সাতকানিয়ায় ডলুর বন্ধ বালিমহালের হঠাৎ ইজারা, ভাঙন আতঙ্কে হাজারও পরিবার

বিলীন হবে শত শত একর কৃষিজমি

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ডলু বালি মহাল-৪ আবার ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। স্থানীয় জনমত উপেক্ষা করে প্রশাসনের হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা। তারা অবিলম্বে জনবিরোধী এ সিদ্ধান্তের পরিবর্তন ও বিতর্কিত বালি মহাল ইজারা প্রক্রিয়া দ্রুত বন্ধ চান। এ বিষয়ে একাধিকবার লিখিত আবেদন করা হয়েছে জেলা প্রশাসকের কাছে।

স্থানীয়দের দাবি, উপজেলা প্রশাসন সরেজমিন তদন্ত না করেই প্রভাবশালীদের চাপ কিংবা অর্থের কাছে নতি স্বীকার করে আবার ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
স্থানীয়দের দাবি, উপজেলা প্রশাসন সরেজমিন তদন্ত না করেই প্রভাবশালীদের চাপ কিংবা অর্থের কাছে নতি স্বীকার করে আবার ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাসুদ করিম বলেন, ‘আমরা অনেক বালিমহালের ইজারা বন্ধ রেখেছি। জেলা প্রশাসন কোন্ বালি মহাল ইজারা দেবে, কোন্ মহাল ইজারা দেবে না তা ঠিক করে না। উপজেলা প্রশাসনের সুপারিশের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন ইজারা প্রক্রিয়া শুরু এবং সম্পন্ন করে। তবু বিষয়টি নিয়ে যেহেতু আপত্তি ওঠেছে তা আমাদের বিবেচনায় থাকবে।’

ডলু নদীর দুই তীরে ব্যাপক ভাঙনের পর এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন গত বছর ডলু নদীর ৩ ও ৪ নম্বর মহালের ইজারা বাতিল করে। অথচ এখন আবার ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।
ডলু নদীর দুই তীরে ব্যাপক ভাঙনের পর এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন গত বছর ডলু নদীর ৩ ও ৪ নম্বর মহালের ইজারা বাতিল করে। অথচ এখন আবার ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।

স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, বিগত বছরগুলোতে ডলু নদীর ৩ ও ৪ নম্বর বালি মহাল ইজারার কারণে নদীর দুই তীরে ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এতে অনেকে বসত ভিটি ও ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। অসংখ্য পরিবার একমাত্র সহায়-সম্বল হারিয়ে পথে বসেছে। তাই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন গত বছর ডলু নদীর ৩ ও ৪ নম্বর মহালের ইজারা বাতিল করে। ওই সময় ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর স্থানীয় সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নিজামউদ্দীন নদভীর প্রচেষ্টায় জেলা প্রশাসন বালিমহাল দুটির ইজারা স্থগিত করে। কিন্তু হঠাৎ জেলা প্রশাসন ডলু নদীর বালি মহাল ৪ ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে অন্যান্য বালিমহালের সঙ্গে। তবে ৩ নম্বর বালি মহালের ইজারা বিজ্ঞপ্তি এবার প্রকাশ করা হয়নি।

তাদের অভিযোগ, ৪ নম্বর বালি মহাল ইজারা নেওয়ার জন্য স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র তৎপর। তারা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালি উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকার বালি বিক্রি করেছে। এর ফলে নদীর দুই পাড়ে ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের বাড়িঘর বিলীন হয়েছে। ভয়ে ওই প্রভাবশালী চক্রের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পায় না। তাদের বিরুদ্ধাচারণ করলেই বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়।

অথচ এলাকাবাসীর বাড়িঘর রক্ষায় শিল্পগ্রুপ কেএসআরএমের কর্ণধার মোহাম্মদ শাহজাহান পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গা এলাকায় নিজস্ব অর্থায়নে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছেন। বর্তমানে এটিও ঝুঁকির মুখে। এবার ডলু মহাল ৪ ইজারা দেওয়া হলে ভাঙনে এটিও বিলীন হতে পারে। এমন আশংকা স্থানীয়দের। তারা মনে করেন, উপজেলা প্রশাসন সরেজমিন তদন্ত না করেই প্রভাবশালীদের চাপ কিংবা অর্থের কাছে নতি স্বীকার করেছেন। না হয় গণবিরোধী এমন সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই নিতে পারে না উপজেলা প্রশাসন।

এদিকে নলুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমদ মিয়া ইজারা প্রক্রিয়া বন্ধের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। তিনি বলেন, স্থানীয় জনমত উপেক্ষা করে কেউ হঠকারী সিদ্ধান্ত নিলে তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আমি প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে নালিশ করব। বন্ধ বালি মহাল আবার ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়ার সাথে যারা জড়িত তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।

নলুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলীও ডলু নদীর ৪ নং বালি মহাল ইজারা বন্ধের জন্য লিখিত আবেদন করেছেন জেলা প্রশাসকের কাছে। ওই আবেদনে সুপরিশ করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নিজামউদ্দীন নদভী। আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমান সরকার ডলু ভাঙন রোধে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছে। এছাড়া বালি মহালের ইজারা নিয়ে পুরো এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিস্তার হবে।

তিনি বলেন, ডলুর বালি উত্তোলন ও বিক্রি নিয়ে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও প্রাণহানির আশংকা রয়েছে। অতীতে এমন ঘটনার নজির রয়েছে। অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের কারণে এলাকার হাজারও মানুষ ভাঙনে তাদের বাপ দাদার ভিটামাটি হারাবে। বিলীন হবে শত শত একর কৃষিজমি। তাই তিনি অনতিবিলম্বে জনস্বার্থে ডলুর ৪ নং বালি মহালের ইজার প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি জানান প্রশাসনের কাছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!