সাগরপাড়ের ধাক্কা চট্টগ্রাম নগর পুলিশেও!

আটক আসামি নিয়ে পুলিশই তটস্থ থাকছে

ওসি প্রদীপ কুমার দাশের কীর্তিকলাপ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রচারের পাশাপাশি উচ্চ আদালতে রিট করে যে পরিবর্তন আনা যায়নি, সেনাবাহিনীর এক সাবেক মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সঙ্গেই সেই পরিবর্তন এখন চোখের সামনে। কক্সবাজার সদরে গণপিটুনিতে আহত ‘ইয়াবা ব্যবসায়ী’ পুলিশী হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ার পর ওসিকে করা হলো ক্লোজ। ওই ঘটনার জেরে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপির) সিভিল টিমগুলোর আটক করা কোনো আসামি এখন আর নিজেদের হেফাজতে রাখছে না। থানার হাজতখানায় রাখতে গেলেও পড়তে হচ্ছে বিড়ম্বনায়।

প্রদীপ কুমার দাশ কক্সবাজারের মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) থাকাকালে লবণ চাষী আবদুস সাত্তারকে ক্রসফায়ারের নামে হত্যার দায়ে থানায় মামলা না নেওয়ায় উচ্চ আদালতে রিট করা হয়েছিল। উচ্চ আদালতে দায়ের করা সেই রিটের বিপরীতে আপিল বিভাগে আরেক রিট করে আগের রিটের কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ করার পাশাপাশি ওই পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে হেনস্তা করার অভিযোগ আছে প্রদীপ দাশ ও তার সহযোগী কয়েকজন পুলিশের বিরুদ্ধে।

১০ আগস্ট দিনের বেলায় ইয়াবা বিক্রির সময় কক্সবাজার সদরে হাতেনাতে ধরা পড়ে স্থানীয়দের পিটুনিতে আহত হন নবী হোসেন নামের এক ইয়াবা ব্যবসায়ী। পরে ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় লোকজন তাকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়। ওইদিন বিকেলে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে আবার পুলিশের হাতে তুলে দেন। মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) সকালে পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল ৮টার দিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে মারা যান নবী হোসেন। আর এই ঘটনায় ক্লোজ করা হয়েছে থানার ওসি সৈয়দ আবু মো. শাহাজান কবিরকে।

ওসি শাহাজান কবিরকে ক্লোজ করার পর বদলে গেছে ‘প্রতিবেশী’ চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) চিত্রও। থানা পুলিশ কিংবা গোয়েন্দা পুলিশের টিমগুলো কোনো আসামি গ্রেপ্তার করার পর যত দ্রুত সম্ভব আদালতে সোপর্দের চেষ্টায় থাকছে। আদালতে সোপর্দ করার সময় পার হয়ে গেলে নগর পুলিশের বিভিন্ন সিভিল টিম তাদের আটক করা আসামিদের নিজেদের জিম্মায় না রেখে থানা হাজতে রাখছে। আবার থানা হাজতে রাখতে গেলেও তারা নানান প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন। থানার ডিউটি অফিসার আসামির সাথে কথা বলে নিশ্চিত হচ্ছেন আটক হওয়ার পর তাকে শারীরিকভাবে কোন হেনস্তা করা হয়েছে কিনা। হেনস্তার অভিযোগ পেলে সেই আসামি নিজেদের হেফাজতে নিতে অনাগ্রহের কথা নিশ্চিত করেছেন সিএমপির একাধিক ওসি।

এড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে সিএমপির আলোচিত এক ওসি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কক্সবাজার সদরে গণপিটুনিতে ইয়াবা ব্যবসায়ী মারা গেল। সেখানে পুলিশের কী দায়? অথচ ক্লোজ করা হলো আমাদের সহকর্মীকে। আমরা আমাদের থানায় নিজেদের আসামি ছাড়া অন্য আসামির দায় নেবো না।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক ওসি বলেন, ‘আটক করা কোন আসামিকে একটা থাপ্পড়ও যদি আটককারী কর্মকর্তা দেন, তবে সেই আসামি আমাদের হাজতখানায় না রাখতে আমি আমার ডিউটি অফিসারকে বলে দিয়েছি। আসামি রাখতে আসলে আমরা সেটা নিশ্চিত হয়েই আমাদের হাজতখানায় রাখছি।’

প্রসঙ্গত, ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ৯টায় কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়কে পুলিশের গুলিতে সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান নিহত হন। এই ঘটনায় টেকনাফ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামি করে নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদি হয়ে কক্সবাজার আদালতে হত্যামামলা দায়ের করেন। র‌্যাব ওই ঘটনার তদন্ত করছে। পুলিশের চাকরি থেকে ওসি প্রদীপ দাশ, পরিদর্শক লিয়াকতসহ অভিযুক্তরা সাময়িক বহিস্কৃত হয়েছেন।

এই ঘটনার পর পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পেশাদারিত্ব বজায় রেখে সবার সাথে সদাচরণ দেখানোর কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশের ভাবমূর্তি রক্ষায় তৎপর রয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। তারই অংশ হিসেবে বরগুনার বামনার বসিরহাটে ওসির হাতে লাঞ্ছনার শিকার হয়ে খবরের শিরোনাম হওয়া সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) এবং সেই ওসিকেও (ক্লোজ) করা হয়েছে।

পুলিশের উচ্চপদস্থ একাধিক কর্মকর্তা জানান, পুলিশে ব্যাপক পরিবর্তন দৃশ্যমান হবে। পুলিশ আরো গণমুখী হয়ে সেবার পরিধি বৃদ্ধি করবে।

এফএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!