সরকার রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ব্যর্থ : খালেদা জিয়া

সরকার রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ব্যর্থ : খালেদা জিয়া 1কক্সবাজার প্রতিনিধি : সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুতে কুটনৈতিক তৎপরতা ও সংকট সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে দাবী করে বিএনপি’র চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, সরকার রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও মানবিক সেবা দেওয়ার নামে আশ্রয় দিলেও রোহিঙ্গাদের সার্বিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। রোহিঙ্গাদের খাদ্য,বস্ত্র,পানি, চিকিৎসা, পয়োনিস্কাশন সহ সব ধরনের সহযোগিতা করার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল তাদেরকে বাধা দেওয়া হয়েছে।

সোমবার দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে উখিয়ার থাইংখালীর শফিউল্লাহকাটা ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ বিতরণকালে তিনি এসব কথা বলেন। চেয়ারপার্সন বলেন, ১৯৭৮ ও ১৯৯২সালে বিএনপি’র সরকারের আমলে প্রায় আড়াই লক্ষাধিক রোহিঙ্গা এ দেশে আশ্রয় নিয়েছিল। আমাদের আমলের সরকার এসব রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও মানবিক সেবার পাশাপাশি আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে এদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে সক্ষম হয়েছে। অথচ বর্তমান সরকার রোহিঙ্গাদের প্রথম দিকে এদেশে ঢুকতে দেয়নি। রোহিঙ্গা প্রবেশ করার জন্য সরকারকে আহবান জানালে সরকার নমনীয় হয়ে সীমান্ত খূলে দেয়। এসময় লাখ লাখ রোহিঙ্গা এদেশে আসতে থাকলেও রোাহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে সরকার ছিল উদাসিন। আমি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সেনাবাহিনী মোতায়েনের পক্ষে সরকারকে আহবান জানানোর পর প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে। সেনা দায়িত্ব নেওয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শৃংখলা ফিরে আসে।

বিএনপি’র চেয়ারপার্সন আরো বলেন,মিয়ানমার সেনা সদস্যের কাছে রোহিঙ্গারা যে ভাবে নির্যাতিত হয়েছে তা আমরা দেখেছি। এসব রোহিঙ্গাদের অনেকেই সহায়-সম্পদ ও স্বজন হারিয়েছে। অনেকেই পিতা-মাতা সন্তান হারিয়ে এদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের বাড়ী-ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বিএনপি’র নেতাকর্মীরা এসব রোহিঙ্গাদের শুরু থেকে খাবারপানি নিশ্চিত করেছে। মসজিদ নির্মাণ করেছে। রোহিঙ্গাদের চিকিৎসার জন্য মেডিকেল স্থাপন করেছে। রোহিঙ্গাদের পয়োনিস্কাশনের জন্য সেনিটেশনের ব্যবস্থা করেছে। আপনারা সকলেই জানেন বাংলাদেশ একটি ঘণ বসতি ছোট দেশ এখানে রোহিঙ্গাদের বেশি দিন রাখা যাবেনা। রোহিঙ্গাদের কারণে এদেশের বনাঞ্চল,পাহাড় ও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে জাতিসংঘ, ওআইসি সহ আর্ন্তজাতিক পর্যায়ের বড়বড় দেশ গুলোর সমর্থন নিয়ে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এবং তারা যাতে সেখানে নাগরিক অধিকার নিয়ে বসবাস করতে পারে সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এর আগেও বিএনপি সরকার রোহিঙ্গাদের অনেক সাহায্য সহযোগিতা করেছে এখনো করছে। তিনি সেনা বাহিনীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তাদের কারণে আজ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শান্তি শৃংখলা ফিরে এসেছে। এবং ক্যাম্পে যে সমস্ত এনজিও গুলো রোহিঙ্গাদের সেবায় এগিয়ে এসেছে তিনি তাদেরকেও ধন্যবাদ জানান। তিনি আর্ন্তজাতিক সংস্থার প্রতি উদ্ধাত্ত জানিয়ে বলেন, আপনারা জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে এখানে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি আরো উল্লেখ্য করে বলেন, এ সরকার রোহিঙ্গাদের যেভাবে সাহায্য সহযোগিতা দরকার ছিল তা করেনি। এবং যারা রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে তাদেরকে বাধা দিয়েছে। আমি রোহিঙ্গাদের জন্য ১১০মেট্টিক টন চাল দিয়েছি, ৫ হাজার শিশু খাদ্য ও ৫ হাজার প্রসূতি খাদ্য সহ চিকিৎসা সেবা দিয়েছি। ইতিমধ্যে যেসব রোহিঙ্গা মারা গেছে তাদের দাফনের ব্যবস্থা করা হয়েছে বিএনপি’র পক্ষ থেকে। তিনি বলেন, ত্রাণ বিতরণ করলে সব সমস্যা সমধান হবেনা, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে হবে। এদেশের মানুষ গরিব হলেও এদের মন আছে। এ কারনে রোহিঙ্গারা এখানে আশ্রয় নিয়ে আদর যতেœ রয়েছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বেশ কয়েকজন নির্যাতিত রোহিঙ্গারা নারী,পুরুষ ও শিশুদের সাথে কথা বলেন এবং মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত নির্যাতনের কথা ধৈর্য্য সহকারে শুনেন। এসময় তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে তাদের প্রতি সহমর্মিতা ও সহানুভূতি জানান। পরে রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণে অংশ নেন। এসময় বিএনপি’র মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য যথাক্রমে মীর্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খাঁন, ড. মঈন খাঁন, আমীর খসরু মুহাম্মদ চৌধুরী, গয়েশ^র চন্দ্র রায়, বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, বিএনপি’র সাবেক চীফ হুইপ জয়নাল আবেদীন ফারুক, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যনি, ফজলুল হক মিলন, জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, কেন্দ্রীয় বিএনপি নেত্রী শ্যামা ওবায়েদ, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি’র সভাপতি ডাঃ শাহাদাৎ হোসেন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি’র নেতা আবু সুফিয়ান, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সভাপতি গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী,কক্সবাজার জেলা বিএনপি’র সভাপতি,সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী, কক্সবাজার সদরের সাবেক এমপি লুৎফুর রহমান কাজল, উখিয়া উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি সরওয়ার জাহান ও উপজেলা চেয়ারম্যান সরওয়ার জাহান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সুলতান মাহামুদ চৌধুরী।

এদিকে বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া পর্যায়ক্রমে থাইংখালী হাকিমপাড়া, ময়নারঘোনা শরনার্থী ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। পরে বালুখালী পানবাজারে রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা সেবায় ড্যাব পরিচালিত মেডিকেল সেন্টারের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। বিকেল সাড়ে ৩টায় তিনি ঢাকার উদ্দেশ্যে উখিয়া ত্যাগ করেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!