সাতকানিয়ায় মোতালেবের প্রশ্রয়ে নিজ গ্রামেই মাদকের আখড়া!

মোসাদ্দেক খুনের পর তড়িঘড়ি চলে আসেন শহরে

মাদক ব্যবসার প্রতিবাদ করায় সাতকানিয়ায় খুন হন মোসাদ্দেকুর রহমান (৩৭) নামে এক যুবলীগ কর্মী। তার জানাজায় গিয়ে মাদকের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করেই গাড়ির একটানে শহরে চলে আসার পর আর দেখা নেই উপজেলা চেয়ারম্যান এমএ মোতালেবের। এলাকা থেকে কোনো ফোন গেলে ‘ব্যস্ত আছি’ বলে রেখে দেন। অথচ ‘মাদকমুক্ত সাতকানিয়া’ গড়ার ঘোষণা দিয়ে এমএ মোতালেব পার করেছেন নির্বাচনী বৈতরণী। তবে এ ঘোষণা সাতকানিয়ার মানুষ দেখেছে শুধুমাত্র শুধু মুখে মুখেই। এমএ মোতালেব বনফুল-কিষোয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যানও।

নির্বাচিত হওয়ার পর মাদকের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি উপজেলা চেয়ারম্যান এমএ মোতালেবকে। জনপ্রতিনিধি হয়ে কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় মাদক কারবারিরা প্রায়ই দেখাচ্ছে তাদের ভয়ংকর রূপ। যার পরিণতিতে উপজেলা চেয়ারম্যান এমএ মোতালেবের গ্রামের ছেলে যুবলীগ কর্মী মোসাদ্দেককেই খুন হতে হয় মাদক ব্যবসায়ীদের হাতে।

জানা গেছে, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার পাড়ায় পাড়ায় এখন ছড়িয়ে পড়েছে মরণ নেশা ইয়াবা। তরুণদের একটি অংশ ইয়াবায় আসক্ত হয়ে লিপ্ত হচ্ছে নানা অপকর্মে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়টি নিয়ে তৎপর হলেও জনপ্রতিনিধি হয়ে মোতালেব উল্টো নিরব ভূমিকা পালন করে গেছেন— এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর।

অভিযোগ উঠেছে, সাতকানিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তিনি এলাকায় যান কালেভদ্রে। চট্টগ্রাম শহরে নিজের ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত রয়েছেন ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া এই জনপ্রতিনিধি। শুধু তাই নয়, উপজেলার উন্নয়ন প্রকল্প তত্ত্বাবধান কিংবা সামাজিক কর্মকাণ্ডেও তার দেখা মেলে খুব সামান্যই।

গত সোমবার (২২ জুন) সাতকানিয়ার সদর ইউনিয়নের বারদোনা এলাকায় মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে মাদক কারবারির ক্ষোভের বলি হন এক যুবলীগ কর্মী মোসাদ্দেকুর রহমান। মাদক ব্যবসায়ীরা ছুরিকাঘাতে খুন করে তাকে। ওই সময় তার সাথে থাকা ছোট ভাই ফয়সালুর রহমানও আহত হন।

মোসাদ্দেকের জানাজায় অংশ নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান এমএ মোতালেব বক্তৃতা করেন। এ সময় আবারও মাদক নির্মূলের সেই ‘কথার কথা’ উপস্থাপন করেন তিনি। পাশাপাশি মোসাদ্দেকের পরিবারের পাশে থাকারও ঘোষণা দেন। কিন্তু জানাজা শেষে তড়িঘড়ি শহরে চলে আসার পর থেকে নিহত যুবলীগ কর্মীর পরিবারের সামান্য খোঁজও নেননি উপজেলা চেয়ারম্যান। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও উষ্মা রয়েছে তার প্রতি।

স্থানীয়রা জানান, সাতকানিয়ার সদর ইউনিয়নের বারদোনা এলাকায় এমএ মোতালেবের বাড়ি। এ এলাকা হয়ে উঠেছে মাদকে সয়লাব। উপজেলা চেয়ারম্যান এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় ইউনিয়নে মাদক নির্মূল কমিটি গঠন করেন মোসাদ্দেকুর রহমান। কিন্তু নিজ ইউনিয়নের এই কমিটিকে কোনো ধরনের সহযোগিতাই তিনি করেননি, মাদকব্যবসার মূল হোতারা এতে প্রশ্রয় পেয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে— এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর। এমন অবস্থায় মোসাদ্দেকুর রহমানের রক্তে ভিজলো মাদক ব্যবসায়ীদের খড়গ।

নিহত মোসাদ্দেকুর রহমানের শ্যালক মো. হাফিজুল্লাহ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মাদক নির্মূল করার অঙ্গীকার দিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এমএ মোতালেব সাহেবকে মোসাদ্দেক হাজার বার বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতার জন্য জানায়। কিন্তু তিনি সহযোগিতা করেননি। এ নিয়ে মোসাদ্দেকের আফসোস ছিল। আর সে সুযোগটি নিয়েছে মাদক ব্যবসায়ী খুনিরা। আমাদের এ বিষয়টি সবসময় বলতো সে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মোসাদ্দেকের জানাজায় বক্তব্য শোনার পর আমরা উপজেলা চেয়ারম্যান মোতালেব সাহেবকে আর পাইনি। নিহতের পরিবারের কী অবস্থা সেটা জানারও তিনি প্রয়োজন মনে করেননি। তবে সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নেজাম উদ্দিন মোসাদ্দেকের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান বলেন, ‘মাদক নির্মূলের কোনো কাজে উপজেলা চেয়ারম্যান এমএ মোতালেবকে মোসাদ্দেক পাশে পায়নি। মোসাদ্দেকের মৃত্যুর পরও উপজেলা চেয়ারম্যানকে এলাকায় জনগণ চোখে দেখেননি। অথচ এই জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করার সময় অঙ্গীকার করেছিলেন সাতকানিয়াকে মাদকমুক্ত উপজেলা গড়বেন তিনি। আসলে এটা সাতকানিয়াবাসীর সাথে প্রতারণার শামিল।’

এদিকে সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নেজাম উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমাদের যে কাজ করার কথা ছিল সেটা ছোট ভাই মোসাদ্দেক করেছিল। আমাদের ইউনিয়নে আসলে অনেক ধনী লোক আছে। তারা অনেকেই চাইলে মোসাদ্দেকের পরিবারের পাশে এগিয়ে আসতে পারে। কিন্তু এখনও কেউ তেমন হাত বাড়ায়নি।’

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!