গিয়াস উদ্দিন ভুলু ,টেকনাফ : রাখাইন রাজ্যে বর্বরতা ও নির্যাতনের ভয়ে পালিয়ে আসা শত শত রোহিঙ্গা গভীর বঙ্গোপসাগরে ভাসছে। গত ২৫ আগস্ট থেকে এপর্যন্ত প্রায় দেড় লক্ষ রোহিঙ্গা সাগর ও নদী অতিক্রম করে বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করেছে। এই সমস্ত রোহিঙ্গাদের টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে সাহায্য করে যাচ্ছে স্থানীয় দালাল চক্র। বেশি টাকার লোভে পড়ে এ দালালরা প্রতিদিন মাছ ধরা ট্রলার বোঝাই করে গভীর বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে আসছে।
এদিকে কয়েকদিনের ব্যবধানে রোহিঙ্গা পাচারকারী দালালদের অবহেলার কারণে বেশ কয়েকটি ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় সাগর ও নদীর উপকূলীয় এলাকা গুলো থেকে ৬৪ জন রোহিঙ্গা নারী,পুরুষ ও শিশুদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সে ধারাবাহিতায় ৬ সেপ্টেম্বর নাফনদী ও সাগর উপকূল থেকে আরো ৯ টি লাশ উদ্ধার করা হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। এদের মধ্যে নারী,পুরুষ ও শিশু রয়েছে।
কোষ্টগার্ড শাহপরী ষ্টেশন কমান্ডার লে. ফয়সাল জানান, ৬ সেপ্টেম্বর বুধবার সকালে শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়ায় নাফনদীতে ৩টি রোহিঙ্গার মৃতদেহ ভেসে আসে। এরপর বাজার পাড়া জেটি ঘাটে ১টি, বঙ্গোপসাগরের দক্ষিন পাড়ায় ১টি ও মাঝের পাড়ায় ১টিসহ ৬টি মৃতদেহের ভেসে আসে বলে স্থানীয় সূত্রে খবর পায়। এতে ২ জন নারী ও ৪ জন শিশু বলে জানায়। এ সব মৃত দেহের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় পুলিশ ও বিজিবিকে খবর দেওয়া হয়েছে বলে জানায়।
সাবরাং সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য সেনোয়ারা বেগম জানান, গত মঙ্গলবার রাত ও বুধবার ভোর রাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসতে গিয়ে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপের নাফনদী ও সাগরের বদরমোকাম উপকূলে কয়েকটি নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে। এ সময় নৌকা ডুবিতে কিছু রোহিঙ্গা সাঁতরে তীরে উঠলেও অনেক রোহিঙ্গা নিখোঁজ রয়েছে বলে জানা গেছে।
তিনি আরও জানায়, সাঁতারে তীরে উঠা কয়েকজন রোহিঙ্গারা বলেছেন সাগরের মোহনা অতিক্রম করার সময় নৌকা উল্টে যায়। প্রতি নৌকায় ২৫ থেকে ৩০ জন যাত্রী ছিল। এ সময় কয়েকটি নৌকা ডুবির ঘটে।
অপর দিকে হোয়াইক্যং পুলিশ ফাড়ির ইনর্চাজ উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহির উদ্দীন খান জানান, একইদিন সকালে হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভী বাজার নাফনদী সীমান্তের ২ নং সুইচ গেইট এলাকা থেকে এক শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে শিশুটির হাত পা কাটা রয়েছে বলে জানিয়েছেন।
অন্যদিকে টেকনাফ সদরের ইউপি সদস্য শাহ আলম জানান, একইদিন সকালে টেকনাফ সদরের দক্ষিন লম্বরীর সৈকত এলাকা থেকে ২ জন শিশু ও বৃদ্ধ পুরুষের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মৃতদেহ উদ্ধারে বিষয়টি থানা পুলিশকে খবর দেওয়া হয়েছে।
টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনর্চাজ (ওসি) মো. মাইন উদ্দিন খান জানান, রোহিঙ্গাবাহী নৌকা ডুবির ঘটনায় শাহপরীর দ্বীপ এলাকায় ৬টি, টেকনাফ সদরের লম্বরী এলাকা থেকে ২টি ও হ্নীলা মৌলভী বাজার এলাকায় ১টি রোহিঙ্গার মৃতদেহের খবর পাওয়া গেছে। এ সব মৃতদেহ উদ্ধারে ঘটনাস্থলে পুলিশের পৃথক টিম পাঠানো হয়েছে। তবে মৃতদেহ গুলো উদ্ধার করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানায়।
অর্থলোভী দালালদেরকে ধরতে অভিযান চলছে
আটক হওয়ারপর ৮ দালালকে ভ্রাম্যমান আদালতের সাজা
গিয়াস উদ্দিন ভুলু,টেকনাফ
টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা পাচারে সহায়তাকারীর দালালচক্রের সদস্যদেরকে ধরতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সদস্যদের অভিযান অব্যহত রয়েছে। ৬ সেপ্টেম্বর বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৮ জন দালালকে আটক করতে সক্ষম হয়। এদের মধ্যে টেকনাফ থানা পুলিশ সদস্যরা আটক করে ৪ দালালকে। আটককৃত দালালরা হচ্ছে, টেকনাফ পৌরসভা কে কে পাড়া এলাকার মৃত বাচা মিয়ার দুই ছেলে মৌলভী ফিরোজ আলম ও ফরিদ আলম। সাবরাং ইউনিয়নের ফতেহআলী পাড়ার আব্দুল আলীর ছেলে সবুজ মিয়া,কুড়াবুইজ্জা পাড়া এলাকার অলি আহমদের ছেলে আব্দুর রহিম।
অপরদিকে একইদিন ২ বিজিবির সদস্যরা অভিযান চালিয়ে সীমান্তের বিভিন্ন এলাকা থেকে রোহিঙ্গা পাচার করার দায়ে আরো ৪ দালালকে আটক করে। এরা হচ্ছে, উখিয়া কুতুপালং এলাকার হাফেজ আব্দুল্লাহর ছেলে মোঃ আয়াছ, একই এলাকার মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে হাফেজ আহমদ,টেকনাফ সদরের বরইতলী এলাকার মৃত মোঃ ছিদ্দিকের ছেলে নুর হাসান,পৌরসভা নাইট্যং পাড়া এলাকার ওমর ফারুকের ছেলে সাজু।
পরে আটক দালালদেরকে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়ে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
এ ব্যাপারে টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাইন উদ্দীন খান অভিযানের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, অসহায় রোহিঙ্গাদেরকে জিন্মি করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া দালাল ধরতে আমাদের অব্যাহত থাকবে। কারণ এই দালালদেরকে আটক না করলে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সংখ্যা দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাবে।