পুলিশের কাণ্ড/ সাতকানিয়ায় মূল আসামির বদলে জেল খাটলো নিরাপরাধ প্রতিবন্ধী

চেক প্রতারণার মামলায় প্রকৃত আসামিকে গ্রেফতার না করে একই নামের এক মানসিক প্রতিবন্ধী নুরুল আবছারকে গ্রেফতার করে ১৩ দিন কারাভোগ করিয়েছেন সাতকানিয়া থানার এএসআই জহিরুল ইসলাম। ব্র্যাক ব্যাংকের করা ওই মামলার মূল আসামির নামও নুরুল আবছার। বর্তমানে তিনি ব্রাজিলে অবস্থান করছেন।

মূল আসামি দেশের বাইরে অবস্থান করলেও পুলিশ একই এলাকার প্রতিবন্ধী নুরুল আবছারকে গ্রেফতার করে। গত ১৯ আগস্ট গ্রেফতারের পর থেকে তিনি চট্টগ্রাম কারাগারে ছিলেন। বিষয়টি আদালতের নজরে আসায় সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) পঞ্চম মহানগর দায়দা জজ আদালতের বিচারক জহির উদ্দিন কারাবন্দি নুরুল আবছারকে মুক্তি দিয়েছেন।

এদিকে নুরুল আবছারকে গ্রেফতারের পর বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে তথ্যগোপন করতে থাকে সাতকানিয়া পুলিশ। আবছারের পরিবারকে এই বিষয়ে কাউকে না জানানোর জন্য টাকাও দেওয়া হয় থানার পক্ষ থেকে।

সোমবার কারাবন্দি নুরুল আবছারের পক্ষে আদালতে আসা মো. তাহেরও পুলিশের বিষয়টি বারবার আড়াল করতে চান। এই প্রতিবেদককে তিনি বারবার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, সাতকানিয়া থানার ওসি অনুরোধ করছেন যাতে সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টি না জানানো হয়। গ্রেফতারের পর ভরণপোষণের জন্য থানার পক্ষ থেকে নুরুল আবছারের পরিবারের সদস্যকে টাকাও দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ব্র্যাক থেকে নেওয়া ঋণের অনুকূলে ১ লাখ ৩৮ হাজার ১৮১ টাকার ঋণ বাবদ চেক প্রদান করে করে নুরুল আবছার। চেকটি ডিজঅনার হওয়ায় ব্র্যাক ব্যাংক তার বিরুদ্ধে চেক প্রতারণার মামলা করে। ওই মামলার আসামি নুরুল আবছারের পিতা নুরুল কবির। নুরুল কবিরের বাড়ি সাতকানিয়ার গারাঙ্গিয়ার হাতিয়ারকুলে।

ওই মামলায় রায় হয় গত ২৩ এপ্রিল। মামলার আসামি নুরুল আবছারকে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং ১ লক্ষ ৩৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এরপর আদালত গত ১৩ মে আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর সাতকানিয়া থানার এএসআই জহিরুল ইসলাম গত ১৯ আগস্ট প্রতিবন্ধী নুরুল আবছারকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করে। এরপর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। গ্রেফতারকৃত নুরুল আবছারের পিতা মৃত নুরুন্নবী। তার বাড়ির ঠিকানা সাতকানিয়ার গারাঙ্গিয়ার নুরুল ইসলাম পাড়া।

গত ৩১ আগস্ট সাতকানিয়া থানার এএসআই জহিরুল ইসলাম পঞ্চম মহানগর দায়রা জজ আদালতে অনিচ্ছাকৃত ও ভুলবশত প্রকৃত আসামির পরিবর্তে মানসিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে ভুল স্বীকার করে একটি প্রতিবেদন দেন। আদালতের কাছে এটি তার অনিচ্ছাকৃত ভুল উল্লেখ করে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ করা হয়।

পঞ্চম মহানগর দায়রা জজ আদালতের পেশকার ফরিদ আহমদ প্রতিবন্ধী নুরুল আবছারের মুক্তির বিষয়টি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মহানগর দায়রা জজ আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) এডভোকেট বিশ্বজিৎ বড়ুয়া বলেন, চেক প্রতারণা মামলায় আসামির বিরুদ্ধে ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং ১ লক্ষ ৩৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এরপর আদালত গত ১৩ মে আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। গ্রেফতারি পরোয়ানা অনুসারে সাতকানিয়া থানা পুলিশ মূল আসামির স্থলে একই নামের এক মানসিক প্রতিবন্ধীকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে সাতকানিয়া থানার এএসআই জহিরুল ইসলাম আদালতে ভুল আসামিকে গ্রেফতার করেছে বলে একটি প্রতিবেদন দেন। এরপর সর্বশেষ সোমবার নুরুল আবছারকে মুক্তি দেন আদালত।

এসসি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!