সরতে হলো ছলিমুল্লাহকে, নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার নুতন মুহতামিম কাসেমী

চট্টগ্রামের নাজিরহাট মাদ্রাসার মুহতামিম শায়খুল হাদিস শাহ মোহাম্মদ মারা যাওয়ার পর তার পদে মাওলানা ছলিমুল্লাহকে নিয়োগ দিয়েছিলেন হেফাজতের তৎকালীন আমির আল্লামা শফী। কিন্তু সেটি হেফাজতের সাবেক শীর্ষ নেতা আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীসহ মাদ্রাসার একটি অংশ মেনে নেয়নি। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে ছলিমুল্লাহ নিজেকে ‘মুহতামিম’ ঘোষণা দিলে এই নিয়ে বিরোধ ছড়িয়ে পড়ে মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে। হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মতো ঘটনাও। পরে স্থানীয় সাংসদ নজিবুলবশর মাইজভান্ডারি ও হেফাজতের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী যৌথসংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন ২৮ অক্টোবরের শূরা বৈঠকে মুহতামিম নিয়োগ দেয়া হবে। শূরা বৈঠকে শেষ সলিমুল্লাহকে হটিয়ে শেষ হাসি হাসলেন মুহতামিম পদ নিয়ে লড়াইয়ে থাকা মাওলানা হাবিবুর রহমান কাসেমী। সেই সাথে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার করা হয় মাওলানা ছলিমুল্লাহকে।

বুধবারের (২৮ অক্টোবর) শূরা বৈঠকে নতুন মোহতামিমের পাশাপাশি নায়েবে মোহতামিম করা হয় মাওলানা ইয়াহয়াকে। মাদ্রাসাটির মুঈনে মুহতামিমের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছ্র মাওলানা ইসমাইলকে। এদিন মাদ্রাসায় সকাল ১১টা থেকে শুরু হয় এ শূরা বৈঠক। বৈঠকে নাজিরহাট মাদ্রাসার মুতাওয়াল্লি করা হয় আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে। শিক্ষা সচিব করা হয় হাবিবুল্লাহ নদভীকে।

ঢাকার খীলগাও মাদ্রাসার মুহতামিম নুরুল ইসলাম জিহাদী শূরার বৈঠক শেষে নির্বাচিতদের নাম ঘোষণা করেন। শূরার বৈঠকে উপস্তিত ছিলেন পটিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম আবদুল হালিম বোখারী, জিরি মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা খোবাইব, অলি খাঁ মসজিদের সাবেক খতিব মাওলানা আনোয়ার, খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী মাওলানা ওমর ফারুক, মেখল মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা নোমান ফয়েজী, হাটহাজারী মাদ্রাসার মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী, বাবুনগর মাদ্রাসার মুহতামিম মহিবুল্লাহ বাবুনগরী, ওবাইদিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম সালাউদ্দিন, ঢাকার বসুন্ধরা মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আরশাদ রহমান, খীলগাঁও মাদ্রাসার মুহতামিম নুরুল ইসলাম জিহাদী, তালিমুদ্দিন মাদ্রাসার মুহতামিম হাফেজ কাসেম, নাজিরহাট মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত মুহতামিম হাবিবুর রহমান কাসেমী, ফতেপুর মাদ্রাসার মুহতামিম মাহমুদুল হাসান।

তবে শুরা সদস্য চারিয়া মাদ্রাসার মাওলানা আবদুল্লাহ, হাটহাজারী মাদ্রাসার প্যানেল মুহতামিম মুফতি শেখ আহমেদ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না।

শূরা বৈঠকের সভায় মাওলানা ছলিমুল্লাহসহ মোট ১৩ জন বহিস্কার করা হয়েছে। বহিস্কৃত বাকি শিক্ষকরা হলেন মাওলানা সালাহ উদ্দীন, মুফতি হাশেম, মাওলানা মিজান, মাওলানা নুরুল আলম নছরি, মাওলানা মাহফুজুর রহমান, হাফেজ ইদ্রিস, হাফেজ আব্দুল কাদের। এছাড়া নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক
মাওলানা ইয়াছিন, মাওলানা আলী আকবর, আমির হোসেন, মাওলানা আব্দুর রহিম, মাওলানা হারুনর রশিদকেও বহিস্কার করা হয়। এরা সকলেই মাওলানা ছলিমুল্লাহর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

এর আগে মাদ্রাসার পরিচালক পদ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা চলে আসছিল। সম্প্রতি মাদ্রাসা ঘিরে মারামারি, হামলার ঘটনাও ঘটে। থানায় দায়ের হয় মামলাও।

উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ‘মুহতামিম’ দাবিদার মাওলানা ছলিমুল্লাহ এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন গত ২৪ অক্টোবর দুপুরে। এ সময় ছাত্রদের একাংশ মাওলানা সলিমুল্লাহকে ‘মুহতামিম মানি না, শূরা চাই, শূরা চাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে ছাত্রদের একটি অংশ স্লোগানধারীদের সরিয়ে দিতে চাইলে উভয়পক্ষ হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, মাদ্রাসার পরিচালক বা মুহতামিমের পদ নিয়ে মাওলানা সলিমুল্লাহ ও মাওলানা হাবিবুর রহমান কাসেমীর মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। ছলিমউল্লাহ মরহুম আহমদ শফির অনুসারী। অন্যদিকে হাবিবুর রহমান হেফাজতের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীর অনুসারী ছিলেন।

এএস/এমএফও/এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!