সিআরবিতে হাসপাতাল কেন সংবিধানের অসম্মান— ব্যাখ্যা দিলেন আওয়ামী লীগ নেতা

চট্টগ্রামের সিআরবি এলাকা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দ্বারা ‘হেরিটেজ’ হিসেবে ঘোষিত হওয়ার পর থেকে জায়গাটি বাংলাদেশের সংবিধানের আর্টিকেল ২৪ দ্বারা সংরক্ষিত হয়ে গেছে। ফলে সেখানে হাসপাতাল করা হলে বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানের অসম্মান করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল। তবে এক্ষেত্রে চট্টগ্রামের মানুষের জন্য হাসপাতালের প্রয়োজনের কথা তুলে ধরে বিকল্প হিসেবে পাহাড়তলী থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা জুড়ে রেলওয়ের দৃষ্টিনন্দন ও সুবিশাল স্থানের যেকোন জায়গায় এই হাসপাতালটি নির্মাণ করার প্রস্তাবও দেন প্রবীণ এই আইনজীবী।

চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল বলেন, সিআরবি এলাকাটি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গত ২০০৮ সালে কালচারাল অ্যান্ড হেরিটেজ জোন (সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য) হিসেবে সংরক্ষণের আইনে নিয়ে এটিকে ‘হেরিটেজ’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। তাই ওই এলাকায় কোন প্রকার স্থাপনা বা তার আকৃতি পরিবর্তন করা যাবে না। কারণ বাংলাদেশের সংবিধানে আর্টিকেল ২৪ দ্বারা সংরক্ষিত।

পবিত্র সংবিধানের ২৪ ধারার ব্যাখ্যা করে প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, এই ধারায় বলা হয়েছে— বিশেষ শৈল্পিক কিংবা ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন বা তাৎপর্যমন্ডিত স্মৃতি নিদর্শন বস্তু বা স্থানসমূহকে বিকৃতি, বিনাশ বা অপসারণ হতে রক্ষা করার জন্য রাষ্ট্র ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এক্ষেত্রে ‘হেরিটেজ’ ঘোষিত সিআরবিতে কোন স্থাপনা করলে সংবিধানের অসম্মান করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সুতরাং সিআরবিকে কোনভাবেই তার স্বরূপ থেকে পরিবর্তন করা যাবে না। যদি করে তাহলে বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধান অসম্মান করা হবে।’

শুধু বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানই নয় জাতিসংঘের আইন দ্বারাও সিআরবি জায়গাটি সংরক্ষিত জানিয়ে এডভোকেট ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল বলেন, ‘জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান এবং সংস্কৃতি বিভাগের উদ্যোগে ১৯৭২ সালের ১৬ নভেম্বর প্যারিসে অনুষ্ঠিত সাধারণ অধিবেশন-‘The Protection Of The World Cultural and Natural Heritage-রক্ষা আইন পাশ করা হয়। ‘ ন্যাচারেল হেরিটেজ’ এর যে সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে তাতেও সিআরবি সম্পূর্ণভাবে সংরক্ষিত।’

‘কাজেই সিআরবির আকার, প্রকৃতি নষ্ট করে কোন প্রকার স্থাপনা নির্মাণ করা মানেই বাংলাদেশের সংবিধান ও আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী’— জোর দিয়ে বলেন এডভোকেট বাবুল।

তবে সিআরবি সংরক্ষণের এই ভূমিকাকে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা হিসেবে ধরে নেয়ার সুযোগ নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সিআরবিতে হাসপাতাল না চাওয়ার মানে কোনভাবেই এটা নয় যে চট্টগ্রামবাসী হাসপাতাল চায় না। আমাদের হাসপাতালের প্রয়োজন আছে। আমরা চাই রেলের জায়গাতেই চট্টগ্রামে এই হাসপাতালটি হোক। তবে সেটি সিআরবিতে নয়।’

‘চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত রেলওয়ের অনেক জায়গা রয়েছে। এই জায়গাগুলোর একদিকে পাহাড়, একদিকে সন্দ্বীপ চ্যানেল। সেখানে ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে,বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির মত ঐতিহ্যবাহী ও সুবিশাল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসবের আশেপাশেই প্রাকৃতিক পরিবেশে হাসপাতালটি হতে পারে। এতে মানুষের হাসপাতালের প্রয়োজন যেমন মিটবে তেমনি সিআরবিও অক্ষত থাকবে’— হাসপাতাল তৈরির জন্য বিকল্প স্থানের প্রস্তাব করে বলেন এডভোকেট ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!