সাতকানিয়া আওয়ামী লীগে অস্থিরতা— বণিকের হাতে দল দুর্বল, তৃণমূলের ভরসা নদভীই

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দলটির মাথাব্যথা বরাবরই সাতকানিয়া সাংগঠনিক উপজেলা ঘিরে। ‘জামায়াতের আঁতুড়ঘর’ খ্যাত এই উপজেলায় প্রায় ১৪ বছর ধরে টানা সরকারে থাকা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক কাঠামোর ওপর এখনও থিতু হতে পারেনি।

অনেকে বলছেন, এই ছবিটাই সাতকানিয়া আওয়ামী লীগের প্রকৃত অবস্থা জানান দিচ্ছে। ১০ মার্চ (শুক্রবার) সাতকানিয়ার চিববাড়ীতে একটি কলেজের ভবন উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া। সেই অনুষ্ঠানের কাজ তদারকিতে আছেন মোতালেবের ভাই মাহমুদুল হক (ছবিতে সর্বডানে)। দলীয় নেতাকর্মীদের অনেকের অভিযোগ, মাহমুদুল হক জামায়াতের রোকন ছিলেন। আর উপজেলা সভাপতি চলছেন জামায়াতের প্রেসক্রিপশনে। তবে মোতালেব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, তার ভাই মূলত ব্যবসায়ী, জামায়াত নন।
অনেকে বলছেন, এই ছবিটাই সাতকানিয়া আওয়ামী লীগের প্রকৃত অবস্থা জানান দিচ্ছে। ১০ মার্চ (শুক্রবার) সাতকানিয়ার চিববাড়ীতে একটি কলেজের ভবন উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া। সেই অনুষ্ঠানের কাজ তদারকিতে আছেন মোতালেবের ভাই মাহমুদুল হক (ছবিতে সর্বডানে)। দলীয় নেতাকর্মীদের অনেকের অভিযোগ, মাহমুদুল হক জামায়াতের রোকন ছিলেন। আর উপজেলা সভাপতি চলছেন জামায়াতের প্রেসক্রিপশনে। তবে মোতালেব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, তার ভাই মূলত ব্যবসায়ী, জামায়াত নন।

তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিমত— দুর্বল নেতৃত্ব, উপজেলা পর্যায়ে দলের শীর্ষ নেতা বাছাইয়ে রাজনীতিকের বদলে ব্যবসায়ীকে প্রাধান্য দেওয়া, অন্তর্কোন্দলসহ নানা কারণে এই উপজেলায় আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে অনেকটাই দুর্বল অবস্থানে রয়েছে। গত ১৪ বছরে সংগঠন শক্ত করার কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের। বরং ইউনিয়নভিত্তিক পদ-পদবির ভাগবাটোয়ারাই ছিল চোখে পড়ার মত।

সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনে ২০১৪ সালের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী বিজয়ী হতে পারেননি। গুঞ্জন আছে, ২০১৪ সালের নির্বাচনে জামায়াত ঠেকাতে নৌকার মনোনয়ন নিয়ে প্রার্থী হওয়ার জন্য আগ্রহী কাউকে পাওয়া যায়নি ওই অঞ্চলের পুরোনো আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্য থেকে। শেষমেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড ভরসা রাখে আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর ওপর। মনোনয়ন দেওয়ার পর ইতিহাস তৈরি করে তিনিই প্রথমবারের মত এই আসনে নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করতে সক্ষম হন। পরবর্তীতে তিনিই হয়ে ওঠেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিভাবক।

সাংসদ হওয়ার পর নদভীর নেতৃত্বে সাতকানিয়ার ১৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় আওয়ামী লীগের ভাটা পড়ে যাওয়া রাজনীতি অনেকটাই গতি পায়। এই আসনে প্রথমবারের মত টানা দুইবার নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করে আনেন তিনি। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের (আইআইইউসি) মতো জামায়াতের দূর্গে হানা দিয়ে তিনি সেখানে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। পুরো দেশে আলোড়ন তোলে এই ঘটনা। ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও দায়ের করেছেন সাংসদ নদভী।

এদিকে রক্ষণশীল এলাকা হওয়ার পরও নারীদের আওয়ামী রাজনীতির মাঠে এনে সাংসদের স্ত্রী রিজিয়া রেজা চৌধুরী দেখিয়েছেন কৃতিত্ব। এর স্বীকৃতিও তিনি পেয়েছেন মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে।

