সাতকানিয়ার ঘটনার নেপথ্যে ইউপি ভোটের দলাদলি ও ৩০ লাখ টাকার চাঁদাবাজি

ড্রেজিংয়ে বাধা দিতে ২০০ লোক আনা হয়েছিল সাইফুল-মিন্টুর নেতৃত্বে

আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ঘিরে আধিপত্য বিস্তার করতেই চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার চরতী ইউনিয়নে কেশুয়া গ্রামে গোলাগুলির ঘটনার ঘটেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। পাশাপাশি সাঙ্গু নদী থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ড্রেজিং প্রকল্প থেকে চাঁদা না পেয়ে একটি পক্ষ এই ঘটনার নেপথ্যে দিয়েছে উস্কানি— এমন অভিযোগও মিলেছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টার দিকে সংঘটিত এই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছে ৭ জন। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ড্রেজার মেশিন, ড্রেজার বহনকারী গাড়ি এবং পাইপসহ বিভিন্ন সামগ্রীতে ভাঙচুর চালানো হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা মো. সবুর ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কায়সার নামে এক ব্যক্তি ড্রেজিং প্রকল্পের ঠিকাদারের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। সেই চাঁদা না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা সরকারি কাজে বাঁধা দেয়। তারা তুলাতলী এলাকার দুই দিক দিয়েই এসে ড্রেজিংয়ের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের উপর গুলি করে। আত্মরক্ষার জন্য প্রকল্পের শ্রমিকরা ধাওয়া দিলে তারা বিচ্ছিন্নভাবে দৌড় দেয়। এ সময় কায়সারের লোকজন নিজেদের ছোড়া ছড়া-গুলিতে নিজেরাই আহত হন।’

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজে দায়িত্বরত মো.আবছার বলেন, ‘সংঘবদ্ধ এই হামলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অন্তত ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’

স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় গিয়াস উদ্দীন খান মিন্টু, মহিউদ্দিন, সাইফুল, প্রদীপ, সোহেল, ফয়েজ আহমদ ও কায়সারসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে স্থানীয় রুহুল্লাহ চৌধুরীর দ্বন্দ্ব রয়েছে। রুহুল্লাহ চৌধুরী আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। তার বিরোধিতা করছেন গিয়াস উদ্দীন খান মিন্টু, ফয়েজ আহমদ ও কায়সাররা। এদিকে নদীর ড্রেজিং প্রকল্পের বালি উত্তোলনের পর সেগুলো রাখার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের অনুরোধে নিজেদের কিছু জমি ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছেন রুহুল্লাহ চৌধুরী। এসব কারণে স্থানীয়দের কাছে রুহুল্লাহর অবস্থান তৈরি হওয়ার বিষয়কে নিজেদের ‘রাজনীতি’র জন্য হুমকি মনে করছেন মিন্টু, ফয়েজ ও কায়সাররা— এমন অভিযোগ রুহুল্লাহ’র।

রুহুল্লাহ চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি ছিলাম না। কিন্তু পরে খবর পেয়ে এলাকায় এসে জানলাম কায়সার সওদাগররা ড্রেজিং প্রকল্পের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমাদের পারিবারিক জমি ব্যবহার করতে দিয়েছি সরকারি কাজে। এই জমিতে কৃষিকাজ হতো না। এটি আমাদের পারিবারিক জমি। ড্রেজিং প্রকল্পে সহযোগিতা করার ফলে আমার বিরুদ্ধে মিন্টু, কায়সার, ফয়েজরা ওঠেপড়ে লেগেছে। তারা চাঁদা চেয়েছিল ওই প্রকল্পের ঠিকাদারের কাছে। চাঁদা না পেয়ে তারা আজ ড্রেজিং প্রকল্পের ঠিকাদার, শ্রমিকদের ওপর ছড়া গুলি চালিয়েছে। এ সময় শ্রমিকরা আত্মরক্ষার্থে তাদের প্রতিহত করতে যায়। একপর্যায়ে তারা গুলিতে আহত হয়। চট্টগ্রাম মেডিকেলে গিয়ে কুচক্রী মহলটি আমার নামে সাংবাদিকদের কাছে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ড্রেজিং প্রকল্পের পাইপ এখনও স্থাপিত হয়নি। তারা এলাকায় রটিয়েছে, কৃষকের ফসলি জমির মাঝখান দিয়ে এই পাইপ নেওয়া হবে। অথচ পাইপ ফসলি জমির ওপর দিয়ে যাবে না। মিথ্যা রটিয়ে এলাকায় তারা অস্থিরতা তৈরি করতে চাচ্ছে। আমি সামনে ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে এলাকার উন্নয়ন করতে চাইছি। এ কারণে তারা এসব মিথ্যাচার করছে। আজকে যারা গণমাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে কথা বলেছে তারা সবাই আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদে প্রার্থী হতে চান।’

জানা গেছে, নদীর ড্রেজিং কাজে বাধা দেওয়ার খবর পেয়ে দুপুরে ঘটনাস্থলে ছুটে যান স্থানীয় সাংসদ প্রফেসর ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভী।

এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুই কিলোমিটার দূর থেকে চরতীর সাইফুল আর গিয়াস উদ্দীন খান মিন্টুর নেতৃত্বে ২০০ জনের মত লোক এসে সরকারি কাজে বাধা প্রদান করে। কয়েকদিন আগে মিন্টু এবং সাইফুল ড্রেজিং প্রকল্পের ঠিকাদারের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘আমি কষ্ট করে সরকার থেকে চরতীসহ সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার নদী নিষ্কাশনের জন্য ড্রেজিং কাজে ৫৭৭ কোটি টাকার প্রকল্প এনেছি। আর সেই প্রকল্পের কাজে চাঁদা দাবি করে সাইফুল আর মিন্টু দুঃসাহস দেখিয়েছে। আমি প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি যেন তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। মিন্টু আর সাইফুল বিভিন্ন মিডিয়ায় ভুল তথ্য দিয়ে উন্নয়নমূলক কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পায়ঁতারায় লিপ্ত।’

সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে স্থানীয় কিছু লোকের বনিবনা না হওয়ার ক্ষোভ থেকেই মূলত আজকের এই ঘটনা ঘটে। আমরা ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছি। দোষীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!