সর্বশেষ/ ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব ঠেকাতে তৈরি চট্টগ্রাম, বন্দরে অ্যালার্ট ৪

মহাবিপদ কাছাকাছি। ঘূর্ণিঝড় বুলবুল প্রবল শক্তিতে ছুটছে উপকূলের দিকে। বুলবুলের প্রলয় ঠেকাতে চট্টগ্রাম প্রস্তুত থাকলেও এটি ৯১’এর ঘূর্ণিঝড়ের মতই বিধ্বংসী হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। তবে আগাম প্রস্তুতি থাকায় ক্ষয়ক্ষতির মাত্র কমবে এমনটা আশা করছে দুর্যোগ গবেষকরা।

শনিবার (৯ নভেম্বর) সকাল থেকে চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর সতর্কতা সংকেত ৯ নম্বর দেওয়া হলেও, উপকূলীয় মানুষ সকাল থেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে যেতে চাইছিল না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করার পরও বাড়িঘর ছেড়ে যেতে চায়নি কেউ। এদিকে উপকূলের আরও কাছে এগিয়ে এসেছে এই ঘূর্ণিঝড়। সন্ধ্যার পর বাংলাদেরশের উপকূলীয় অঞ্চলের দিকে ‘বুলবুল’ যতই এগিয়ে আসছে সাধারণ মানুষ ততই ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

দুর্যোগ মোকাবেলায় চট্টগ্রামে জেলা প্রশাসন, সরকারি সেবা সংস্থা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নৌবাহিনীসহ বিভিন্ন বিভাগ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। ইতোমধ্যে নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে চট্টগ্রামে তিনটি জাহাজ বানৌজা শাহজালাল, শাহ পরান ও অতন্দ্র দ্রুততম সময়ে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় ক্ষতিগ্রস্থ উপকূলীয় এলাকায় ত্রাণসামগ্রী নেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

চট্টগ্রামের ৬টি উপকূলীয় উপজেলার লোকজনকে বাড়িঘর ছেড়ে যেতে মাইকিং করছে প্রশাসন। বাসিন্দাদের জোর করে সরানোর উদ্যোগও প্রশাসনের আছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। উপকূলীয় এলাকা বিশেষ করে সন্দ্বীপ, বাঁশখালী, আনোয়ারা, কর্ণফুলী, সীতাকুণ্ড, মিরসরাই উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে সরে যেতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো মাইকিং চলছে।

ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ মোকাবেলায় চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের পক্ষ হতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) নুরেআলম মিনা জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে এক জরুরি সভায় মিলিত হন। সেখানে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড়ে আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের উদ্ধার ও সর্বসাধারণের জানমাল রক্ষার জন্য জেলা পুলিশের সদস্যরা তৎপর থাকবে। এ লক্ষ্যে চট্টগ্রাম জেলার সকল থানায় রেসকিউ টিম, স্পেশাল মোবাইল টিম, স্ট্যান্ডবাই ফোর্স ও অ্যাম্বুলেন্সসহ যানবাহনসমূহ সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ মোকাবেলায় সকল পুলিশ সদস্যের ছুটি বাতিল করে স্ব-স্ব কর্মস্থলে থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাৎক্ষণিক যোগাযোগের জন্য জেলা পুলিশ কর্তৃক কন্ট্রোল রুম, সকল থানায় ইমার্জেন্সি সাব-কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। নম্বরগুলো হচ্ছে— ০১৭৬৯-৬৯৪৫২৭, ০১৭৫৭-০০১১১৭, ০৩১-৭২৬৮৬৭।

ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে ফায়ার সার্ভিস টিম। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ২৮টি ইউনিট প্রস্তুত রাখা হয়েছে। চট্টগ্রামের ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক জসিম উদ্দিন জানান, রিজার্ভ ও ভলান্টিয়ারসহ ১০টি রেসকিউ গাড়ি উপকূলে পাঠানো হয়েছে। তারা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা লোকজনকে সরানোর চেষ্টা করছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ সকালে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহা বিপদসংকেত দেখাতে বলার পরপরই চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে নিজস্ব সর্বোচ্চ সতর্কতা সংকেত ‘অ্যালার্ট-৪’ জারি করা হয়েছে। এই সতর্কতা জারির পর বন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। মহা বিপদসংকেত ৮, ৯ ও ১০ হলে বন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা বা ‘অ্যালার্ট-৪’ জারি করা হয়। তখন বন্দরের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি ১৪ ঘন্টার জন্য শাহ আমানত বিমান বন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়।জেটি, যন্ত্রপাতি ও পণ্যের সুরক্ষার জন্য ১৯৯২ সাল থেকে এই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবিলায় চট্টগ্রাম জেলা ও বিভিন্ন উপজেলায় ২৮৪টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। উপজেলার প্রত্যেক হাসপাতালে জরুরি বিভাগ খোলা রাখা হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সূত্রমতে, দুর্যোগে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অধিদপ্তর থেকে বরাদ্দকৃত নগদ ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা, ৩৪৯ মেট্রিক টন জিআর চাল, ৬৮১ বান্ডেল ঢেউটিন, ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার এবং ৫০০ তাঁবু প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ৪৭৯টি আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও ২ হাজার ২৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১ হাজার ২৫০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এইচটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!