সম্মেলন শেষে কমিটি আসার মাঝেই প্রতিদ্বন্দ্বীদের ঘায়েলে ব্যস্ত চট্টগ্রাম যুবলীগ

চট্টগ্রামে যুবলীগের তিনটি ইউনিটের সম্মেলন শেষ হলো। কমিটি ঘোষণা না দিয়েই সম্মেলন শেষ হওয়া রয়ে গেলো সম্মেলনের আমেজও। কারা আসছেন নেতৃত্বে, তাদের যোগ্যতা কি হবে-এই প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে সম্মেলনের পরও।

এরমধ্যে শুরু হয়েছে আবার কাদা ছোড়াছুঁড়িও। একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে ছড়াচ্ছে প্রপাগাণ্ডা। কার ছাত্রজীবনে মামলা ছিল, কার পরিবারের কোন সদস্য অন্য রাজনৈতিক আদর্শের, কার পেশা কি, কার সঙ্গে কার রাজনৈতিক আতাত, কোন নেতার অনুসারী কে- এমন নানা বিষয়কে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপনে ব্যস্ত হয়েছে অনেকে। এমনকি কারও কারও আত্মীয়স্বজন বিএনপি’র পদধারী নেতা সাজিয়ে মিথ্যাচার করছে কোনো পদপ্রার্থী।

যুবলীগের শীর্ষ পদ পেতে এসব বিষয় অপ্রাসঙ্গিক হলেও, নিজের অযোগ্যতা ঢাকতে অন্য ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’কে বেকায়দায় ফেলার এই অপকৌশল প্রয়োগ করছে কয়েকজন নেতা।

সম্প্রতি এমইএস কলেজ ছাত্রসংসদের সাবেক জিএস ও নগর ছাত্রলীগের ২০০৪ সালে গঠিত কমিটির দপ্তর সম্পাদক আরশেদুল আলম বাচ্চুর বড় ভাই কী রাজনীতি করে তা নিয়ে একপক্ষ শুরু করেছে আলোচনা। এমনকি ফেসবুক নির্ভর ভুঁইফোড় গণমাধ্যমে তার ভাই মঞ্জুর আলমকে চান্দগাঁও থানা বিএনপি’র আহবায়ক বানিয়ে প্রচারও করা হচ্ছে। অথচ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চান্দগাঁও থানায় বিএনপি’র কোনো কমিটিই নেই। আগের কমিটিতে মঞ্জুর আলম নামে কোনো ব্যক্তি কোনো পদেও নেই।

চট্টগ্রামের ৪ নম্বর চান্দগাঁও ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের ওয়ার্ডে কোনো আহবায়ক কমিটি নেই। আমি ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি। মঞ্জুর আলম নামে কেউ আমাদের কমিটিতে নাই। আমাদের ওয়ার্ডে পরিবহন মালিক সমিতির একজন নেতা মনজুর আলম নামে। তিনি আমাদের দলের কেউ নন।’

৪ নম্বর ওয়ার্ডের দীর্ঘদিনের বাসিন্দা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মঞ্জুর আলম আংকেল সিএন্ডবি এলাকার ব্যবসায়ী। আমাদের ছাত্রজীবনে তাকে দেখেছি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত নাগরিক কমিটিতে কাজ করতে। আমাদের প্রয়াত সাংসদ মাঈনুদ্দিন খান বাদলের নির্বাচনী কাজেও তিনি যুক্ত ছিলেন।’

চান্দগাঁও থানার আদি বাসিন্দা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে নৌকার পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেওয়াসহ দিন-রাত কাজ করেছেন মঞ্জু। অন্যকোনো মতাদর্শের লোক হলে সে আমার জন্য কাজ করতো না।’

চান্দাগাঁও থানা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. নুরুন নবী শাহেদ বলেন, ‘মঞ্জুর আলমের ছোট ভাই আরশেদুল আলম বাচ্চু যুবলীগের পদপ্রত্যাশী। এ কারণে মঞ্জু ভাইকে থানা বিএনপির আহবায়ক বানিয়ে অপপ্রচার করছেন আরশেদুল আলম বাচ্চুর প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ কেউ। অথচ এলাকায় আমরা ছোটকাল থেকে দেখে আসছি মঞ্জু ভাইকে প্রয়াত সাংসদ মউনুদ্দীন খান বাদল ভাইয়ের সঙ্গে। নৌকার পক্ষে তাঁর সঙ্গে আমরাও বাদল ভাইয়ের নির্বাচনী কাজ করেছি। এছাড়া তিনি চান্দগাঁও থানা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি নুরুল ইসলামের সঙ্গেও বিভিন্ন সময় দলীয় কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতেন।’

আরশেদুল আলম বাচ্চুর বড় ভাই মঞ্জুর আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি রাজনীতিতে সক্রিয় থাকিনা। কারণ আমার বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে। প্রয়াত সাংসদ বাদল ভাই ছিলেন আমার নেতা। প্রতিটি নির্বাচনে আমি বাদল ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করেছি। চসিক নির্বাচনেও বর্তমান মেয়র রেজাউল করিমের সঙ্গে কাজ করেছি। আমি যদি বিএনপি করতাম তাহলে প্রয়াত নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী আমার বিয়েতে আসতেন না। এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী গঠিত নাগরিক কমিটিতেও আমি দায়িত্ব পালন করেছি।’

স্থানীয়রা জানান, এক ছেলে, এক মেয়ে পিতা মঞ্জুর আলমের বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। ভাই-বোনের মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে থাকা মঞ্জুর আলম মূলতই পরিবহন ব্যবসায়ী। চান্দগাঁও-কালুরঘাট ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সহ-সভাপতি তিনি। ঠিকাদারি, সাপ্লাইসহ নানা ব্যবসাও আছে তার। রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকলেও ২০০৫ সালে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে মঞ্জুর আলম এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী গঠিত নাগরিক কমিটির নেতৃত্ব দিয়েছেন।

আরশেদুল আলম বাচ্চুর বিষয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায় শিবিরের গুলিতে নিহত ওমরগনি এমইএস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রলীগ ছাত্রসংসদের ছাত্রমিলনায়তন সম্পাদক শহীদ মোহাম্মদ এনামুল হক এনামের বন্ধু আরশেদুল আলম বাচ্চু। স্কুল জীবন থেকেই ছাত্রলীগ করা বাচ্চু রাজনীতি করতেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে।

তারা আরও জানান, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নির্দেশে বিএনপি-জামায়াতের শাসনমনে ২০০০ সালে ছাত্রলীগের আঁতুরঘর খ্যাত এমইএস কলেজ ছাত্রসংসদের নির্বাচনে বাচ্চু অংশ নেন জিএস পদে। বিপুল ভোটে জিএ নির্বাচিত হন তিনি। এরপর ২০০৪ সালে ঘোষিত চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মনোনীত হন আরশেদুল আলম বাচ্চু। পরবর্তীতে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর রাজনৈতিক ‘ইশারায়’ নগরীর ৪১ ওয়ার্ডেই শক্ত অবস্থান তৈরি করেন তিনি ছাত্রলীগ ও যুবলীগের রাজনীতিতে।

আদর/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!