সাতকানিয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচারণা বহরে হামলায় ১৫ জন আহত

এলডিপি নেতা ‘নৌকার প্রার্থী’র দিকে অভিযোগের তীর

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম উদ্দিন চৌধুরীর প্রচারণা বহরে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে একদল দুর্বৃত্ত। এ ঘটনায় প্রচারণায় অংশ নেওয়া অন্তত ১৫ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। এ সময় ১০টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ১৫টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।

সোমবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেলে উপজেলার সোনাকানিয়া গারাঙ্গিয়া বদর সিকদারপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম উদ্দিন চৌধুরী ছাড়াও হামলার এই ঘটনায় আহতদের মধ্যে রয়েছেন— সেলিম উদ্দিনের ছোট ভাই জসিম উদ্দিন চৌধুরী (৩২), মকসুদুর রহমান (৫০), আমানুল হক (২৮), হোসাইন মোহাম্মদ (৩২), মোহাম্মদ ফারুক হোসেন (৩৫), আবু সাঈদ হাসান (৩২), আব্দুল গফুর (৫২)। তারা সকলেই সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী সেলিম উদ্দিন চৌধুরী এ হামলার জন্য এলডিপি নেতা থেকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হওয়া জসিম উদ্দীনের লোকজনকে দায়ী করেছেন।

সেলিম উদ্দিন চৌধুরী আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে মোটরসাইকেল প্রতীকে নির্বাচন করছেন। তিনি সাতকানিয়া উপজেলা যুবলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক ও বর্তমানে সাতকানিয়া উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য।

আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি সাতকানিয়ার ১৬ ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সোমবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী সেলিম উদ্দিন চৌধুরী সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে সোনাকানিয়ার গারাঙ্গিয়ার বদর সিকদারপাড়া এলাকায় প্রচারণায় বের হন। এ সময় তিনটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ১০ থেকে ১৫টি মোটরসাইকেল নিয়ে একদল লোক লাঠিসোটা হাতে নিয়ে এসে স্বতন্ত্র প্রার্থী সেলিমের গাড়িবহরে হামলা চালায়।

এ সময় হামলাকারীরা বিদ্রোহী প্রার্থীর গাড়িবহরের অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী সেলিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে গারাঙ্গিয়ার বড় হুজুর ও ছোট হুজুরের কবর জিয়ারত শেষে গাড়িবহর নিয়ে প্রচারণায় বের হয়েছি। বদর সিকদারপাড়া এলাকায় পৌঁছালে নৌকার প্রার্থী এলডিপি নেতা জসিমের ভাই খোরশেদের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে আমাদের বহরে হামলা চালিয়ে গাড়ি ভাংচুরসহ ১৫ জন নেতা-কর্মীকে আহত করে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জসিম উদ্দীন বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থী সেলিম চৌধুরীর নেতৃত্বে আমার প্রচারণার গাড়িতে হামলা চালানো হয়। এতে সেলিম উদ্দিন নামের আমার এক কর্মী আহত হয়েছেন।

সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক উচ্ছ্বাস তালুকদার বলেন, মারামারির ঘটনায় আহত আট ব্যক্তিকে সোমবার সন্ধ্যার দিকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সাতকানিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল জলিল বলেন, সোমবার বিকেলে গারাঙ্গিয়ায় ইউপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী এক পক্ষের প্রচারণার গাড়িতে হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। শুনেছি ওই ঘটনায় কয়েকজন সামান্য আহত হয়েছেন। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে হামলা ও ভাঙচুরের এই ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেল চারটায় মির্জাখীল বাংলাবাজারে মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে স্থানীয় জনসাধারণ।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা এর আগে অভিযোগ করেন, টাকার বিনিময়ে সাতকানিয়ার ১৭ নং সোনাকানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের রেজুলেশনে এলডিপি নেতা জসিম উদ্দিনকে ‘আওয়ামী লীগ’ সাজিয়ে স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের কাছে সুপারিশ পাঠিয়ে মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়া হয়। এই মনোনয়ন বাণিজ্যের কুশীলব হিসেবে সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েকজন নেতার হাত দেখছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

সোনাকানিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম গত ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ড বরাবরে পাঠানো এক চিঠিতে সোনাকানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে এলডিপি নেতা জসিম উদ্দিনের নাম ১ নম্বরে প্রস্তাবের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

ওই চিঠিতে লেখা হয়— ‘জসিম উদ্দিন একজন নির্বাচনপাগল মানুষ। নিজ ওয়ার্ডে মেম্বার পদে নির্বাচন করে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। কর্নেল অলি আহমদের হাতে এলডিপিতে যোগদান করে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচন করেও তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। এমন একজন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিলে ইউনিয়ন আওয়ামী পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হবে।’

জানা গেছে, ২০১৪ সালে সাতকানিয়ার কাটগড় বিওসি মোড়ের একটি কমিউনিটি সেন্টারে এলডিপির অঙ্গসংগঠন গণতান্ত্রিক যুবদলের বর্ধিত সভা চলাকালে জসিম উদ্দিন এলডিপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদের হাতে ফুলের তোড়া তুলে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এলডিপিতে যোগ দেন। এ সময় তার সমর্থক কয়েকজন কর্মীও এলডিপিতে যোগদান করেন।

পরে ওই সভাতেই সদ্য যোগদান করা জসিম উদ্দিনকে এলডিপির প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন এলডিপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অলি আহমদ। সেই নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে এলডিপির মনোনয়ন নিয়ে চশমা প্রতীকে নির্বাচন করেন জসিম।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!