সাতকানিয়ায় এসিডে ঝলসে দিয়ে যুবককে হত্যার অভিযোগ (ভিডিও)

মৃত্যুর আগে ৫ জনের কথা বলে গেছেন

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নের মোহাম্মদ সাদেক পারিবারিক অভাব অনটনের কারণে সাতকানিয়া উপজেলার হাসমতের দোকান এলাকায় মাওয়া পলট্রি ফার্ম নামক দোকানে চাকরি করতেন।

গত ২৯ জুন রাত সাড়ে ১১টার দিকে সাতকানিয়ার কেরানীহাট থেকে পাওনা টাকা তুলে আসার সময় সাতকানিয়ার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হাসমতের দোকানের উত্তর পাশে মালেক মেম্বারের ব্রিকফিল্ড এলাকায় পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা ৯৫ হাজার ৮০০ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে তার শরীরে এসিড ঢেলে পালিয়ে যায়।

সাদেককে পথচারীরা উদ্ধার করে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গিয়ে আত্মীয়স্বজনদের খবর দেয়। সাদেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান চিকিৎসক।

গত সোমবার (৪ জুলাই) সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান সাদেক।

লোহাগাড়া উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নের (৯নং ওয়ার্ড) ইউপি সদস্য মোহাম্মদ পেয়ারু জানান, সাদেক এসিডদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল বলে জানিয়েছিল তার পরিবারের লোকজন। গতকাল সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়।

তিনি বলেন, নিতান্তই গরীব ঘরের সন্তান মোহাম্মদ সাদেক। পরিবারের হাল ধরতে ছোটকাল থেকেই চাকরি করত সে। তাকে হারিয়ে সদ্য বিবাহিত স্ত্রী ও পরিবারের লোকজনের কান্না কেউ থামাতে পারছে না।

নিহত মোহাম্মদ সাদেক (২৩) লোহাগাড়া উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নের দক্ষিণ সড়াইয়া বলীর জুম (৯নং ওয়ার্ড) এলাকার বজলুর রহমানের পুত্র।

নিহত সাদেকের বড় ভাই শাহজাহান জানান, পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় সাদেক ছোটকাল থেকেই চাকরি করতো। সর্বশেষ সাতকানিয়া উপজেলার হাসমতের দোকান এলাকায় মোহাম্মদ তৈয়বের মালিকানাধীন মাওয়া পোলট্রি চিক ফিড সেন্টার (মুরগির খাদ্য) নামের একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। প্রতিষ্ঠানের মালিক তৈয়বের বাড়ি উপজেলার কেওচিয়া ইউনিয়নের নয়াপাড়া এলাকায়। পারিবারিক জায়গা নিয়ে একই এলাকার নেজাম উদ্দীনের সঙ্গে তৈয়বের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল।

গত ২৬ জুন তৈয়ব ও নেজামের পরিবারের লোকজনের সাথে ঝগড়া হয়। ওইদিন সাদেক দুপুরে খাবার খাওয়ার জন্য তৈয়বের বাড়িতে যান। ঝগড়ার সময় সাদেক তার মালিক তৈয়বের পক্ষে কথা বলায় সাদেককেও দেখে নেওয়ার হুমকি দেন নেজামের পরিবারের লোকজন।

সাদেকের বড় ভাই শাহজাহান বলেন, ‘গত ২৬ জুন রাত সাড়ে ১১টার দিকে নেজাম ও পারভেজসহ অজ্ঞাত তিনজন মিলে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে এসিড নিক্ষেপ করে পালিয়ে যায় বলে মৃত্যুর আগে জানান সাদেক। সাদেকের স্বীকারোক্তির ভিডিও রেকর্ড সংরক্ষিত আছে আমাদের কাছে।’

তিন মাস আগে সাদেক বিয়ে করেন বলে জানান শাহজাহান। তিনি তার ভাই হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন।

এদিকে নিহত সাদেক যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন, সেই প্রতিষ্ঠানের মালিক মোহাম্মদ তৈয়ব মুঠোফোনে বলেন, ‘নেজামের সাথে আমার জায়গা নিয়ে বিরোধ ছিল। ২৬ জুন দুপুরে নেজামের পরিবারের লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে আমাকে মারার জন্য আমার বাড়িতে চলে আসে। এ সময় সাদেক আমার পক্ষ নিয়ে কথা বলায় তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় তারা। পরে তারা আমার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করে। ২৯ জুন কেরানিহাট কাঁচাবাজার থেকে আমদানি শেষ করে আসার পথে অভিযুক্তরা আমার ব্যবসার ৯৫ হাজার ৮০০ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে সাদেককে এসিড নিক্ষেপ করে পালিয়ে যায়। এরপর তার মৃত্যু হয়।’

সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তারেক মোহাম্মদ আবদুল হান্নান বলেন, ২৯ জুন রাতে সাদেক নামের এক যুবককে এসিড নিক্ষেপ করে বলে থানায় মৌখিকভাবে অবহিত করে তার পরিবারের লোকজন। প্রথমে তাদেরকে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেই। এর মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়।’

এ ঘটনায় নিহতের ভাই মো. শাহজাহান বাদী হয়ে নেজাম উদ্দিন ও মো. পারভেজ এবং অজ্ঞাত ৩-৪ জনকে আসামি করে সাতকানিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!