সাংবাদিক ডেকে ক্ষমা চাইলেন বিদায়ী সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম
একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে আমার স্বপ্ন ছিল সংসদ সদস্য হওয়া। কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার হাতে চট্টগ্রামে উন্নয়নের দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলেন। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান হিসেবে যেদিন প্রথম আমি চেয়ারে বসেছিলাম সেদিন হাত তুলে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলাম নতুন জায়গায় যাতে সফলতা অর্জন করি। আল্লাহ আমার সেই দোয়া কবুল করেছেন। আমার হাত দিয়ে গত ১০ বছরে চট্টগ্রামে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে।
সিডিএ বিদায়ী চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম চলমান উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে সাংবদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন। শনিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে নগরীর একটি হোটেলে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আবদুচ ছালাম বলেন, ২০০৯ সালের ২৩ এপ্রিল দুই বছর মেয়াদে সিডিএ’র চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলাম। তখন আমি কল্পনাও করিনি টানা দশ বছর দায়িত্ব পালন করে যাবো । চট্টগ্রামের এতসব উন্নয়ন আমার হাত দিয়ে হবে এটি আমার কল্পনার বাইরে ছিল।
ছয় মেয়াদে দশ বছর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমি চেষ্টা করেছিলাম চট্টগ্রামকে উচ্চ আসনে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সে যাত্রায় আমি সফল হয়েছি।
ছালাম বলেন, উন্নয়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটি শেষ করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। তবে গত ১০ বছরে চট্টগ্রামে যে উন্নয়ন হয়েছে তা একটি ইতিহাস। দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমে আমি দুই বছর মেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নিই। ধীরে ধীরে ওই খণ্ডিত পরিকল্পনা রূপ নেয় মহাপরিকল্পনায়। সেই পরিকল্পনার অনেকটা বাস্তবায়িত হয়েছে। বাকিগুলো বাস্তবায়নের পথে।
সিডিএর বিদায়ী চেয়ারম্যান বলেন, জলাবদ্ধতা, খাল খনন এগুলো বাস্তবায়নের কোনো অভিজ্ঞতা সিডিএর ছিল না। যেটি আমি চাইনি তবে মনে মনে অনুভব করেছিলাম সেই কাজটি আমাকে করতে হয়েছে। শুরুতে আমি অবকাঠামো উন্নয়নের দিকে নজর দিয়েছি। আমি মনে করেছি বন্দরবিহীন চট্টগ্রাম মূল্যহীন। তাই বন্দরকে ঘিরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিকল্পনা হাতে নিই। সেজন্য চট্টগ্রামের ফিডার রোডগুলো বড় করতে শুরু করলাম। চট্টগ্রামকে যানজটমুক্ত করতে পাঁচটি নতুন রোড নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে। সম্পূর্ণ নতুন করে তৈরি করা হয়েছে ৪৩ কিলোমিটার রাস্তা। এছাড়া পুরাতন সড়কের ১০০ কিলোমিটার সম্প্রসারণ করা হয়েছে।
আবদুচ ছালাম বলেন, গার্মেন্টস খাতের রপ্তানির ৪০ শতাংশ যেতো চট্টগ্রাম থেকে। চট্টগ্রামের দেশ গার্মেন্টস দিয়েই এই শিল্পের যাত্রা শুরু। অথচ গার্মেন্টস খাতের মোট রপ্তানির হার ৪০ ভাগ থেকে নেমে এসেছে ১০ ভাগে। এটি শুধুমাত্র অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারনে হয়েছে। ঢাকা থেকে বিমানে চট্টগ্রামে ৪৫ মিনিটে চলে আসা গেলেও বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রাম শহর আসতে লাগে দুই থেকে তিন ঘণ্টা। এসব কারনে বিদেশি বায়াররা নিরুৎসাহিত হচ্ছে। এসব সংকট নিরসনে নেওয়া হয় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে গার্মেন্টস শিল্প আবারো মাথা তুলে দাঁড়াবে।
সিডিএ চেয়ারম্যান বলেন, চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে ১০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। সিডিএ, সিটি কর্পোরেশন, সেনাবাহিনী এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে । যারমধ্যে শুধুমাত্র সিডিএ বাস্তবায়ন করছে ৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে চট্টগ্রাম। এছাড়া সিডিএ এবং বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে চট্টগ্রামে ৪১ টি স্লুইস গেট নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলেছে। হয়তো এই বর্ষায় জলাবদ্ধতা সম্পূর্ণভাবে নিরসন করা সম্ভব নয় তবে আগামী তিন বছরের মধ্যে জলাবদ্ধতা পরিপূর্ণভাবে রোধ করা সম্ভব হবে।
আবদুচ ছালাম বলেন, আমি চেয়েছিলাম রিং রোড। কিন্তু হয়ে গেল কর্ণফুলী টানেল। সেই সাথে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য হয়েছে বিশ্বমানের। চট্টগ্রামে এতসব উন্নয়ন হয়েছে চট্টলদরদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে। বাংলাদেশ শেখ হাসিনার মতো আর কোনো চট্টল দরদী প্রধানমন্ত্রী আসবে কি-না আমার জানা নেই।
আবদুচ ছালাম বলেন, যে কোনো উন্নয়ন কাজে সততা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নতুন চেয়ারম্যানের কাছেও সততা বিদ্যমান আছে। আমি বিশ্বাস করি তিনি মেগা প্রকল্পগুলো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে ডলফিন ভাইকে নিয়োগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে ভুল করেননি সেটি প্রমাণিত হয়েছে। তিনি আবারও একজন সৎ ব্যক্তিকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। আমি তাকে সহযোগিতা করে যাব ।
আগামীর ভাবনা সম্পর্কে আবদুচ ছালাম বলেন, আমি যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন স্বপ্ন দেখে যাবো। যখন যে দায়িত্ব পাই তখন সেই দায়িত্ব সততা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করে যাবো। যে কেউ চাইলেই পদ পাওয়া যায় না এজন্য দরকার ম্যান্ডেট এবং সরকারি সিদ্ধান্ত। আমি নিজেকে আমার নেত্রীর সুযোগের অপেক্ষায় রাখলাম।
নিজের কোনো ব্যর্থতা আছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেউ নিজের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে না। আমার জীবনের ডায়েরিতে ব্যর্থতা নামক কোনো শব্দ নেই।
মতবিনিময়ের শেষদিকে সাংবাদিকদের উদ্দেশে আবদুচ ছালাম বলেন, ‘জেনে না জেনে আপনাদের হয়তো অনেক কষ্ট দিয়েছি। হাতজোড় করে বলছি, আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। আপনারা আমার সব কর্মকাণ্ড ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।’
মতবিনিময় সভায় উপস্থিতি ছিলেন সিডিএ পরিচালনা পরিষদ সদস্য জসিম উদ্দিন শাহ, কে বি এম শাহজাহান, গিয়াস উদ্দিন, হাসান মুরাদ বিপ্লব, এম আর আজিম, রুমানা নাসরিনসহ সিডিএ নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিক প্রতিনিধিবৃন্দ।