সাগরের নিরাপত্তায় ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর ঐক্য থাকতে হবে- কক্সবাজারে রাষ্ট্রপতি

সাগরের নিরাপত্তায় ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর ঐক্য থাকতে হবে- কক্সবাজারে রাষ্ট্রপতি 1কক্সবাজার প্রতিনিধি : একটি রাষ্ট্রের একার পক্ষে সমুদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয় মন্তব্য করে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

সুনামি ও সাইক্লোনের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেছেন, একটি রাষ্ট্রের একার পক্ষে এ ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলা করা সম্ভব নয়।

“একাধিক ঘটনা আমাদের দেখিয়েছে, এ ধরনের পরিস্থিতিতে সমুদ্রে জীবনের নিরাপত্তা আঞ্চলিক দায়িত্ব হয়ে পড়ে। যৌথ উদ্যোগ ছাড়া আমরা আমাদের নাবিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারব না। এজন্য আমাদের একযোগে কাজ করতে হবে।”

সোমবার কক্সবাজারে ইন্ডিয়ান ওশান নেভাল সিম্পোজিয়ামের (আইওএনএস) ‘মাল্টিল্যাটারাল মেরিটাইম সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ এক্সসারসাইজের (ইমসারেক্স) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন রাষ্ট্রপতি।

ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সমুদ্র বিষয়ক সহযোগিতা বাড়াতে কাজ করে আইওএনএস। ২২টি দেশ এর সদস্য। এছাড়া নয়টি দেশ পর্যবেক্ষক হিসেবে রয়েছে।

সদস্য দেশগুলোর নৌ-বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদানেও আইওএনএস কাজ করে। বাংলাদেশের নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নিজামউদ্দীন আহমেদ এ জোটের বর্তমান চেয়ারম্যান।

ইমসারেক্সের এবারের মহড়ায় অংশ নিচ্ছে মোট ২৩টি দেশ। আগামী ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজারে এই মহড়া চলবে।

অনুষ্ঠানে ‘ব্লু ইকোনোমির’ গুরুত্ব তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলোকে মেরিটাইম ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে একযোগে কাজ করতে হবে।

“আমরা সবাই সাম্প্রতিক সময়ে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন আছি। সাগরের সম্পদ উত্তোলন, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই অঞ্চলের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।”

এই সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশ সরকার সমুদ্র খাতের উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে বলে অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন সশ্রস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক আবদুল হামিদ।

তিনি বলেন, সাগরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলেই সমৃদ্ধ এই মেরিটাইম ইকোনোমির উন্নতি হতে পারে। সমুদ্র নিরাপত্তার বিভিন্ন দিক দিন দিন জটিল হয়ে যাচ্ছে। এ কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর উন্নয়ন ও সক্ষমতা বাড়াতেও কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।

সাগরে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ‘আস্থার প্রতীক’ হিসেবে গড়ে উঠেছে মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি বলেন, সরকারের ব্লু ইকোনমি এজেন্ডা বাস্তবায়নে নৌবাহিনী সাগরে ‘অতন্দ্র অভিভাবকের মত’ কাজ করছে।

আইওএনএস এর কাজের প্রশংসা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, “আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, মতপার্থক্য দূর করতে মতামতের স্বচ্ছ ও উন্মুক্ত আদান-প্রদানই একমাত্র পথ। স্থলভাগের সীমান্ত দেশগুলোকে আলাদা করে রাখলেও সাগরের বন্ধুত্বের বন্ধন আমাদের একসাথে রাখতে পারে। আইওএনএস শুধুমাত্র ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নয়, বরং এশিয়া-প্যাসেফিক ও সংলগ্ন অঞ্চলের আশার প্রতীক।”

ইমসারেক্স-২০১৭ এ বাংলাদেশের ৩২টি বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধ জাহাজ ও নৌযান এবং চীন, ভারত, ইরান ও ইন্দোনেশিয়ার জাহাজ অংশ নিচ্ছে।

অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশের নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নিজামউদ্দীন আহমেদ, ভারতীয় নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল সুনীল লানবা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

পরে রাষ্ট্রপতি হেলিকপ্টারে করে মহড়া দেখেন এবং এ উপলক্ষে আয়োজিত বিচ কার্নিভালের উদ্বোধন করেন।

স্থানীয় সংসদ সদস্য, সেনা ও বিমান বাহিনী প্রধান, পদস্থ বেসামরিক-সামরিক কর্মকর্তারাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!