সরাইপাড়ার চারতলা ভবনে করোনা ঢোকার হিসাব মিলছে না

কোয়ারেন্টাইনে যাওয়া কাউন্সিলর গিয়েছেন চসিকের সভায়ও

চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থানার সরাইপাড়ায় যে নারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন বেডে মারা গেছেন তিনি আগের দিন (রোববার) রাত ১০টায় নাটকীয়ভাবে ভর্তি হয়েছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পরের দিন সকালে সেখান থেকে তাকে জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। স্থানীয় কাউন্সিলর মোর্শেদ আক্তার চৌধুরী নিজের গাড়িতে করে তাকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছিলেন। এই ঘটনায় ওই নারীর বাড়ি ও স্থানীয় কাউন্সিলরের বাড়িসহ মোট ৪টি বাড়ি লকডাউন করেছে পাহাড়তলী থানা পুলিশ। আবার কাউন্সিলর মোর্শেদ পরদিন দুপুরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কার্যালয়ে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে অন্যান্য কাউন্সিলরদের সঙ্গে যোগ দেন।

করোনায় মারা যাওয়া নারীকে নিজের গাড়িতে করে চট্টগ্রাম মেডিকেল পৌঁছে দেওয়া কথা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানিয়েছেন মোর্শেদ আকতার চৌধুরী। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘আমার পাশেই একটা ৪ তলা বিল্ডিংয়ে উনারা থাকেন। রাত ১২টার দিকে আমাকে উনার ছেলে কল দিয়ে বললেন তার মা স্ট্রোক করছে। মেডিকেল নিতে গাড়ি পাচ্ছে না। তখন আমি মানবিক কারণে নিজের গাড়ি নিয়ে গিয়ে উনাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল পৌঁছে দিয়ে আসি। এরপর আর তারা আমার সাথে যোগাযোগ করেনি। আমিও খবর নিইনি। একটু আগে শুনলাম তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।’

সোমবার (১৩ এপ্রিল) মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দেন করোনা রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া কাউন্সিলর মোর্শেদ আকতার চৌধুরী।
সোমবার (১৩ এপ্রিল) মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দেন করোনা রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া কাউন্সিলর মোর্শেদ আকতার চৌধুরী।

নিজে পুরোপুরি প্রোটেকশন মেনটেইন করে তাদের পৌঁছে দিয়েছেন বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি প্রোটেকশন নিয়েই তাদের হেল্প করেছি। তবুও আমি এখন থেকে বের হব না। বাসাতেই থাকবো।’

এদিকে রাত ১০টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পর সকাল পর্যন্ত সেখানে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ২৪ নাম্বার বেডে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। ওয়ার্ডে দায়িত্বরত ডাক্তার ও নার্সরা ওই মহিলাকে প্রাথমিক চিকিৎসাও দিয়েছিলেন। পরে করোনার উপসর্গ দেখে তারা রোগীকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল নেওয়ার পরামর্শ দেন।

পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইনুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা এর মধ্যে ৪টি বাড়ি লকডাউন করেছি। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সাথেও আমাদের কথা হয়েছে। উনার বাড়িও আমরা লকডাউন করেছি।’

কিভাবে এই নারী করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারেন— সেই বিষয়ে জানতে চাইলে মোর্শেদ আকতার চৌধুরী বলেন, এটা আমিও ভাবছি। উনি তো ঘর থেকেই বের হতেন না। উনার স্বামী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী, তিনিও বের হন না। দুই ছেলের একজন চাকরি করেন। আরেকজন দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। তবে তারা লকডাউনের শুরু থেকেই বের হয়নি বলে আমি জানি।’

জানা গেছে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ওই নারী সরাইপাড়ার কাজীর দিঘি এলাকার কার্টন ফ্যাক্টরি এলাকার পাশে চার তলা একটি ভবনের চতুর্থ তলায় বসবাস করতেন। তার স্বামী ও দুই ছেলে ছাড়াও ওই পরিবারে রয়েছেন বড় ছেলের গর্ভবতী স্ত্রীও। তবে পরিবারের সদস্যদের দাবি সরকারি ছুটির শুরু থেকে তারা সবাই বাসাতেই ছিলেন। ছুটি ঘোষণার দিন বাজার সদাই করে ঘরে ঢোকার পর আর বের হননি তারা।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!