুল্লাহ শাহ (র) মাজারের সামনে থেকে সিএনজি অটোরিক্সায় উঠেন মো. সাদিক নামে এক যাত্রী। রাত ১০টার দিকে তিনি খুলশী জালালাবাদ টাওয়ারে নিজ বাসার সামনে নেমে যান। এসময় ভুলে তিনি গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র গাড়িতে ফেলে যান।

যেখানে পাসপোর্টের কপি, করোনা টিকার সনদ ও আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজ ছিল। পরে তিনি বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজ থেকে গাড়ির নম্বর শনাক্ত করেন। বিষয়টি জিইসির মোড়ে কর্তব্যরত সার্জেন্টকে জানালে তিনি আমার গাড়ি নিরাপদ অ্যাপস ব্যবহার করে গাড়ির চালকের সাথে যোগাযোগ করে কাগজপত্র উদ্ধার করেন। পরে সোমবার (৩১ জানুয়ারি) সেসব কাগজপত্র যাত্রী সাদিক রহমানকে হস্তান্তর করা হয়।

অ্যাপসটির বিষয়ে ট্রাফিক বন্দর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার শাকিলা সোলতানা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের এই উদ্যোগের মাধ্যমে যাত্রীরা সুফল পাচ্ছেন সেটা জানতে পেরে ভালো লাগছে। তাই সকল সিএনজি চালক ও মালিকদের এই সেবা কার্যক্রমের আওতায় আসার আহ্বান জানান শাকিলা।

এই অ্যাপসটিতে যারা নিবন্ধন করেছেন সেসব গাড়ির চালক ও মালিকের সকল ধরনের তথ্য দেওয়া থাকে, তাই কোন ভুক্তভোগী যাত্রী যদি শুধুমাত্র গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নাম্বারটি বলতে পারেন তবে খুব অল্প সময়ের মধ্যর হারানো জিনিসপত্র ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে।

ইতিমধ্যে প্রায় ১৭ হাজারের মত সিএনজি এই অ্যাপসে নিবন্ধিত হয়েছে এবং এটা চলমান একটা প্রক্রিয়া। দ্রুত সব সিএনজিকে এই সেবার আওতায় আনা হবে বলে জানান ট্রাফিক বিভাগের এই কর্মকর্তা।

এর আগে চলতি মাসের ২৫ তারিখও একইভাবে ‘আমার গাড়ি নিরাপদ’ অ্যাপসের মাধ্যমে হারানো মানিব্যাগ ফিরে পেয়ে উপকৃত হন চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ী।

মনির নামের ঐ ব্যবসায়ী গত মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) তিনি সিএনজি অটোরিকশায় গন্তব্যে যাওয়ার পথে মানিব্যাগটি ফেলে যান। পরে অ্যাপসের মাধ্যমে ওই অটোরিকশাটি শনাক্ত করা হয়।

মানিব্যাগ ফিরে পাওয়ার পর এই ব্যবসায়ী গণমাধ্যমকে জানান, মঙ্গলবার সকালে সুগন্ধার বাসা থেকে সিএনজি অটোরিকশায় ফতেয়াবাদ যাই। গন্তব্যে পৌঁছানোর কিছু সময় পর পকেটে হাত দিয়ে দেখি আমার মানিব্যাগ নেই। সাথে সাথে বিষয়টি আমার এক বন্ধুকে জানালে সে আমাকে যাত্রাস্থানের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অটোরিকশার নম্বর শনাক্ত করার কথা বলে।

পরে আমি নম্বর সংগ্রহ করে ট্রাফিক পুলিশের সাথে যোগাযোগ করি। ট্রাফিক পুলিশ ‘আমার গাড়ি নিরাপদ’ অ্যাপসের মাধ্যমে ওই চালকের তথ্য বের করে। চালককে ফোন করে তার অবস্থান নিশ্চিত করে তার সাথে দেখা করি। চালক আমাকে জানান, তিনি মানিব্যাগ নেননি। তার গাড়িতে অন্য যাত্রী উঠেছিল। সেই যাত্রীর সন্ধান পেতে খুলশী যাই।

ঘটনাটি আশপাশের মানুষকে জানালে তারা ওই যাত্রী সর্ম্পক তথ্য দেয়। পরে তাকেও শনাক্ত করা হয়। আমার মানিব্যাগে নগদ ১২ হাজার টাকা ও বিভিন্ন ব্যাংকের ৭টি ডেবিট এবং ক্রেডিট কার্ডসহ প্রয়োজনীয় কিছু ডকুমেন্ট ছিল। সবকিছু আমি অক্ষত অবস্থায় পেয়েছি।

ট্রাফিক বন্দর বিভাগে কর্মরত পুলিশ সার্জেন্ট মো. আশিকুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, চট্টগ্রামে প্রায় ১৭ হাজার সিএনজি অটোরিকশা ‘আমার গাড়ি নিরাপদ’ প্রকল্পে নিবন্ধনভুক্ত করি। এতে সকল চালক ও মালিকের তথ্য আপডেট করা রয়েছে। নিবন্ধিত গাড়িগুলোর মধ্যে কেউ কিছু হারিয়ে ফেললে বা কোনো চালক যাত্রীদের সাথে খারাপ আচরণ করলে আমরা এই অ্যাপসটির মাধ্যমে সেই গাড়ির চালকের সাথে খুব সহজেই যোগযোগ করতে পারি।

আমাদের কাছে এসে অটোরিকশার নম্বর দিলে আমরা সার্ভারের ডাটাবেইজে থাকা তথ্যের সাথে মিলিয়ে সত্যতা পেলে চালকের সাথে যোগাযোগ করি। এভাবেই খুব সহজে চালক ও যাত্রী উভয়ই এই অ্যাপসটি ব্যবহার করে উপকৃত হচ্ছ বলে জানান এই ট্রাফিক কর্মকর্তা।

বিএস/কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!