জানা গেছে, ২০১৪ সালে ব্যবসায়ী এমএ মোতালেব সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মনোনীত হন। তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ, রাজনীতিবিদের বদলে ব্যবসায়ী সংগঠন পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ায় দলীয় কর্মকাণ্ডে পড়ে যায় ভাটা। জামায়াত অধ্যুষিত অঞ্চলটিতে দলের পরিধি বাড়ানোর উল্লেখযোগ্য কোনো উদ্যোগও নিতে দেখা যায়নি। বরং দলের অনেক নেতার বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদ-পদবি ভাগবাটোয়ারার অভিযোগ উঠেছে বারেবারেই।

তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জামায়াতের সঙ্গে হাত মিলিয়েই জয় পান এমএ মোতালেব। এমন বক্তব্যের সপক্ষে তার সমালোচকদের যুক্তি হলো, আগেরবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াত প্রার্থী দিয়েছিল। কিন্তু ‘রহস্যজনকভাবে’ ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোরের নির্বাচনে চেয়ারম্যানসহ কোনো পদে জামায়াতের কোনো প্রার্থী ছিল না। আওয়ামী লীগ ও জামায়াত—দুই দলের অনেক নেতাই স্বীকার করেছেন, সমঝোতার ভিত্তিতে মোতালেবকে জেতাতে জামায়াত প্রার্থী দেয়নি। তবে ওই সময় এমএ মোতালেব চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেছিলেন, ‘সমঝোতার কথাটি সঠিক নয়। বর্তমান চেয়ারম্যান জসিম সাহেব নির্বাচন কমিশন থেকে ফরম নিয়েছিলেন। কিন্তু জামায়াতের সিদ্ধান্তের কারণে জমা দেননি বলে শুনেছি। আরেকটি বিষয়, আওয়ামী লীগের প্রার্থী আমি হওয়াতেও নাকি স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে উনি আগ্রহী হননি। কারণ সারা সাতকানিয়ায় আমার একটা গ্রহণযোগ্যতা আছে।’

তবে সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ফয়েজ আহমদ লিটন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেছেন, ‘জামায়াত ইসলামীর ওপর ভর করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যদি রাজনীতি করেন, তাহলে আদর্শিক কর্মী গড়ে তোলা সম্ভব নয়। ৯ বছর পদে থেকে তিনি কোনো চমক দেখাতে পারেননি। ওনার হাতে মাঠের কোনো রাজনীতি নেই। এমএ মোতালেব জামায়াতের নায়েবে আমীর শামসুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ। তিনি জামায়াতের লোকজন নিয়েই উপজেলা পরিষদ সামলাচ্ছেন।’

ফয়েজ আহমদ লিটন অভিযোগ করে বলেন, ‘এমএ মোতালেবের আপন ভাই মাহমুদুল হক জামায়াতের রোকন। উনি জামায়াতের প্রেসক্রিপশনে চলছেন। বিভিন্ন কাজে মোতালেব সাহেব জামায়াতকে সম্পৃক্ত করছেন। ১০ মার্চ চিববাড়ী এমএ মোতালেব কলেজের ভবন উদ্বোধনে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া আসবেন। সে অনুষ্ঠানস্থলের কাজ তদারকি করছেন মাহমুদুল হক। যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মোতালেব সাহেব একজন পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী। বিভিন্ন কাজে তিনি ব্যস্ত থাকেন। দেশে-বিদেশে কাজ থাকে। তাই রাজনীতির মাঠে ময়দানে তেমন কাজ করতে পারেন না। সংগঠনের কাজে ওনার আরও সময় দিলে ভাল হতো।’

তবে সাংগঠনিক ধীরগতির অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ মোতালেব বলেন, ‘আমাদের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা হয়েছিল। কিন্তু মোছলেম ভাই মারা যাওয়ায় সম্মেলন পিছিয়েছে।’

তার ভাই মাহমুদুল হক জামায়াত নেতা ছিলেন না জানিয়ে মোতালেব বলেন, ‘আমার ভাই একজন ব্যবসায়ী। এমপি সাহেব আমার ভাইয়ের নামে এসব রটাচ্ছেন।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!