সার্ভারের ভূত চট্টগ্রাম কাস্টমসে, এক শাখার হিসাব দেখাচ্ছে অন্য শাখায়

বন্ড ও শুল্কায়ন শাখায় ফাইলজট, ভোগান্তি চরমে

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের সার্ভার জটিলতার কারণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। কয়েকদিন থেকেই সার্ভার স্লো হওয়ার কারণে এক শাখার বিল অব এন্ট্রি দেখাচ্ছে অন্য শাখায়। এসব বিল অব এন্ট্রির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শাখার রাজস্ব কর্মকর্তার নাম উল্লেখ থাকে কাস্টমস সফটওয়্যারে। কিন্তু গত মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) ও বুধবার এসব জটিলতায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের।

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা জানান, গত কয়েকদিন থেকেই সার্ভার ভোগান্তির কারণে রাজস্ব আদায়ে পিছিয়ে পড়ছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস।

জানা গেছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিশেষায়িত সফটওয়্যার এসঅ্যাইকোড সিস্টেমের সমস্যা দেখা দেওয়ায় চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের শুল্কায়ন কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। গত কয়েকদিন থেকেই সমস্যার শুরু হয়। মঙ্গলবার দুপুরে কাস্টমস বন্ড শাখার (৮ডি), ৫(এ), ৫(বি) রাজস্ব কর্মকর্তার (আরও) টেবিল ঘিরে জটলা লেগে থাকে। কম্পিউটারের সার্ভারে কাজ করতে না পারায় কোনো পণ্য চালানের ফাইল ছাড় নিতে পারছেন না কর্মকর্তারা। সার্ভারে সাপোর্ট করছে না।

পণ্য চালান শুল্কায়নে এইচএস (হারমোনাইজড সিস্টেম কোড) এবং সিপিসি (কাস্টমস প্রসিডিউর কোড) নির্ধারণে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে ব্যাহত হচ্ছে শুল্কায়ন কার্যক্রম। বিল অব এন্ট্রি, বিল অব এক্সপোর্ট দাখিল, শুল্ক পরিশোধ সংক্রান্ত ব্যাংকিং কার্যক্রমেও সমস্যা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমসে প্রায় তিন হাজার সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট আছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে প্রতিদিন সাত হাজার বিল অব এন্ট্রি এবং বিল অব এক্সপোর্ট দাখিল হয়। এর মধ্যে আমদানির পণ্যের জন্য দুই হাজার বিল এব এন্ট্রি এবং রপ্তানির পণ্যের জন্য পাঁচ হাজার বিল অব এক্সপোর্ট দাখিল করা হয়। এছাড়া দৈনিক প্রায় ১৫০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করে কাস্টমস হাউস।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক রাজস্ব কর্মকর্তা জানান, সার্ভারে ফাইল ছাড় দেওয়া যাচ্ছে না। প্রায় সকাল থেকে এ ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়।

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ওয়ারিশা এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী মো. সওয়ার আলম খান বলেন, ‘সার্ভার না থাকায় মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েছি আমরা। পণ্য চালান খালাস করতে পারিনি।’

চট্টগ্রাম কাস্টম সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, ‘সারাদিন আমদানি-রপ্তানি পণ্য চালানের শুল্কায়ন সংক্রান্ত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। সার্ভার স্লো থাকায় বন্দর থেকেও পণ্য চালান খালাস নিতে সমস্যায় পড়তে হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সকাল থেকেই ভোগান্তিতে পড়েছে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা। বিশেষ করে কাস্টমসের শুল্কায়ন শাখা ৫(এ) ও ৫(বি)-তে চরম ফাইলজটের সৃষ্টি হয়। আমরাও খোঁজ খবর নিয়েছি কাজের। তবে মঙ্গলবার বিকালে দিকে একটু সমস্যার সমাধান হয়েছে।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার (প্রিভেন্টিভ) মো. নূর উদ্দিন মিলন বলেন, ‘কয়েকদিন থেকে সার্ভারে সমস্যা করছে। তবে এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। প্রোগ্রামারে সঙ্গে কথা বললে বিস্তারিত জানতে পারবেন।’

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের প্রোগ্রামার শামীমুল ইসলাম বলেন, ‘সফটওয়্যার মাইগ্রেট হওয়ার কারণে যাদের কম্পিউটার স্লো তাদের ওখানেই জটিলতা তৈরি হয়েছে। এক্ষেত্রে আপডেট কম্পিউটার ব্যবহার করলে কাজ দ্রুত হবে। বর্তমানে ৫০ এমবিপিএসের ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার হয় কাস্টমস হাউসে। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরাও যদি এরকম হাইস্পিডের ইন্টারনেট ব্যবহার করেন তাহলে জটিলতা থাকবে না।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!