এস এম আরোজ ফারুক, কক্সবাজার ॥
ইলিশসহ অন্যান্য প্রজাতির মাছের প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে সাগর ও নদীতে মাছধরার ওপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে গত বুধবার।তাই বৃহস্পতিবার রাত থেকে মাছ ধরতে সাগরে যাওয়ার উৎসবে মেতেছে কক্সবাজার এলাকার জেলেরা।
কক্সবাজার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারিঘাটসহ জেলার অন্যান্য ঘাটে জেলেদের মাঝে ফিরে এসেছে প্রাণ চাঞ্চল্যতা। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হয়েছে মাছ ধরা কার্যক্রম।
কক্সবাজারের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ইতমধ্যেই সাগরে মাছ ধরতে চলে গেছে বেশিরভাগ ফিশিং ট্রলার, আরো কিছু যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলে বহদ্দাররা। কেউ জাল মেরামত করছেন, কেউবা ট্রলার মেরামত করছেন। যারা এখনো সাগরে যাইনি তারা এসব মেরামতি কাজ শেষে ট্রলার নিয়ে সাগরের উদ্দেশ্যে রওয়না দেবেন।
কক্সবাজার জেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলায় প্রায় পাঁচ হাজার এবং সারাদেশে প্রায় ২৫ হাজার মাছ ধরার ট্রলার রয়েছে। যার মধ্যে বিহিন্দি জালের বোট সমুদ্র উপকূলের কাছাকাছি এবং ইলিশ জালের বোট গভীর সাগরে মাছ ধরে। আর এসব ট্রলারের প্রতিটিতে থাকে ১৬ থেকে ২২ জন করে জেলে। বর্তমানে এসব ট্রলারের জেলেরা এখন অনেকেই মাছ ধরার উদ্দেশ্যে সাগরে রওনা হয়েছে। যার মধ্যে কক্সবাজারেও লক্ষাধিক জেলে রয়েছে।
কক্সবাজার ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ জানান, টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা বুধবার শেষ হয়েছে। ফলে জেলার অধিকাংশ ট্রলার বৃহস্পতিবার থেকে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু সাগর উত্তাল হওয়াতে কিছু ট্রলার সাগরে গেলেও বাকি কিছু ট্রলার কিছুদিন পরে যাবে।
যারা প্রস্তুতি শেষ করতে পারবেন না, তারা যাবেন আরো দুয়েকদিন পর। এ কারণে এখন শহর ও জেলার অন্যান্য এলাকার ঘাটসমূহে চলছে জেলেদের কর্মব্যস্ত সময়। আর প্রায় ৩সপ্তাহ পর জেলার মৎস অবতর কেন্দ্রটিতে জেলে ও ট্রলার মালিকদের আনাগোনায় প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।
স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, কক্সবাজারের উপকূলবর্তী সমুদ্রে মাছ ধরার বিহিন্দি জাল বা ‘খুঁড়ি জালের’ ট্রলারগুলো দিনে গিয়ে দিনেই মাছ ধরে ফিরে আসে। মূলত এসব বোটগুলো সাগর থেকে এক প্রকার চিংড়ি ধরে। যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘করত্যা ইছা’ বলা হয়। সে সঙ্গে এই ট্রলারের জালে আরো ধরা পড়ে রূপচাঁন্দা, ছুরি, ফাইস্যা, মাইট্টা ও লইট্টাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। তবে এসব ট্রলারেও ছোট ছোট ইলিশ ধরা পড়ে।
আবার এক সপ্তাহ বা পক্ষকালের রসদ নিয়ে সাগরে যাওয়া ট্রলারগুলো ইলিশসহ অন্যান্য বড় প্রজাতির মাছগুলো ধরে থাকে। যা বাজারে বেশি দামে বিক্রি হয়।
বড়বাজারের মৎস ব্যবসায়ী জিয়া উদ্দিন বলেন, সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় দীর্ঘদিন ধরে বাজারে মাছের সংকট ছিল তাই সতেজ মাছ না থাকায় আমাদের ফ্রীজে থাকা মাছ বিক্রি করতে হয়েছে তাও বেশি দামে। আশা করছি দুয়েকদিনের মধ্যে ট্রলারগুলো ফিরে আসলে মাছের দাম কমে যাবে এবং ক্রেতারা সাগরের সতেজ মাছ পাবে।
কক্সবাজার জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে গত ২২ দিন সাগরে যেতে পারেনি জেলেরা। তাই নিষেধাজ্ঞা শেষে এখন থেকে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়াতে কোন বাধা নেই তাই জেলেরা ছুটছে সাগরে। জেলায় প্রায় ৪১ হাজার নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। যারা বৃহস্পতিবার থেকে আবারো সাগরে মৎস্য আহরণ করতে যাওয়া শুরু করেছে।
এ এস / জি এম এম / আর এস পি :::