সাগরিকা থেকে বড়পোলে বায়ুদূষণ করে জরিমানা গুণলো চসিকের ঠিকাদার

নাখোশ চসিক বলছে, ‘এটা লজিক্যাল না’

চট্টগ্রাম নগরীর সাগরিকা থেকে বড়পোল পর্যন্ত নির্মাণাধীন সড়কের সম্প্রসারণ কাজ করতে গিয়ে ক্রমান্বয়ে বায়ু দূষণ করে যাচ্ছে চসিকের আওতাধীন প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাহের ব্রাদার্স লিমিটেড। এই বায়ু দূষণের সূচক ভয়াবহ রকমের। যা স্বাস্থ্যঝুঁকির মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। যেখানে একিউআই মাত্রা ৩০১ থেকে ৫০০ পিপিএম মাত্রার বাতাসকে ‘চরম পর্যায়ের অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সেখানে ওই সড়কের সাসপেনডেড পার্টিকুলার ম্যাটারের (এসপিএম) মানমাত্রা ২ হাজার ৫৫০ পিপিএম। যা ভয়াবহ দূষণের নির্দেশক। বায়ু দূষণের এই ভয়াবহ সূচকের কারণে এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) পরিবেশ অধিদপ্তর মহানগরের পরিচালক মোহাম্মদ নূরুল্লাহ নূরী এই জরিমানার আদেশ দেন।

জানা যায়, পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা নির্মাণাধীন সড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে বাতাসের আদর্শ মানমাত্রার চেয়ে ১২ গুণ বেশি বায়ু দূষণের সূচক নির্ণয় করে। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের পরিচালক সহকারী প্রকৌশলী সৈয়দ আনোয়ার জাহান এবং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে তলব করা হয়।

এ প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তর মহানগরের পরিচালক মোহাম্মদ নূরুল্লাহ নূরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে সহকারী প্রকৌশলী সৈয়দ আনোয়ার জাহান এবং তাহের ব্রাদার্সের প্রতিনিধি সৈয়দ নূরের উপস্থিতিতে বায়ূ দূষণের অভিযোগের ওপর শুনানি হয়। বায়ুদূষণ প্রতিরোধের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ দেখাতে পারেননি এবং বায়ূ দূষণের দায় স্বীকার করে নেন। শুনানির পর এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘একইসঙ্গে একমাসের মধ্যে কাজ শেষ করার সময় বেঁধে দেওয়ার পাশাপাশি দিনে কমপক্ষে তিনবার নিয়মিত বিরতিতে পানি ছিটানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

তবে জরিমানার বিষয়ে আপত্তি তুলেছেন চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহমেদ। তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘তারা শুনানিতে ডেকে একতরফা ডিসিশন দিয়েছে। আজকে যেটা দিয়েছে তা অন্তত লজিক্যাল হয় নি। অন্য কারও হলে এটা ঠিক হতো। কিন্তু তাহের ব্রাদার্স এসব করে না। তারাই দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান যারা সব মেনে কাজ করে। এখন তারা বাতাসের পিপিএম হিসেব করছে। এটা এই কাজ কেন, সারাদেশের যেখানে মাপবেন সেখানে এমন হবেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তর যে নোটিশ দেয় তাতে তো দু’পক্ষের বক্তব্য শুনতে হবে। তারা একপক্ষই জরিমানা করে দেয়। আমার কথা হচ্ছে, অপরপক্ষের কথা শুনবে না তারা কি বলতে চায়। যদি হিসেব করেন, আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি চট্টগ্রাম শহরের যে জায়গায় মাপা হবে সেখানে পিপিএম মাত্রা এমন পাবে। যেখানে কাজ চলছে না সেখানেও এমন পাওয়া যাবে। আজকেরটা কোনোভাবেই লজিক্যাল না। এভাবে তো কেউ কাজ করবে না।’

প্রসঙ্গত, মহানগরের বাতাসে ভাসমান বস্তুকণার মধ্যে যেগুলোর ব্যাস ১০ মাইক্রোমিটার সেসব বস্তুকণাকে পার্টিকুলার ম্যাটার (পিএম)-১০ এবং যেসব বস্তুকণার ব্যাস দুই দশমিক পাঁচ মাইক্রোমিটার সেগুলোকে পার্টিকুলার ম্যাটার (পিএম)-২ দশমিক ৫। এই দুই ভাগে ভাগ করে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হয়। আর এ দুই শ্রেণির বস্তুকণা বাতাসের প্রতি ঘনমিটারে কত মাইক্রোগ্রাম আছে তা পরিমাপ করা হয় পার্টস পার মিলিয়ন বা পিপিএম এককে।

পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, বাতাসের একিউআই মাত্রা শূন্য থেকে ৫০ পিপিএম হলে তাকে ‘সবুজ বা স্বাস্থ্যকর’ বায়ু বলা হয়। একিউআই মাত্রা ৫১ থেকে ১০০ পিপিএম হলে তাকে ‘মধ্যম’ বায়ু বলা হয়। যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়। মাত্রা ১০১ থেকে ১৫০ পিপিএম হলে সে বায়ুকে ‘সর্তকতামূলক’ বায়ু বলা হয়। যেটা মানুষের জন্য মৃদু ক্ষতিকর। একিউআই মাত্রা ১৫১ থেকে ২০০ পিপিএম হলে সে বায়ুকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ শ্রেণিতে ফেলা হয়। ২০১ থেকে ৩০০ পিপিএম একিউআই মাত্রার বাতাসকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ শ্রেণিতে এবং ৩০১ থেকে ৫০০ পিপিএম মাত্রার বাতাসকে ‘চরম পর্যায়ের অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

এসআর/এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!