বিপিসির কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে কৃষি ব্যাংকের ৪ কোটি ৬৪ লাখ ৪৭২ টাকা আত্মসাৎ করার মামলায় ব্যাংকটির দুই কর্মকতা ও এক কর্মকর্তার স্ত্রীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। তাদের ১২ কোটি টাকার অর্থদন্ডও দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মুন্সী আব্দুল মজিদের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা মীর কাশেম। তিনি চন্দনাইশ কাঞ্চন নগর এলাকার সৈয়দ মেয়ার ছেলে। কৃষি ব্যাংক চট্টগ্রাম বায়েজিদ চা বোর্ড শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক শাহেদ হাসান ও তার স্ত্রী রেজিয়া সুলতানা।
দণ্ডপ্রাপ্ত শাহেদ কুমিল্লা কোতোয়ালী থানা এলাকার ঠাকুর পাড়া বাগানবাড়ি পান্থ নিবাসের মৃত মো. ইব্রাহিম মজুমদারের ছেলে।
তবে এই মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এ কে এম নাজিম উদ্দিন, শওকত হাসান প্রকাশ শামিম, মো. ইব্রাহিম নামে তিন আসামিকে খালাস দেওয়া হয়।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৩ সালের ২৬ জুন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের নামে ভূয়া এফডিআর খুলে আসামিরা। এই একাউন্টের চেক বই নিজেদের কাছে রেখে একই বছরের ১৭ জুলাই পর্যন্ত বিপিসির কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ১০টি চেকের মাধ্যমে ৪ কোটি ৬৪ লাখ ৪৭২ টাকা আত্মসাৎ করে।
এ ঘটনায় কৃষি ব্যাংক বায়েজিদ চা বোর্ড শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক আকিকুর রহমান চৌধুরী বাদি হয়ে পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এতে আসামি করা হয়, শাহেদ হাসান, মীর কাশেম ও এম আনোয়ারুল আজিমকে। এ মামলা তদন্ত করে সিআইডি’র পুলিশ পরিদর্শক মো. আব্দুল খালেক সাতজনের নাম উল্লেখ করে আদালতে চার্জশিট দেন। এতে সাক্ষী রাখা হয় ৩৫ জনকে। আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন ১৫ জন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের পিপি কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু বলেন, ‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের টাকা আত্মসাৎ এর মামলায় তিনজনকে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। রায় ঘোষণার সময় কোনো আসামী উপস্থিত ছিলেন না, তাই ওনাদের নামে ওয়ারেন্ট জারি করা হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, আসামিদের মধ্যে কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা মীর কাশেমকে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড একই সঙ্গে অন্য আরেকটি ধারায় তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদন্ড এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরাধ আইনের ৫(২) ধারায় এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক চা বোর্ড শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক শাহেদ হাসানকে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, ১০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, অন্য আরেকটি ধারায় পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরাধ আইনের ধারায় দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
একইভাবে সরকারী টাকা আত্মসাৎ করায় স্ত্রী রেজিয়া সুলতানাকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, এবং অন্য আরেকটি ধারায় তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, পাঁচ লাখ টাকার অর্থদণ্ড অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
বিএস/এমএফও