সাগরে ৪০ বোটে ডাকাতি বিপুল মাছ ও মালামাল লুট

শাহেদ ইমরান মিজান, কক্সবাজার :

সাগরে আবার বেপরোয়া হয়ে উঠেছে জল ডাকাতরা। সংঘবদ্ধ জলডাকাতরা এক রাতেই অন্তত ৪০ টি মাছধরার বোটে ডাকাতি চালিয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার ভোর রাত পর্যন্ত এই ডাকাতি চলে। ডাকাতরা ওইসব বোটের জেলেদের বেদম মারধর করে মাছ, জাল, মেশিন, মোবাইলসহ অন্যান্য মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। ডাকাতির শিকার বোটগুলো প্রায়ই মহেশখালী ও কক্সবাজার শহরের।

সাগরে ৪০ বোটে ডাকাতি বিপুল মাছ ও মালামাল লুট 1

গতকাল রাত ৯টা পর্যন্ত ডাকাতির শিকার কয়েকটি বোট কূলে ফিরতে সক্ষম হলেও তখনও সাগরের ভাসছিল অধিকাংশ বোট। জেলা বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহামদ এই তথ্য জানান।

মোস্তাক আহামদ জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘নাডা’র বিপদ সংকেট কেটে যাওয়ার পর সোমবার কক্সবাজার জেলার সব বোট মাছ ধরতে সাগরে যায়। মাছ ধরারত অবস্থায় বৃহস্পতিবার সংঘবদ্ধ জলডাকাত দল মাছধরারত বোটের উপর হামলে পড়ে। ডাকাতরা কক্সবাজার উপকূলে মাছধরারত প্রায় ৪০ টি বোটে ডাকাতি চালিয়ে মাছসহ অন্তত দু’কোটি টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। এসময় ডাকাতরা অন্তত তিন শতাধিক জেলেকে বেদম প্রহার করেছে। প্রহারে অনেক জেলে গুরুতর আহত হয়েছে। ডাকাতির শিকার পাঁচটি মতো বোট কূলে ফিরেছে। তবে বিকল থাকায় অধিকাংশ বোট এখনো (শুক্রবার রাত নয়টা) সাগরে ভাসছে।

তিনি জানান, কুলে ফিরে আসতে না পারায় শেষ সময় পর্যন্ত ডাকাতির শিকার বোটগুলোর তালিকা করা যায়নি। তবে কয়েকটি বোটের পরিচয় পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে কক্সবাজার শহরের নতুন বাহারছড়ার আবদুল হালিম জনির মালিকানাধীন এফবি মায়ের দোয়া, একই এলাকার ওসমান গণি টুলুর মালিকানাধীন এফবি নিশান, মহেশখালী পৌরসভার ঘোনাপাড়ার আবদুল জলিলের মালিকানাধীন এফবি আল্লাহর দান, একই এলাকার আনছার উল্লাহর মালিকানাধীন এফবি মায়ের দোয়া, গোরকঘাটার জালাল আহামদ এর মালিকানাধীন এফবি মায়ের দোয়া।

জেলেদের বরাত দিয়ে মোস্তাক আহামদ আরো জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘নাডা’র পর সাগরে জেলেদের জালে প্রচুর মাছ ধরা পড়ে। মাছ ধরা পড়ায় লোভাতুর হয়ে ডাকাতরা হামলে পড়ে। সোনাদিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, বাঁশখালী ও চট্টগ্রামের দুর্ধর্ষ জলডাকাতদের নেতৃত্বে এই ডাকাতি হয়েছে। ১১০ অশ্বশক্তি সম্পন্ন দু’টি বড় বোট নিয়ে ডাকাতি চালানো হয়েছে।

ডাকাতির শিকার এফবি মায়ের দোয়ার মালিক আবদুল হালিম জনি জানান, তার মালিকানাধীন এই বোটের অন্তত চার লাখ টাকার মাছ, দু’লাখ টাকা মূল্যের জাল, জেলেদের ব্যবহৃত পাঁচটি মোবাইল ফোন এবং ছয়’শ লিটার তেল, মেশিনের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ এবং চাল লুট করে নিয়ে গেছে ডাকাতরা। এসময় ডাকাতদের বেদম প্রহারে বোটের ১০ জেলে আহত হয়েছে। মেশিনের যন্ত্রাংশ লুট করে নিয়ে যাওয়ায় বিকল থাকায় বোটটি সাগরে ভাসতে থাকে। পরে অন্য একটি বোটের মোবাইল দিয়ে বিষয়টি জানান জেলেরা। কূল থেকে একটি বোট গিয়ে এফবি মায়ের দোয়াকে কূলে নিয়ে আসা হয়েছে। আহতদের জেলেদের কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এফবি মায়ের দোয়ার জেলে ছৈয়দ করিম বলেন, ‘ভোর তিনটায় মাছধরারত অবস্থায় ১১০ অশ্বশক্তির একটি বড় বোট নিয়ে ৩০/৪০ জনের একদল ডাকাত আমাদের উপর হামলে পড়ে। ডাকাতরা বন্দুক দিয়ে সব জেলেকে বেদম প্রহার করে। পরে আমাদের বেঁধে রেখে মাছসহ বোটের সব মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।’

ডাকাতির শিকার এফবি নিশানের মালিক ওসমান গণি টুলু জানান, ডাকাতরা তার বোট থেকে দেড় লাখ টাকার মাছ, মেশিনের যন্ত্রাংশ, জালসহ অন্তত দু’লাখ টাকার মালামাল নিয়ে গেছে। ডাকাতরা যন্ত্রাংশ লুট করায় বোটটি বিকল হয়ে শুক্রবার রাত নয়টা পর্যন্ত সাগরে ভাসছিল। বোটটি কূলে ফিরিয়ে আনতে অন্য একটি বোট পাঠানো হয়েছে।

জেলা বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহামদ বলেন, ‘ডাকাতি শিকার সব বোটের মেশিনের যন্ত্রাংশ লুট করে নিয়ে যায় ডাকাতরা। এতে বোটগুলো বিকল হয়ে সাগরে ভাসতে থাকে। শুক্রবার রাত পর্যন্ত পাঁচটি বোট কূলে ফিরতে সক্ষম হলেও বাকি গুলো ফিরতে পারেনি। তবে ভাসমান বোটগুলোকে ফিরিয়ে আনতে অন্যবোট পাঠানো হয়েছে।’ জেলা বোট মালিক সমিতির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান শুক্রবার রাতে বলেন, ‘জরুরী কাজে আমি চট্টগ্রামে আছি। তবে বোটে গণহারের দুর্ধর্ষ ডাকাতির খবর আমাকে জানানো হয়েছে।

দুর্ধর্ষ জলডাকাতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় সাগরে ডাকাতি থামছে না। আমরা সাগরে ডাকাতি রোধে প্রশাসনের কাছে যাবো। প্রয়োজনে আবার রাজপথে আন্দোলনে নামবো।’

 

এ এস / জি এম এম / আর এস পি :::

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!