সাতকানিয়ায় পাঁচ মাস ধরে উদ্বাস্তু ১০ পরিবার!

ইয়াবা ব্যবসায়ী সাইফুল-মিন্টু বাহিনীর অত্যাচার

সাতকানিয়ার দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও ইয়াবা ব্যবসায়ী সাইফুল-মিন্টু বাহিনীর অত্যাচারে ভিটে-মাটি ছেড়ে গেছে এলাকার ১০ পরিবার। নারী ও শিশুসহ এসব পরিবারের প্রায় অর্ধ শতাধিক লোকজন গত পাঁচ মাস ধরে নিজেদের ভিটে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হওয়ার পর উদ্বাস্তুর মতো দিনযাপন করছেন। বাড়ি-ভিটে ফিরে পেতে শনিবার (২৭ এপ্রিল) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন উদ্বাস্তু পরিবারসহ এলাকার ক্ষুব্ধ জনতা।

সংবাদ সম্মেলনে এলাকাবাসীর পক্ষে লিখিত বক্তব্যে চরতি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মঈনুদ্দিন চৌধুরী বলেন, সাতকানিয়া উপজেলার দক্ষিণ চরতি গ্রামের আন্তঃজেলা ডাকাত সর্দার নুর আহমদের ছেলে সাইফুল ইসলাম। গত এক-দেড় বছর ধরে সৌদিয়া থেকে দেশে ফিরে এলাকায় ইয়াবা ব্যবসা, অস্ত্র ব্যবসা, খাল ও নদী থেকে অবৈধ বালুর ব্যবসা, পাহাড় কেটে মাটির ব্যবসা করে আসছে। এসব অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে আগে থেকে জড়িত রয়েছেন তাঁর চাচা শাহানুর মিন্টু।

এরমধ্যে গত ২৯ নভেম্বর রাতে ইয়াবা ব্যবসার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে সাইফুল, তার চাচা শাহানুর মিন্টু, কবির আহমদ, কবির আহমদের ছেলে বাবু, আলী হোসেনের ছেলে কামাল হোসেন ও আব্দুল খালেকের ছেলে মো. ইয়াছিনের মধ্যে মারামারি ও এক পর্যায়ে গুলাগুলি হয়। এই সময় স্থানীয় লোকজন তাদের নিবৃত্ত করতে এগিয়ে আসলে তাদের উপর এলোপাতাড়ি গুলি করে সাইফুল। সাইফুলের গুলিতে আলমগীর নামে একজন গুলিবিদ্ধ হন। সেলিম ও আশরাফসহ কয়েকজন আহত হন। এসময় সাইফুল তার নিজেদের দোষ অন্যের উপর চাপিয়ে দিতে এলাকার এক শিক্ষকের ছেলে আশরাফকে মারধর করে পুলিশের কাছে তুলে দেয়। সেলিম কোনভাবে পালিয়ে প্রাণ রক্ষা করে।

এরপর এলকার ৮-১০ টি পরিবারের উপর তান্ডব চালায় সাইফুল-মিন্টু বাহিনী। তারা আবুল খায়ের, সরওয়ার, নুরুল আমিন, ফারুক, বশর, কবির আহমদ, আব্দুল করিম ও আব্দুর রহিমের ঘর-বাড়ি ও দুটি মুদির দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এসময় এসব পরিবারের নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের মারধর করে ভিটে-বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে দেয়। এসব ঘরের আসবাবপত্র, ঘরের বেড়া, চালের টিন পর্যন্ত ভাঙচুর করে ও বাইরে বিক্রি করে দেয়। এমনকি ভিটেবাড়িতে থাকা গাছপালাগুলো পর্যন্ত বিক্রি করে দেয় তারা। এরপর সাইফুল ও মিন্টু বাহিনী পুরো এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। এরপর থেকে তাদের ইয়াবা, অস্ত্র, অবৈধ বালু ও মাটির ব্যবসা আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

গত ২১ এপ্রিল এলাকা থেকে উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলোর এক নিকটাত্মীয় মারা যায়। গত বুধবার ওই আত্মীয়ের জিয়াফতে যায় উচ্ছেদ হওয়া পরিবারের কয়েকজন সদস্য। কিন্তু জিয়াফত স্থলেই উচ্ছেদ হওয়া পরিবারের লোকজনকে অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে ঘিরে ফেলে সাইফুল-মিন্টু বাহিনী। এরমধ্যে নুরুল আমিনের ছেলে কায়েসকে মারধর করে তারা।

একইদিন সন্ধ্যায় দক্ষিণ চরতি কাটাখালী ব্রিজের পাশে সাবেক ইউপি সদস্য মোজাহেরুল হকের ছেলে মেজবাহ উল হককে প্রচন্ড মারধর করে সন্ত্রাসী সাইফুল-মিন্টু বাহিনী। দা-চুরি দিয়ে মারধরের পর গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে আবার নিজেদের অস্ত্র দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয় তারা।

এরপর থেকে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সন্ত্রাসী সাইফুল ও মিন্টুর কাছে কাছে ১৫-২০ টি অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। অস্ত্রের ভয়ে তাদের অরাজকতার বিরুদ্ধে কেউ এগিয়ে আসছে না। এদের মধ্যে সাইফুল নারী নির্যাতন মামলা ও মিন্টু সরকারি সার পাচার মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি।

সংবাদ সম্মেলনে ভিটেবাড়ি থেকে উচ্ছেদ হওয়া নুরুল আমিন, আবুল খায়ের, সরওয়ার, ফারুক, বশর, কবির আহমদ, আব্দুল করিম, আব্দুর রহিম ও মেজবাহ উল হকের মা জয়নাব নুরী উপস্থিত ছিলেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!