সিআরবি নিয়ে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ দ্বিধাবিভক্ত, মোশাররফে ভরসা আন্দোলনকারীদের

ভিডিওবার্তায় নিজের অবস্থান জানাবেন মোশাররফ

চট্টগ্রামের সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণকে ঘিরে তৈরি হওয়া আন্দোলনে স্পষ্টত মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের দুই ভাগের নেতাকর্মীরা। নগরের এই দীর্ঘদিনের দুই বলয়ের দ্বন্দ্বের পাশাপাশি দুই জেলা ইউনিটের নেতারাও হয়ে পড়েছেন বিভক্ত। এর মধ্যে হঠাৎ নগর ও জেলা ইউনিটের সিনিয়র নেতাদের আন্দোলনবিরোধী অবস্থানের কারণে কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেছেন আন্দোলনে জড়িত সংস্কৃতিকর্মীরাও। তবে খোরশেদ আলম সুজনের উদ্যোগে সিআরবিতে ‘পাখির বাসা বসানো’র প্রতীকী কর্মসূচি এবং সেখানে ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুলের দৃঢ় বক্তব্যের পর সেই চিত্র আবার খানিকটা বদলেও গেছে।

জানা গেছে, হঠাৎ করে সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনকে কারণ দেখিয়ে সিআরবিকেন্দ্রিক আন্দোলনের বিরুদ্ধে সিনিয়র নেতারা একের পর এক মুখ খুলতে শুরু করায় আন্দোলনের পক্ষের নেতারা শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রামের প্রবীণ নেতা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের দ্বারস্থ হয়েছেন। সূত্রে জানা গেছে, আগে থেকেই সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের বিরুদ্ধে থাকা এই নেতা এখনও সেই অবস্থানের কথাই জানিয়েছেন আন্দোলনে সম্পৃক্ত নেতাদের। বেশ কয়েক মাস ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা মিরসরাইয়ের এই সাংসদ আন্দোলনকারীদের অনুরোধে হাসপাতাল নির্মাণের বিরুদ্ধে একটি ভিডিও বার্তা দিতেও রাজি হয়েছেন— এমন খবরও মিলেছে একটি সূত্রে।

জানা গেছে, নগর আওয়ামী লীগের বিবাদমান দুই গ্রুপের মধ্যে শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নেওয়া প্রকল্পের বিষয়টিকে কারণ দেখিয়ে সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের বিরোধিতা থেকে বিরত রয়েছেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারীরা।

সিআরবি নিয়ে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ দ্বিধাবিভক্ত, মোশাররফে ভরসা আন্দোলনকারীদের 1

অন্যদিকে হাসপাতাল নির্মাণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সম্পৃক্ত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সকলেই শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী। যদিও শুরু থেকে এই বিষয়ে নীরব থাকার কৌশল নিয়েছেন উপমন্ত্রী। ফলে সিআরবির এই হাসপাতাল নির্মাণের পক্ষ-বিপক্ষের লড়াই অনেকটা নগর আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের পুরনো লড়াইয়ে রূপ নিয়েছে।

এদিকে হঠাৎ করে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমেদ আন্দোলনের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার পর নগর আওয়ামী লীগের সভায় অনির্ধারিত এক আলোচনায় নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হওয়ার পর কিছুটা বদলে যায় পরিস্থিতি। আন্দোলনে সম্পৃক্ত আওয়ামী লীগ নেতারাও অনেকটা হতাশ হয়ে যান এতে। সেদিন রাতেই নগর আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীতে থাকা এক নেতা সেই হতাশা চেপে না রেখে এক আলাপচারিতায় বলেন, ‘সারাজীবন রাজনীতি করেছি। মানুষের অধিকারের প্রশ্নের দলের নীতি-আদর্শের প্রশ্নে রাস্তায় আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। কিন্তু এই পর্যায়ে এসে শুনতে হচ্ছে আমরা কারও টাকায় আন্দোলন করছি। দলের বিরুদ্ধে যাচ্ছি।’

নেতাদের এই হতাশা অনেকটাই ছড়িয়েছিল আন্দোলনের কর্মীদের মধ্যেও। তবে একদিনের মাথায় ১ সেপ্টেম্বর বিকেলে সিআরবিতে সুজনের উদ্যোগে পাখির বাসা বসানোর প্রতীকী কার্যক্রমের পর কেউ কেউ আশায় বুক বাঁধতে শুরু করে। সেখানে নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল দৃঢ়তার সাথে বলেছেন, ‘খুব শীঘ্রই সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে না— এমন ঘোষণা দেবেন প্রধানমন্ত্রী।’ যদিও মাত্র দুদিন আগে চান্দগাঁও-বোয়ালখালীর সাংসদ মোছলেম উদ্দিন বলেছিলেন, ‘সিআরবিতেই হাসপাতাল হবে। আগে-পরে সবাইকে এর সাথে একাত্মতা ঘোষণা করতে দেখা যাবে।’

সিআরবি নিয়ে এই যখন আওয়ামী লীগের নেতাদের অবস্থান তখন অনেকটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিয়েছে চট্টগ্রামের মিরসরাই আসনের সাংসদ ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের অবস্থান। কারণ চট্টগ্রামের রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে বরাবরই প্রাধান্য পেয়েছে বর্ষীয়ান এই নেতার মতামত।

জানা গেছে, সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের বিরুদ্ধেই এখন পর্যন্ত অবস্থান রয়েছে দলের প্রবীণ এই নেতার। এর মধ্যে আন্দোলনে সম্পৃক্ত নেতাদের সাথে আলাপ আলোচনাও হয়েছে তার। গত বেশ কয়েক মাস ধরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিজের মেয়ের বাসায় অবস্থান করছেন তিনি। আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট নেতাদের অনুরোধ এবং চলমান পরিস্থিতিতে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে ভিডিও বার্তা দিতেও রাজি হয়েছেন তিনি— এমন তথ্য মিলেছে তার ঘনিষ্ঠ সূত্রে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের একান্ত সহকারী ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক নূর খান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘উনি শুরু থেকেই সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের বিরুদ্ধে। এখনও উনি কোনোভাবেই চান না সেখানে হাসপাতাল হোক। চট্টগ্রামের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় বরাবরই তিনি সোচ্চার ছিলেন। চট্টগ্রামের উন্নয়ন নিয়েও উনার দীর্ঘ পরিকল্পনা ও শ্রম রয়েছে।’

খুব শীঘ্রই ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন একটি ভিডিওবার্তার মাধ্যমে নিজের অবস্থান জানাবেন— একথা জানিয়ে নূর খান বলেন, ‘উনি একটা ভিডিও বার্তা দেবেন। আসলে তিনি উনার মেয়ের বাসায় আছেন। উনার সাথে এই বিষয়টি প্রস্তুত করতে সহযোগিতা করার মত কেউ নেই। তবে আমরা চেষ্টা করছি দুই-একদিনে এটা হয়ে যাবে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!