সাতকানিয়ার মাদ্রাসায় সুপারের স্বেচ্ছাচারে পড়ালেখা লাটে

বেতন বন্ধ শিক্ষকদের

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গা হাবিবুল উলুম ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষকদের বেতন বন্ধ দুই মাস ধরে। এতে ভেঙ্গে পড়েছে একাডেমিক শৃঙ্খলা। বিঘ্নিত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা। শিক্ষকরা যেমন অর্থ সংকটে পড়ে পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছে, তেমনি ছয় শতাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনও পড়েছে হুমকির মুখে। সদ্য অবসরে যাওয়া বিতর্কিত সুপার নুরুল আলম ফারুকীর স্বেচ্ছাচারিতা ও পদ দখলের রাখার অপচেষ্টার কারণে সৃষ্টি হয়েছে এ অচলাবস্থার— রয়েছে এমন অভিযোগ। মাদ্রাসা সূত্রে জানা যায়, পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গা হাবিবুল উলুম ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার নুরুল আলম ফারুকী অবসরে গেছেন ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর।

নিয়ম অনুযায়ী সুপার অবসরে যাওয়ার পর থেকে ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্ব পালন করার কথা সহকারী সুপারের। বিদায়ী সুপার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সহকারী সুপারের কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেবেন। পরবর্তীতে সহকারী সুপারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি সহকারী সুপারকে সুপার পদে পদায়ন করবে। অন্যথায় বিধি অনুযায়ী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে নতুন কাউকে সুপার পদে নিয়োগ দেবে— নিয়ম রয়েছে এমনই। অথচ এসবের কিছুই করা হয়নি।

জানা গেছে, দায়িত্ব পালনের সময় বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি আড়াল করার জন্য নুরুল আলম ফারুকী সুপার পদের দায়িত্ব ছাড়তে নারাজ। তিনি যে কোনো উপায়ে ওই দায়িত্বে থাকার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। নিজের কর্তৃত্ব ধরে রাখতে অনুগত এক জুনিয়র শিক্ষককে সুপার হিসেবে একাধিকবার দায়িত্ব দেওয়ার চেষ্টাও তিনি করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটিকে ম্যানেজ করে কিংবা জুনিয়র শিক্ষকদের সমর্থন নিয়ে ফারুকী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন— এমন অভিযোগ মিলেছে বিভিন্ন সূত্রে। এমনকি অফিস যেমন দখলে রেখেছেন, তেমনি হাজিরা খাতায়ও নিয়মিত সই করে যাচ্ছেন সুপার হিসেবে। যা শিক্ষার পরিবেশ মারাত্মক বিঘ্নিত করছে। এতে ভেঙ্গে পড়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক শৃঙ্খলাও। ফলে শিক্ষক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ।

জানা গেছে, সুপার নুরুল আলম ফারুকী অবসরে যাওয়ায় এবং নতুন কাউকে সুপারের দায়িত্ব না দেওয়ায় শিক্ষকদের বেতন ভাতার সরকারি অংশ ছাড় দিচ্ছে না জনতা ব্যাংক। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে দেওয়া এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাসের বেতন ছাড় দেয়নি ব্যাংক। কারণ নিয়ম অনুযায়ী এখন কোনো সুপার নেই ওই মাদ্রাসায়। অথচ নুরুল আলম ফারুকীর সই করা ডিসেম্বর ও জানুয়ারির বেতন শিটও পাঠানো হয়েছে ব্যাংকে। যা আইনগতভাবে অবৈধ ও নিয়মতান্ত্রিক নয়।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গা হাবিবুল উলুম ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সদ্য অবসরে যাওয়া সুপার নুরুল আলম ফারুকী। তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি আমার। সর্বময় ক্ষমতার মালিক কমিটি। কমিটি আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য। আরেকজন সুপার নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত আমি দায়িত্ব পালন করবো। নতুন সুপার নিয়োগের মাধ্যমে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হবে।’

এদিকে ২০১১ সালের ৬ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক পরিপত্রে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে— ‘বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক থাকা অবস্থায় তাকে ভিন্ন কোন শিক্ষককে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার অর্পণ করা যাবে না। সহকারী প্রধান শিক্ষকের পক্ষে কোন কারণে দায়িত্ব গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ অসদাচরণ বলে গণ্য হবে।’

জানতে চাইলে সহকারী সুপার মাওলানা আ স ম আবদুল মান্নান বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী মাদ্রাসায় এখন কোনো সুপার নেই। সহকারী সুপার হলেও আমাকে এখনও দায়িত্ব হস্তান্তর করেননি সদ্য অবসরে যাওয়া সুপার নুরুল আলম ফারুকী। অথচ তিনি এখনও মাদ্রাসায় নিয়মিত দাপ্তরিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। সুপার হিসেবেই সই করছেন শিক্ষক হাজিরা খাতায়।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি দায়িত্ব নেওয়া-না নেওয়ার বিষয় নয়। বিধি অনুযায়ী যদি আমি দায়িত্বপ্রাপ্ত হই, দায়িত্বভার না নেওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। কারণ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী অপারগতা প্রকাশ ও দায়িত্ব না নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

মাদ্রাসার টানাপোড়েনের মুখে এসব সীমাবদ্ধতার প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হয় পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গা হাবিবুল উলুম ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির দাতা সদস্য আবু তাহেরের সাথে। তবে তিনি এসব বিষয়ে বক্তব্য জানাতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, ‘এগুলা নিয়ে আমি অবগত নই। অন্য কারো সাথে কথা বলেন।’

এএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!