সাপ আর চোরে পূর্ব রেলের একমাত্র ডিপো কোটি কোটি টাকার মালামাল নিয়ে অরক্ষিত

পাহাড়তলীর নিউ স্টোরস ডিপো

রেল পূর্বাঞ্চলের কোটি কোটি টাকার গুরুত্বপূর্ণ মালামাল রাখার একমাত্র নিউ স্টোর ডিপোটি বছরজুড়েই রয়ে গেছে পুরোপুরি অরক্ষিত। ঠিকাদারের মাধ্যমে কেনা বিপুল পরিমাণ মালামাল বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হলেও ওই ডিপোর অন্তত তিনটি স্থানেই সীমানা দেয়াল ভাঙা। সীমানা প্রাচীরের চারদিক জঙ্গলাকীর্ণ ও গাছপালা ভেঙে পড়ে থাকলেও কর্তৃপক্ষের যেন কোনো বোধোদয় নেই। ফলে এই ডিপোতে প্রায়ই হানা দেয় লোহা চোরদের সংঘবদ্ধ চক্র। তাদের সঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই রেল নিরাপত্তা বাহিনীকে খেলতে হচ্ছে চোর-পুলিশ খেলা। তাছাড়া ডিপোটিতে বিদ্যুৎও নেই। এতে নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কিত খোদ বাহিনীর সদস্যরাই।

এমন সব সমস্যার মুখে পড়ে চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী ক্যান্টিন গেইটে রেল পূর্বাঞ্চলের একমাত্র বিভাগীয় সরঞ্জাম স্টোরস বা নিউ স্টোরস ডিপোটি কোটি কোটি টাকার মালামাল নিয়ে রয়েছে এমনই বিপজ্জনক অবস্থায়।

রেল নিরাপত্তা বাহিনীর কনস্টেবল সিরাজ বললেন, ‘প্রতি রাতে অন্ধকারে বিশাল জায়গায় ঘুটঘুটে অন্ধকার ও গা ছমছম পরিবেশে ডিউটি করে যাচ্ছি। একদিকে সাপের ভয়, অন্যদিকে চোরের উপদ্রব। নেই ওয়াচ টাওয়ারও।’

সরেজমিনে দেখা যায়, স্টোর ডিপোর ভেতরে বড় বড় গাছপালা ভেঙে পড়ে আছে। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। সীমানা প্রাচীরের দেয়াল অন্তত তিনটি স্থানে ধসে পড়েছে। সেগুলো টিন ও বাঁশ দিয়ে কোনোভাবে আটকে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে মাল পরিবহনের জন্য ট্রলির রেললাইনটির চিহ্নও দেখা যায় না।

সাপ আর চোরে পূর্ব রেলের একমাত্র ডিপো কোটি কোটি টাকার মালামাল নিয়ে অরক্ষিত 1

অন্যদিকে বিদ্যুৎ রয়েছে শুধু মূল অফিসেই। কিন্তু গুদামগুলোর বিশাল এলাকাজুড়ে বিদ্যুতের তার ঝড়ে ছিঁড়ে যাওয়ায় সূর্য ডুবলেই পুরো এলাকা অন্ধকারে ডুবে যায়। রেলওয়ের বিদ্যুৎ বিভাগ লোকবল সংকট দেখিয়ে মেরামত থেকে বিরত থাকে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ডিপো ঘুরে দেখা গেছে, সীমানা প্রাচীরের চারদিক হয়ে উঠেছে ঘন জঙ্গল। শুধু ভাঙা অংশ ও টিনের বেড়ার কোণে দেখা মিলেছে ফাঁক। বুঝতে বাকি নেই বিষাক্ত সাপ! রাতে এই নিউ স্টোর ডিপো এলাকাটিই আবার চোরের চারণভূমিতে পরিণত হয়।

জানা গেছে, সীমানা প্রাচীরের বিপরীত দিকে রয়েছে আমবাগান ও জোড় ডেবার বস্তি। সংঘবদ্ধ লোহা চোর চক্রের সদস্যরা এই বস্তিতেই বসবাস করে। অন্ধকার রাত, বিদ্যুৎবিহীন পরিবেশে রাত হয়ে উঠে বিষাক্ত সাপ ও চোরদের চারণভূমি। প্রতি রাতেই রেল নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সাথে তাদের চোর-পুলিশ খেলা চলে।

রেল নিরাপত্তা বাহিনীর চিফ ইন্সপেক্টর মো. ঈসরাইল মৃধা বলেন, ‘এখানে ৪-৫টি ওয়াচ টাওয়ার থাকার কথা। কিন্ত একটি ওয়াচ টাওয়ারও নেই। চলাচলের রাস্তা নেই, এমনকি নেই কারেন্টও। এসব ব্যাপারে বারবার ডিসিওএস অফিসে জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। কোটি কোটি টাকার মালামাল রক্ষা করতে গিয়ে আমরা নিজেরাই শঙ্কিত থাকি।’

জানা গেছে, চলতি বছরের জুন মাসেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানিয়ে বিভাগীয় প্রকৌশলী (২) বরাবরে তিন দফা চিঠি পাঠানো হয়। এর আগে ২০২০ সালের ২৩ মার্চ, ২৪ জুন এবং ১৩ ডিসেম্বরও বিভাগীয় প্রকৌশলীর দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতেও কোনো সুফল মেলেনি।

বিভাগীয় প্রধান সরঞ্জাম ডিপো কর্মকর্তা সাজ্জাদুর রহমানের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

রেল পূর্বাঞ্চলের একমাত্র ডিপোতে সরকারি কোটি কোটি টাকার মালামাল থাকার পরও কেন অরক্ষিত— সে বিষয়ে জানতে বিভাগীয় প্রকৌশলী (২) আহসান হাবিবের মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও তার সাড়া মেলেনি।

এ ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী সবুক্তগীনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, ডিপোর একটি অংশের সীমানা প্রাচীরের দেয়াল সেনাবাহিনীর ড্রেন সম্প্রসারণের কারণে ভেঙে পড়ে, তারা এই দেয়াল মেরামত করে দেবে। বাকি কাজ এক সপ্তাহের মধ্যে করা হবে বলে তিনি জানান।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!