সাগরপাড়ি দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেলে এসে অবহেলায় মারা গেলেন বৃদ্ধা

ওষুধ-ইনজেকশন রোগীর স্বজনদেরই দিতে বললেন চমেকের ডাক্তার ও নার্সরা

‘পিসির অবস্থা খুব খারাপ হওয়ায় চিকিৎসার জন্য সাগর পাড়ি দিয়ে সন্দ্বীপ থেকে চট্টগ্রাম নিয়ে এলাম। এখানে চট্টগ্রাম মেডিকেল ভর্তি করালাম। অথচ দুইদিন মেডিকেলে ভর্তি করে রাখলেও পুরা একদিন উনাকে ডাক্তাররা দেখেনইনি। এই সেই টেস্ট দিচ্ছে। টেস্টের কপি দেখে ওষুধ লিখে দিচ্ছে। পরদিন সকালে রাউন্ডে এসে দেখেছে। আবার ডাক্তারদের দেওয়া স্লিপের ওষুধ ইনজেকশন এনে নার্সদের দিলে তারা বলছে— আপনারাই দিয়ে দেন। আমাদেরই যদি দিতে হবে তাহলে আর সাগর পাড়ি দিয়ে চট্টগ্রাম আসা কেন? হাসপাতালেরই বা কাজ কী?’

ডায়াবেটিস ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে সন্দ্বীপে থেকে ‘উন্নত চিকিৎসা’র জন্য চট্টগ্রাম আসা ভানু রানীর ভাতিজা স্বপন এভাবেই তার অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে।

তিনি বলেন, ‘ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়ায় তিনি জ্ঞান হারিয়েছিলেন। উনাকে কোনভাবে খাওয়ানো যাচ্ছিল না। তখন আমরা ডাক্তারকে বললাম নলের মাধ্যমে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা যায় কিনা। ডাক্তার বললেন এটা নার্সদের বলতে, তারা করে দিবে। নার্সদের কাছে গেলে তারা বলে ডাক্তার করে দেবে। পরে আমরা বাইরে থেকে ডাক্তার এনে পিসিকে খাওয়ানোর জন্য নল লাগানোর ব্যবস্থা করি।’

রোববার (৫ জুলাই) দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফ্লু কর্নারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ৫০ বছর বয়সী ভানু রানী। শনিবার (৪ জুলাই) গুরুতর অবস্থায় তাকে দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপ থেকে চট্টগ্রাম নিয়ে আসেন তার স্বজনরা। এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় সন্দ্বীপ মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছিল তাকে।

করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেলেও বেশকিছু পত্রিকায় তাকে করোনা আক্রান্ত বলে সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। সেই সংবাদ নিয়েও খানিকটা বিরক্ত স্বপন। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রাম মেডিকেলে ঢুকতেই সাংবাদিকরা আমাদের ছবি তুললেন। শুধু জিজ্ঞেস করলেন কোন্ জায়গা থেকে এসেছি। কাল পত্রিকায় দেখলাম উনাকে করোনা আক্রান্ত লিখেছেন। অথচ উনার করোনা টেস্টই হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই গ্রামে আমাদের নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু তিনি করোনা আক্রান্ত ছিলেন না। এটা শুধু শুধু একটা হয়রানি।’

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!