সাকার হাতে ফুল দিয়ে বিএনপিতে, নেতা এখন আওয়ামী লীগের!

যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসিতে ঝোলা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর হাতে ফুল দিয়ে তিনি যোগ দিয়েছিলেন বিএনপিতে। সেই নেতাকেই চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে আনার তোড়জোড় চলছে— অভিযোগ নেতাকর্মীদের। ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির সমর্থন নিয়ে একটি ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে নির্বাচনও করেছিলেন হাজী গোলাম মোস্তফা নামের ওই নেতা। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগ না দিয়েও তিনি হাটহাজারী উপজেলা আওয়ামী লীগে পদ পেয়েছিলেন বলেও অভিযোগ হাটহাজারী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের।

জানা গেছে, হাজী গোলাম মোস্তফা একসময় বাকশালের ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনের আগে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর হাতে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগ দেন তিনি। সেবারের চসিক নির্বাচনে ৪ নং চান্দগাঁও ওয়ার্ড থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন তিনি। ওই সময়ে পত্রিকায় প্রচার হওয়া হাজী গোলাম মোস্তফার একটি বিজ্ঞাপনের ছবি চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে এসেছে। যেখানে হাজী গোলাম মোস্তফাকে বিএনপির একক সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

জানা গেছে, পরে আর আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগদান না করলেও হাটহাজারী উপজেলা আওয়ামী লীগের গত কমিটিতে তাকে সদস্য করা হয়। এবার হাজী মোস্তফাকে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগে পদ দেওয়ার তোড়জোড় চলছে বলে জানিয়েছেন হাটহাজারী আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাটহাজারীর একজন আওয়ামী লীগ নেতা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর হাতে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগ দেওয়া গোলাম মোস্তফাকে জেলা আওয়ামী লীগের নেতা বানানোর একটা প্রক্রিয়া চলছে। এই বিষয়টা মেনে নেওয়া যায় না। তিনি একসময় বাকশাল করতেন। শুধু এই বিবেচনায় প্রভাবশালী একজন নেতা তাকে খুব নগ্নভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন। এটা উচিত নয়। কদিন আগে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ৮২ সালে যদি বাকশাল করে দলে ভাঙ্গন না ধরাতো তাহলে সেই ৮০ এর দশকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যেত। দলের শীর্ষ নেতা যখন বাকশালের বিষয়ে নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বলছেন তখন চট্টগ্রাম উত্তর জেলায় এর ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। এসব খুবই নিন্দনীয়।’

এই বিষয়ে জানতে চাইলে হাটহাজারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন নোমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটি সত্য যে গোলাম মোস্তফা বিএনপিতে যোগ দিয়েছিলেন। বিএনপির প্রার্থী হিসেবে কাউন্সিলর নির্বাচনও করেছিলেন। কিন্তু পরে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগ দেননি। আমাদের গত কমিটিতে উনাকে সদস্য করা হয়েছিল।’

বিএনপি থেকে গোলাম মোস্তফার উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নোমান বলেন, ‘আসলে বিষয়টি আমাদের কাছে গোপন করা হয়েছিল। কমিটি ঘোষণার আগ পর্যন্ত আমরা এটি জানতাম না। পরে কমিটি প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পর আমরা জেনেছিলাম। তখন আমাদের কিছুই করার ছিল না। সে সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সভাপতি এমএ সালাম ভাইয়ের ইচ্ছাতেই তিনি নেতা হয়েছেন। সালাম ভাইয়ের সাথে উনার ভাল সম্পর্ক। সিনিয়র নেতারা কোন সিদ্ধান্ত নিলে আমাদের কী করার থাকে? শুনেছি এখন উনাকে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতেও রাখা হচ্ছে। যদি এটা হয়ে থাকে তাহলে দুঃখজনক ছাড়া কিছুই বলার নেই। তিনি তো উপজেলা আওয়ামী লীগেও সময় দিতেন না। ব্যক্তিগতভাবে সালাম ভাইকে সময় দেন। আমাদের ৪০-৫০টা সভা হয়েছে। তিনি ২-৩ টা সভায় এসেছেন মাত্র। এখন তো দলের কাজ করার চেয়ে বড় নেতাদের ম্যানেজ করে রাজনীতির পদ পাওয়া সহজ।’

এই বিষয়ে জানতে চাইলে হাজী গোলাম মোস্তফা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি ২০০৫ সাল থেকে হাটহাজারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলাম। কখনোই বিএনপিতে যোগ দেইনি। ২০১০ সালে সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করেছি। তবে সেটি তো স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন। কোন দলীয় নির্বাচন নয়। এখানে দলীয় সমর্থনের কথা আসবে কেন?’

বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে প্রচারিত বিজ্ঞাপনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এসব আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে কেউ করেছে। এই বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে সক্রিয় না থাকার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘সভার রেজুলেশন দেখলেই সেটা বোঝা যাবে আমি সক্রিয় ছিলাম কিনা। আমি ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়। জাতীয় ছাত্রলীগের জেলা কমিটির প্রচার সম্পাদক ছিলাম, কুয়াইশ কলেজের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম।’

এই বিষয়ে কথা বলতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালামকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!