সাতকানিয়ায় পরকীয়ার বলি গৃহবধূ, শাশুড়ি-দেবর আটক

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় পরকীয়ায় বাধা দেওয়ায় এক গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে পাষণ্ড স্বামীর বিরুদ্ধে। নিহত গৃহবধূর নাম হিরা আক্তার (২৫)। তিনি উপজেলার কালিয়াইশ ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড উত্তর কালিয়াইশ মলিয়াকুল মুন্সির বাড়ির সামশুল ইসলামের মেয়ে। সোমবার (৯ মার্চ) রাত দেড়টার দিকে উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের ৫নম্বর ওয়ার্ড তেমুহানী সাইক্লোন সেল্টার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে স্বামী পলাতক রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ শাশুড়ি কুলছুমা খাতুন ও দেবর মো. ফারুককে আটক করেছে।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তেমুহনী সাইক্লোন সেল্টার এলাকার মোস্তাক আহমদের ছেলে পিকআপ চালক মো. শাহ আলমের সাথে কালিয়াইশ ইউনিয়ের ৫ নম্বর ওয়ার্ড মলিয়াকুল মুন্সির বাড়ি এলাকার সামশুল ইসলামের মেয়ে হিরা আক্তারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে ৯ বছর আগে বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের ৪ সন্তানের জন্ম হয়। ইতোমধ্যে ২ সন্তান মারা যায়। বর্তমানে সাইফুল ইসলাম (৫) ও সাইমন ইসলাম (৩) নামে দুই ছেলে সন্তান রয়েছে তাদের।

এ ব্যাপারে গৃহবধূর মা আয়েশা বেগম বলেন, ‘বিগত প্রায় ৫ বছর আগে বান্দরবানে গোয়ালিয়াঘোলা এলাকার এক মেয়ের সাথে জামাই শাহ আলমের অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠে। সে মেয়েটির সাথে প্রায় সময় মোবাইল ফোনে কথা বলত এবং মেয়েটির বাড়িতে আসা-যাওয়া করলে বিষয়টি নিয়ে আমার মেয়ের সঙ্গে জামাইয়ের প্রায় সময় ঝগড়া হতো। পরে আমরা উভয় পরিবার বসে সে সম্পর্ক থেকে জামাইকে সরিয়ে আনি। বিগত কয়েক মাস আগে বাঁশখালীতে তার ফুফাত বোনের সাথে আবারও অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলে। বিষয়টি নিয়ে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে নতুনভাবে পারিবারিক কলহের জন্ম দেয়। ঘটনার দিন রাত দুইটার দিকে জামাই আমাকে মুঠোফোনে বলে, আপনার মেয়ের দুই-তিন বার পায়খানা হয়েছে। এর কিছুক্ষণ পর আবার বলে- আমার মেয়ে মারা গেছে। বিষয়টি আমার সন্দেহ হলে আমি খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারি, ঘটনার দিন রাতে জামাই ঘরে গেলে তাদের মধ্যে আবারও ওই পরকীয়ার বিষয়টি নিয়ে কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া হয়। পরে জামাই আমার মেয়েকে গলায় কাপড় দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। তার গলায় নখের দাগ রয়েছে।’

অপরদিকে নিহত হিরার শাশুড়ি কুলছুমা খাতুন বলেন, ‘আমার বউয়ের (হীরার) ঘটনার দিন সন্ধ্যা থেকে দুই-তিনবার পায়খানা হয়। খবর শুনে আমার ছেলে রাতে ওষুধ ও ডাব নিয়ে আসে। পরে রাত দেড়টার দিকে ছেলে আমাকে বলে বউয়ের অসুখ বেড়ে গেছে, ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। পরে আমি ও ছেলে বউকে কেরানীহাট আশশেফা হাসপাতালে নিয়ে আসি। কিছুক্ষণ পর দেখি বউয়ের নড়াচড়া নেই। পরে বউ ও আমাকে ফেলে আমার ছেলে কোথায় চলে যায়।’

এক প্রশ্নের জবাবে কুলছুমা খাতুন বলেন, ‘বউয়ের সাথে ঝগড়া হয়েছে কিনা আমি জানি না।’

এ ব্যাপারে কেঁওচিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনির আহমদ বলেন, ‘আমি কাজে ব্যস্ত থাকায় ঘটনাস্থলে যেতে পারিনি। তবে স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল শুক্কুরের কাছ থেকে জেনেছি, ওই গৃহবধূর পায়খানা হয়েছে। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা গেছেন।’

সাতকানিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে- পারিবারিক কলহের কারণে গৃহবধূ মারা গেছে। তবে গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। লাশ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শাশুড়ি ও দেবরকে আটক করা হয়েছে।’

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!