চট্টগ্রাম বিআরটিএ/ সাড়ে ৩ হাজার টাকার লাইসেন্স ১১ হাজার!

নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকরের পর বিআরটিএতে কাজের চাপ বেড়েছে। আর সেই সঙ্গে বেড়েছে দালালের দৌরাত্ম্যও। অফিসের ভেতর ও বাইরে দালালদের ছোটাছুটি করতে দেখা যাচ্ছে। দালাল ছাড়া কাজ করতে গেলে নানা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। হয়রানি থেকে বাঁচতে দালালদের শরণাপন্ন হচ্ছেন গাড়ির মালিকদের অনেকে।

নতুন আইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন যান চালালে ছয় মাস কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া মোটরযান চালালে ছয় মাস কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধানসহ জেল-জরিমানাও বেড়েছে। বিআরটিএ অফিসের সব বিভাগে তাই এখন বেশ ভিড়। গাড়ির ডিজিটাল নম্বর প্লেট, ফিটনেস সনদ ও লাইসেন্স সংগ্রহ করতে ভিড় করছে গাড়ি মালিকরা। ভিড় সামলাতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) সকাল ১১টায় হাটহাজারী নতুনপাড়ায় বিআরটিএ অফিসে গিয়ে দেখা যায়, অফিসের সামনে খোলা জায়গায় সারি সারি বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, কার, মাইক্রো, সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেল দাঁড়িয়ে আছে। ভবনের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে দুই থেকে ৩০০ মোটরসাইকেল নম্বর প্লেট লাগানোর জন্য দাঁড় করানো আছে।

ভবনের পূর্ব পাশেও মোটর সাইকেলের ফিটনেসের জন্য লাইন। তবে নম্বর প্লেট নেওয়ার জন্য মোটর সাইকেলের লাইন বেশি। অফিস কম্পাউন্ডে জায়গা না থাকায় কম্পাউন্ডের বাইরে হাটহাজারী-মুরাদপুর সড়কের দু’পাশেও ছিল গাড়ির জটলা।

১ নম্বর ভবনের সামনে শ’খানেক গাড়ি ফিটনেস পরীক্ষার জন্য দাঁড় করানো। গাড়ির মালিকরা কাগজপত্র নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করছেন। গাড়ির ফিটনেস পরিদর্শন করছেন মোটরযান পরিদর্শক পলাশ খীসা। মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ফিটনেস মেয়াদ শেষ হয়েছে এমন গাড়ির সংখ্যাই বেশি।

মূল ভবনের উত্তরে ৩ নম্বর ভবনের সামনে এনআরবিসি ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার জন্যও ছিল মানুষের দীর্ঘ লাইন। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অনেকে অধৈর্য হয়ে হৈচৈ করছে। পুলিশ এসে তাদের শান্ত করছে। লাইনে দাঁড়ানো মুরাদপুর থেকে আসা প্রাইভেট কারের মালিক মো. গোলাম রসুল বলেন, সকাল ১১টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। ১টা বেজেছে। এখনো টাকা জমা দিতে পারিনি। যেহেতু কাজের চাপ বেড়েছে, তাই লোকবল বাড়ানো উচিত।

BRTA-1

বিআরটিএ সূত্রে জানা যায়, আগে যেখানে দৈনিক ২০০ গাড়ির ফিটনেস নেওয়া হতো, এখন ৪০০ মানুষ ফিটনেসের জন্য আসছে। ফিটনেস শাখায় সেকশন ইন্সপেক্টর ৩ জন, সহকারী পরিদর্শক ২ জন, অফিস সহকারী ৩ জন। এই জনবলে দ্বিগুণ কাজ করতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

মাদারবাড়ি থেকে কারের ফিটনেস নিতে আসা ব্যাংকার আবদুল করিম বলেন, ‘আমার গাড়ির ফিটনেস মেয়াদ চলে গেছে দশ মাস হলো। এতদিন করব করব করেও করা হয়নি। তবে নতুন আইন কার্যকর হওয়ার পর কাগজপত্র হালনাগাদ না করে উপায় নেই।’

ফিটনেস শাখার মোটরযান পরিদর্শক পলাশ খীসা বলেন, ‘নতুন সড়ক আইন কার্যকরের পর ফিটনেস শাখার কাজ বেড়েছে। আগে দৈনিক ২০০ গাড়ির ফিটনেস চেক করা হলেও, এখন ৪০০ গাড়ির ফিটনেস দেখতে হচ্ছে। এখানে জনবল কম। তারপরও আমরা সাধ্যমত মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছি।’

বিআরটিএতে এই কাজের চাপ বাড়ার সাথে সাথে বেড়েছে দালালদের দৌরাত্ম্য। অভিযোগ রয়েছে, দালাল ছাড়া কাজ করতে গেলে নানা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। গাড়ির কাগজপত্র হালনাগাদ করতে আসা অনেকের সাথে আলাপকালে জানা যায়, তারা দালালের মাধ্যমে কাজ করছেন। দালালদের একটি বিশেষ চিহ্ন দেখলেই কর্মকর্তারা কাগজে সই করেন। অফিস কম্পাউন্ডের চেয়ে অফিসের সামনের দোকানগুলোতে দালালের উৎপাত বেশি। গাড়ির মালিকেরা হয়রানি থেকে বাঁচতে দালালদের শরণাপন্ন হচ্ছেন।

ফটিকছড়ি দাঁতমারা থেকে হালকা যানের ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে আসা মো. রাসেল অভিযোগ করেন, একটি লাইসেন্স করতে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা লাগলেও, আমার কাছে দালাল ১১ হাজার টাকা দাবি করেছে। তবে তিনি নিজে না করে দালালের কাছে গেছেন কেন- জানতে চাইলে বলেন, দালাল ছাড়া এখানে কোনো কাজ হয় না। নিজে করতে গেলে মাসের পর মাস ঘুরতে হয়।

জানা যায়, একশ্রেণির বিআরটিএ কর্মকর্তার যোগসাজশে দালালরা মানুষের কাছ থেকে প্রায় তিন থেকে চার গুণ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। কাগজপত্র হালনাগাদ করতে আসা অনেকের সাথে আলাপকালে বলেন, বিআরটিএতে এই মুহূর্তে মানুষের হয়রানি রোধ করা দরকার। গাড়ির কাগজপত্র হালনাগাদ না থাকায় সড়কে ট্রাফিক পুলিশ জেল-জরিমানা করবে, আবার হালনাগাদ করতে গেলে এখানে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। তিন থেকে চার গুণ বেশি টাকায় দালালের মাধ্যমে কাজ করতে হয়।

সেবা নিতে আসা মানুষের দাবি, সাময়িক জনবল বাড়িয়ে কাজের গতি বাড়ানো ও যে কোনো অভিযোগের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া এবং দালালদের দৌরাত্ম্য কমানোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

সিআর

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!