সাতকানিয়ায় এক এসআইকে ঘিরে বিস্তর অভিযোগ, ভোটেও পক্ষ নিচ্ছেন প্রকাশ্যেই

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থানার এক এসআইয়ের বিরুদ্ধে উঠেছে বিস্তর অভিযোগ। জমি-জমা বিরোধ নিষ্পত্তি থেকে শুরু করে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্য এবং সাম্প্রতিক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিভিন্ন প্রার্থীর হয়ে প্রকাশ্য পক্ষপাতিত্বসহ নানা অভিযোগ ওঠা এই এসআইয়ের নাম মাহবুব। প্রায় তিন বছর ধরে সাতকানিয়া উপজেলার খাগরিয়া ইউনিয়ন পুলিশ বিটের কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

অভিযোগ উঠেছে, বিচার-আচার নিয়েই সদা ব্যস্ত থাকেন সাতকানিয়া থানার এই এসআই। স্থানীয় জমিজমার বিরোধ ‘নিষ্পত্তি’তেই মূল আগ্রহ তার। স্থানীয় মানুষের কাছে গত তিন বছরে তিনিই যেন খাগরিয়ার ‘ওসি’।

অভিযোগ উঠেছে, এসআই মাহবুবের দায়িত্বপালনকালে গত তিন বছরে খাগরিয়া হয়ে উঠেছে ‘মিনি টেকনাফ’। পাড়ায় পাড়ায় গড়ে উঠেছে ইয়াবার হাট।

স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি জানান, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে এই মাহবুবের দিন কাটছে অন্যরকম। সাতকানিয়া থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পদে নতুন মুখ আসায় যেন তার হয়েছে আরও পোয়াবারো। কারণ এক মাসেরও কম সময় আগে পদায়ন হওয়া নতুন ওসির এখনও পুরো এলাকা সম্পর্কে তেমন ধারণা হয়নি। এই সুযোগে বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষ হয়ে এসআই মাহবুবকে ইউনিয়নজুড়ে বিশেষ ভূমিকা রাখতে দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার বাদীদের মামলা প্রত্যাহার করতেও তিনি চাপ দিচ্ছেন— এমন অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

সাতকানিয়া থানার এই এসআইয়ের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, স্থানীয় অনেক ক্যাডারকেও ধরপাকড়মুক্ত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি নিজের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামিয়েছেন। নতুন ওসির চোখে ধুলো দিয়ে বিভিন্ন প্রার্থীর কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধাও আদায় করে যাচ্ছেন গত ১৫ দিন ধরে।

সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত খাগরিয়ার বিভিন্ন ব্যক্তির ঘরে গিয়ে আতংক সৃষ্টি করার অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এমনকি কাউকে কাউকে দিয়েছেন নির্বাচনী সহিংসতার মামলায় আসামি করার হুমকিও। ওসির নাম ভাঙিয়ে বেশ কয়েকজন থেকে দাবি করেছেন টাকাও। তারা কেউই তার ভয়ে খুলছে না মুখ।

অভিযোগ উঠেছে, সাতকানিয়ার সাবেক এক ওসির ক্যাশিয়ার হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন এই এসআই। নানা অভিযোগে ওই ওসি বদলি হওয়ার পরও তার ইশারায় এখনও কাজ করছেন মাহবুব— এমন অভিযোগও উঠেছে স্থানীয়দের কাছ থেকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নির্বাচনে অংশ নেওয়া এক প্রার্থী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এতদিন তিনি জমি-জমার বিরোধের বিচার করতেন। এলাকাজুড়ে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তার যতো সখ্য। এখন জামায়াতের ক্যাডারদের চাপে না রেখে তাদেরকে বিভিন্ন প্রার্থীর সঙ্গে টাকার বিনিময়ে কাজে লাগাচ্ছেন এসআই মাহবুব। দীর্ঘদিন একই বিটে দায়িত্বপালনের কারণে নির্বাচনকেন্দ্রিক বাণিজ্য করার সুযোগ নিচ্ছেন এই এসআই।’

ওই প্রার্থী বলেন, ‘ভয় দেখিয়ে, আতংক সৃষ্টি করে এখন পুলিশ কোনো কাজ করে না। এই মানসিকতার কয়েকজনের কারণেই পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। তাই এক বিটে এত সময় কোনো এসআইকে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেওয়া উচিত নয়। এসব বিষয় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে আসা উচিত।’

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই মাহবুব বলেন, ‘আমরা সরকারি দায়িত্ব পালন করি। আমি রাজনৈতিক নেতা নই যে কারো পক্ষ নেবো। কারো পক্ষপাতিত্ব করার প্রশ্নই আসে না। আমি তো মাদক ব্যবসায়ী না। আমার ইশারায় কেন মাদক ব্যবসা হবে?’

জমিজমার বিরোধ নিয়ে ব্যস্ত থাকার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!