সাত বছরের ‘ভগিজগি’ শেষে সিআরবি জোড়াখুনের বিচার হচ্ছে শুরু

বাবর দুবাইয়ে, পাঁচজন ‘পলাতক’

চট্টগ্রামের সিআরবিতে জোড়াখুনের ঘটনায় গতি আসেনি গত সাত বছরেও। আসামিদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অন্তত পাঁচজন সাত বছর ধরেই ‘পলাতক’। যার গুলিতে খুনের ঘটনা ঘটেছে, তার নাগালও মেলেনি। উদ্ধার হয়নি এমনকি সেই পিস্তলটিও। আসামিরা নানা কৌশলে বিচার বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে— উঠেছে এমন অভিযোগও।

রেলের টেন্ডারবাজি নিয়ে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সংঘাতে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে ২০১৩ সালে। এর মধ্যে কেটে গেছে সাত বছর। এরপরও এখনও বিচারই শুরু হয়নি চাঞ্চল্যকর খুনের মামলার। মামলার চার্জশিটভুক্ত পাঁচ সন্ত্রাসী পলাতক থাকায় দীর্ঘ সময় ধরে আইনি জটিলতায় স্থবির হয়ে পড়েছিল হত্যামামলাটি। পাঁচ আসামির কারণে এভাবে প্রায় সাত বছর ধরে গতিহীন থাকার পর অবশেষে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সিআরবি জোড়া খুন মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় গতি আসলো। পাঁচ আসামিকে পলাতক দেখিয়ে মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে আদালতে। ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে মামলাটি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মহিউদ্দিন মুরাদ।

জোড়াখুন মামলার চার্জশিটভুক্ত পাঁচ আসামি হলেন শিবু প্রসাদ চৌধুরী, মো. নুরুচ্ছফা প্রকাশ টিপু, টিটু দাশ প্রকাশ কালু, মো. সুমন চৌধুরী ওরফে সুমন ভুইয়া ও অমিত চক্রবর্তী ওরফে টাইগার শশী। এই পাঁচ আসামিকে আদালতে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। কিন্তু আদালতে হাজির না হওয়ায় তাদের পলাতক দেখিয়ে মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। বিচার শুরুর জন্য ডাবল মার্ডার মামলাটি চট্টগ্রাম মুখ্য মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়েছে। মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর ও ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল আলম লিমনসহ অধিকাংশ আসামি জামিনে রয়েছেন। ঢাকায় ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হলে আসামি বাবর দুবাই চলে যান। লিমনও আত্মগোপনে রয়েছেন।

জোড়াখুনের ঘটনায় নিহত যুবলীগ কর্মী সাজু পালিতের বড় ভাই উৎপল পালিত বলেন, ‘সাত বছর আগে আমার ছোট ভাই যুবলীগ কর্মী সাজুকে খুন করা হয়। অথচ এতোদিনেও মামলার বিচারই শুরু হয়নি। নানা কৌশলে মামলাটির বিচারে বাধা সৃষ্টি করছে আসামিরা। এই হত্যার বিচার কবে পাবো জানি না। আদৌ বিচার পাবো কিনা তাও জানি না।’

জানা গেছে, পুলিশ ইনভেস্টিগেটিভ ব্যুরো (পিবিআই) ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি জোড়া খুনের মামলায় মোট ৬৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দেয়। ১২ মার্চ চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আল ইমরান খানের আদালত শুনানি শেষে চার্জশিট আমলে নেন। চার্জশিটভুক্ত পাঁচ আসামিই পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এতেও কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় অবশেষে পলাতক পাঁচ আসামিকে আদালতে হাজির হতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। কিন্তু তারপরও এই পাঁচ আসামি আদালতে হাজির না হওয়ায় তাদের পলাতক দেখিয়েই মামলাটির বিচার শুরু করার জন্য চট্টগ্রাম অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. মহিউদ্দিন মুরাদের আদালত মামলাটি ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর করতে নির্দেশ দেন। বুধবার (৮ জানুয়ারি) এই আদেশ দেন আদালত।

২০১৩ সালের ২৪ জানুয়ারি সিআরবিতে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে যুবলীগ কর্মী সাজু পালিত ও আট বছরের শিশু আরমান গুলিতে খুন হন। এ ঘটনায় চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানার এসআই মহিবুর রহমান বাদি হয়ে বাবর ও লিমনসহ ছাত্রলীগ-যুবলীগের ৮৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় ৩০ থেকে ৪০ জনকে আসামি করে কোতোয়ালী থানায় একটি হত্যামামলা দায়ের করেন।

নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ঘটনার তদন্তে নেমে গোলাগুলির ঘটনায় অস্ত্রধারী অজিত বিশ্বাস, শশী, রতন মল্লিক, বাবুল, ছোট বড়ুয়া, ভানু ও আসামি টিপুর সম্পৃক্ততা পেলেও ‘পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা না পাওয়া’র কারণ দেখিয়ে চার্জশিট থেকে তাদের নাম বাদ দেওয়া হয়। ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালত ডিবির এ চার্জশিটটি পর্যালোচনা করে ‘ত্রুটিপূর্ণ তদন্তের’ জন্য অসন্তোষ প্রকাশ করে পিবিআইকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন।

পিবিআই অধিকতর তদন্তে নেমে অস্ত্রধারী অজিত বিশ্বাস, শশী, রতন মল্লিক, বাবুল, ছোট বড়ুয়া, ভানু ও আসামি টিপুর মধ্যে ছয় জনের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে তাদের সম্পূরক চার্জশিটভুক্ত করে। তবে তাদের গ্রেফতার করা যায়নি। অস্ত্র দিয়ে গুলি চালানো শশী পলাতক থাকায় গুলি চালানো অস্ত্রটিও উদ্ধার হয়নি।

পিবিআইয়ের অধিকতর তদন্তে অভিযুক্তরা হলেন বিতর্কিত কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী ওরফে বাবর ও তার গ্রুপের যুবলীগ নেতা রিটু দাশ, বিতর্কিত ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল আলম লিমন ও তার গ্রুপের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলমগীর টিপু, ছাত্রলীগ নেতা ওসমান গণি দুলু, মনোয়ারুল আলম চৌধুরী। এরা সবাই বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!