‘সিআরবিতে হাসপাতালের বিরোধিতা মানে প্রধানমন্ত্রীর বিরোধিতা’— বিস্ফোরক মন্তব্য মোছলেমের

চট্টগ্রামের সিআরবিতে হাসপাতাল স্থাপনের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনকে ‘উদ্দেশ্যমূলক ও হীন স্বার্থের আন্দোলন’ হিসেবে অভিহিত করে এই হাসপাতাল স্থাপনের বিরোধিতা কাম্য নয়— এমন মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চাঁন্দগাও-বোয়ালখালী আসনের সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দীন আহমদ। এর মধ্য দিয়ে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের পর চট্টগ্রামের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে দ্বিতীয়জন হিসেবে সরাসরি সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের পক্ষে নিজের অবস্থান জানান দিলেন মোছলেম উদ্দিন এমপি।

প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছাতেই এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে জানিয়ে এর বিরোধিতা করা মানে শেখ হাসিনার বিরোধিতা করা বলেও এ সময় মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রামের প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতা। তবে আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত নেতারা এটিকে মোছলেম উদ্দিনের ‘নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি’ হিসেবেই দেখছেন। পাশাপাশি এভাবে প্রধানমন্ত্রীর কথা বলে হাসপাতাল নির্মাণের পক্ষে কথা বলার মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ‘ছোট’ করা হচ্ছে বলেও মনে করেন তারা।

শনিবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রাম সম্মিলিত কর আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ আয়োজিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিআরবি রক্ষা আন্দোলন নিয়ে এমন বিস্ফোরক মন্তব্য করেন মোছলেম উদ্দিন আহমদ

‘সিআরবিতে হাসপাতালের বিরোধিতা মানে প্রধানমন্ত্রীর বিরোধিতা’— বিস্ফোরক মন্তব্য মোছলেমের 1

প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছাতেই সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে মন্তব্য করে মোছলেম উদ্দিন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় চট্টগ্রামের রেলওয়ের ভূমিতে পিপিপির মাধ্যমে সিআরবি এলাকায় একটি হাসপাতাল নির্মানের প্রকল্প গ্রহণ করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। যেখানে বর্তমানে কিছু ঝুপড়ি ঘর ও দোকানপাট রয়েছে। এক শ্রেণির লোক কিছু না-বুঝেই হীন স্বার্থে হাসপাতাল নির্মাণের বিরোধিতা করে যাচ্ছে।’

এর আগে সেখানে অন্যান্য স্থাপনা তৈরির সময় কোন বিরোধিতা কেন করা হয়নি— এমন প্রশ্ন তুলে মোছলেম উদ্দিন বলেন, ‘এই এলাকায় যখন সিএনজি ফিলিং স্টেশন করা হয়েছে তখন বিরোধিতা করা হয়নি। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় যখন করা হয়েছে তখন বিরোধিতা করা হয়নি কেন? এখন হাসপাতাল নির্মাণের বিরোধিতা করা মানে শেখ হাসিনার বিরোধিতা করা।’

এই বিরোধিতার পিছনে অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতালগুলোর ইন্ধন রয়েছে দাবি করে মোছলেম উদ্দিন আরও বলেন, ‘কিছু স্বার্থান্বেষী মহল এভারকেয়ার, ইমপেরিয়াল, পার্কভিউসহ বিভিন্ন হাসপাতাল মালিকদের ইন্ধনে সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের বিরোধিতা করছে যা কাম্য নয়।’

‘সিআরবিতে হাসপাতালের বিরোধিতা মানে প্রধানমন্ত্রীর বিরোধিতা’— বিস্ফোরক মন্তব্য মোছলেমের 2

উন্নয়নের স্বার্থে পরিবেশের বিষয়ে ছাড় দিতে হবে বলেও এ সময় মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন এবং পরিবেশ একসাথে হয় না, উন্নয়নের স্বার্থে পরিবেশের বিষয়ে ছাড় দিতে হবে। আমরা বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি। তার কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। তার হাতকে শক্তিশালী করতে আমাদের একসাথে কাজ করতে হবে।’

সম্মিলিত কর আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি বদিউজ্জামানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এডহক কমিটির সদস্য এডভোকেট মজিবুল হক, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এএইচএম জিয়া উদ্দীন, চট্টগ্রাম কর আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুর হোসেন, আবদুল মালেক, জয় শান্ত বিকাশ বড়ুয়া, ফিরোজ ইফতেখার, মাঈনুল আলম, ইফতেখার আনিস, আহসান উল্লাহ।

এদিকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান মোছলেম উদ্দিনের এই অবস্থানকে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি হিসেবেই দেখছেন। চট্টগ্রাম প্রতিদিনের এক প্রশ্নের জবাবে সিআরবি রক্ষা আন্দোলনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত এই আওয়ামী লীগ নেতা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটা উনার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি। যে কোনো বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে এমন অবস্থান থাকতেই পারে। তবে আমি মনে করি এসব বলে উল্টো প্রধানমন্ত্রীকে ছোট করা হয়। উনার কাছে তথ্য গোপন করে এটার অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। আমাদের বিশ্বাস এখানে হাসপাতাল করলে সেটার কী নেতিবাচক ফলাফল হবে— তা জানলে প্রধানমন্ত্রী এই হাসপাতাল করতে দেবেন না। এই হাসপাতাল না হলেই বরং জনগণের কাছে সরকারের ইমেজ বাড়বে।’

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!