সিআরবিতে বলী খেলা আয়োজনের প্রস্তাব সিএমপি কমিশনারের

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলা জেলা পরিষদ চত্বরের বদলে সিআরবি এলাকায় হলে ভাল হতো বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর।

মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) আসন্ন ঈদ উপলক্ষে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা প্রস্তুতি সম্পর্কে জানাতে সিএমপির আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই মন্তব্য করেন সিএমপি কমিশনার।

চট্টগ্রামের ঐতিহ্য জব্বারের বলী খেলার ১১৩তম আয়োজন হচ্ছে এবার। অন্য বছরের মতো বসবে মেলাও। প্রতিবারের মতো এবারও ১২ বৈশাখ (২৫ এপ্রিল) বলী খেলা হবে। তবে সংস্কার কাজের কারণে লালদীঘি মাঠ না পাওয়ায় এবারের বলী খেলা হবে মাঠের সামনে জেলা পরিষদ চত্ত্বরে অস্থায়ী মঞ্চ করে। রমজান মাস হওয়ায় এবার বলী খেলার জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত। আর খেলা ঘিরে বৈশাখী মেলা বসবে লালদীঘি মাঠের আশেপাশের এলাকায় ১১, ১২ ও ১৩ বৈশাখ (২৪ থেকে ২৬ এপ্রিল) এই তিন দিন।

এবারের রমজানে যানজট পরিস্থিতি তীব্র রূপ নেওয়ায় এবং ঈদের আগে আগে এই মেলার সময় পড়ায় নাগরিকদের মধ্যে এবারের মেলাকে ঘিরে চরম ভোগান্তির ভয় ও শঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি মেলার স্পটের আশপাশে অনেকগুলো বড় মার্কেট থাকায় সেটি আরও ভয়াবহ রূপ নেওয়ার আশংকা করছেন নাগরিকরা।

সংবাদ সম্মেলনে সিএমপি কমিশনারের কন্ঠে যেন ঝরে পড়লো সেই আশংকাই। ঈদে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘জব্বারের বলী খেলা সিআরবিতে হলে সুবিধা হতো। আয়োজকদেরও আমরা এটা বলেছি। কিন্তু তারা বলেছে তারা রাস্তার এক পাশ খালি রাখবে। খুব একটা সমস্যা হবে না।’

এই বিষয়ে সিএমপি কমিশনারের সঙ্গে অনেকটাই একমত বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘জব্বারের বলী খেলা চট্টগ্রামের ঐতিহ্য। এটা নিয়ে যে ভীড় হয় সেটাও মানুষ উপভোগ করে। কিন্তু এবারের বিষয়টা ভিন্ন। এবার রোজার মধ্যে এটা পড়েছে। একইসঙ্গে আশেপাশের মার্কেটগুলোতে ঈদের কেনাকাটা, তার ওপর রোজার শুরুর দিকে যে জ্যাম এসব মিলিয়ে একটা ভোগান্তি হবে। তার ওপর মেলাটাও লালদীঘির ময়দানে হচ্ছে না, কিন্তু বলী খেলা হওয়া উচিত খোলা ময়দানে।’

ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘এবারের জন্য এটা সিআরবিতে করা যেত। অথবা পলোগ্রাউন্ডেও করা যেত। সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে চলমান সব পরিস্থিতিকেই মাথায় রাখা উচিৎ। তবে আমাদের এখানে সবাই পরিবর্তনকে ভয় পায়। এমনটা হওয়া উচিত না।’

এখনও এই বিষয়ে ভাবার সুযোগ রয়েছে মন্তব্য করে ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এটাকে সিআরবিতে করা যেতে পারে। সেখানে করলে একদিকে যেমন রাস্তায় জ্যাম হবে না, আবার ব্যবসায়ীদেরও অসুবিধা হবে না। ভোগান্তিও কম হবে।’

এই বিষয়ে কথা বলতে জব্বারের বলী খেলা ও মেলা কমিটির সভাপতি জহরলাল হাজারীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সফল হওয়া যায়নি।

অন্যদিকে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর মুঠোফোনে কল করলেও তিনি কল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।

এর আগে লালদীঘি মাঠ না পাওয়ায় ১৩ এপ্রিল আবদুল জব্বারের বলী খেলা ও বৈশাখী মেলা আয়োজন স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছিল আয়োজক কমিটি। তার আগে গত দু বছরও করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বলী খেলা ও মেলা হয়নি। বলী খেলা ও মেলা স্থগিতের ঘোষণা আসার পর তা নিয়ে নানা মহলে আলোচনা শুরু হয়। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী এই আয়োজন অব্যাহত রাখার দাবি ওঠে।

একপর্যায়ে সিটি মেয়র রেজাউল করিম কুস্তি প্রতিযোগিতা ও মেলা কমিটির সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেন। বৃহস্পতিবার রাতেই মেলা কমিটির সঙ্গে এ দফা আলোচনা করেন তিনি। শনিবার সকালে দ্বিতীয় দফায় আলোচনার পর বহদ্দার বাড়ি এলাকায় নিজ বাসভবন লাগোয়া ব্যক্তিগত কার্যালয়ে মেয়র ও আয়োজক কমিটির সদস্যরা সংবাদ সম্মেলন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে মেয়র রেজাউল বলেন, ‘কয়েকদিন আগে যখন ঘোষণা আসে বলী খেলা ও মেলা হবে না, তখন মানুষের মাঝে হতাশা চলে আসে। মেয়র হিসেবে বিভিন্নজন আমাকে বলতে শুরু করে, কেন জব্বারের বলী খেলা হবে না? তখন সিদ্ধান্ত নিলাম, মেয়র হিসেবে আমার দায়িত্ব আছে।’

তিনি বলেন, ‘জব্বারের বলী খেলা শুধু একটি খেলা নয়, এটি আমাদের ঐতিহ্য। এমনকি অতীতে ঈদের দিনেও বলী খেলা হয়েছে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে মানুষকে সচেতন করতে এই খেলার আয়োজন শুরু হয়েছিল।’

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!