সম্মেলন নিয়ে শেখ হাসিনার অপেক্ষায় নগর আওয়ামী লীগ

চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের থমকে থাকা ওয়ার্ড কমিটির সম্মেলন নিয়ে সম্প্রতি কেন্দ্র থেকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসলেও বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তাই কবে হবে সম্মেলন? এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদেশ সফরের দিকে তাকিয়ে কেন্দ্র ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।

তবে গত সপ্তাহে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে ঢাকায় এক বৈঠকে স্থগিত থাকা ওয়ার্ড সম্মেলনসহ নগর কমিটির সম্মেলন করতে সম্মত হয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা। এরপরও সভানেত্রীর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় একসপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও কোনও ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন না নগর আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রীর জাতিসংঘ সফর শেষে দেশে আসার পরই দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের উপস্থিতিতে ওয়ার্ড সম্মেলন ও নগর সম্মেলনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হবে বলে দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে।

এর আগে ২ সেপ্টেম্বর থেকে ধারাবাহিকভাবে ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড ও প্রতিটি ইউনিটের মেয়াদোত্তীর্ণ ওয়ার্ড কমিটির সম্মেলনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও কোনও এক অদৃশ্য অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ওয়ার্ড ও ইউনিট আওয়ামী লীগের সম্মেলন স্থগিত রাখা হয়। অথচ নগর আওয়ামী লীগের অনেক ওয়ার্ড ও ইউনিট কমিটির মেয়াদ অন্তত ২০ থেকে ২৫ বছর পেরিয়ে গেছে।

তবে দলীয় সূত্র জানায়, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন করা নিয়ে কেন্দ্রে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ যায় কেন্দ্রে। চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগ বিভক্ত দুই ধারার মধ্যে একটির নেতৃত্ব আছেন সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। অন্যটির নেতৃত্বে আছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তবে তাদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্র সম্মেলন স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়। এনিয়ে দলীয়ভাবে আনুষ্ঠানিক কোনও বক্তব্য না আসলেও শুধু দলীয় সভানত্রেীর নির্দেশেই সম্মেলন স্থগিত করার কথা বলা হয়েছিল।

গত ৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় মেয়াদোত্তীর্ণ সব কমিটির সম্মেলন আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার সিদ্ধান্ত হয়। এর এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত না আসলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারস্থ হন চট্টগ্রামের নেতারা। পরে গত সপ্তাহে এক বৈঠকে স্থগিত থাকা ওয়ার্ড সম্মেলনসহ নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করার বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ ও সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম। তবে ওই বৈঠকেই জানিয়ে দেন, ইতিবাচক হলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য সভানেত্রীর অপক্ষোয় আছেন তারা। জাতিসংঘের অধিবেশন শেষে দেশে আসার পর নেত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেই অনুযায়ীই পদক্ষেপ নেওয়া হবে নিজেদের তদারকিতে।

জানতে চাইলে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা সব প্রস্তুতি নেওয়ার পরও কেন্দ্রের নির্দেশে ওয়ার্ড সম্মেলন স্থগিত করা হয়। পরে সব মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে করার জন্য যখন সারা দেশে চিঠি দেওয়া হয় তখন কিন্তু আমাদের সেরকম চিঠি দেওয়া হয়নি। পরে গত সপ্তাহে বিষয়টি নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা ঢাকায় আমাদের সঙ্গে বসেছিলেন। তখন উনারা ওয়ার্ড কমিটিসহ নগর কমিটির সম্মেলনের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব জানিয়েছেন। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে। তাই আমরা সবাই নেত্রীর দেশে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করছি।’

একই কথা জানিয়ে নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি খোরশেদুল আলম সুজন বলেছেন, ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা ইতিবাচক মনোভাব দেখালেও নেত্রীর সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। যদি নেত্রী সম্মেলন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেন তখন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা চট্টগ্রামে এসেই সব কিছু ঠিক করবেন। মূল কথা হলো, সব কিছুই কেন্দ্র থেকে মনিটরিং করা হবে। যাতে কোনও বিরোধ বা সংঘর্ষ না হয়।’

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আ জ ম নাছির উদ্দিনের সঙ্গে প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী যে বিরোধ ছিল, তা বর্তমানে এসে মহিউদ্দীন পুত্র নওফেলের সময়েও চলমান রয়েছে। সেই বিরোধের ধারাবাহিকতায় বিশেষ করে ওয়ার্ড সম্মেলনকে কেন্দ্র করে তা স্পষ্ট হয় আরও। সম্মেলন স্থগিত রাখার পেছনে মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীদের ভূমিকা ছিল বলে ধারণা রয়েছে নাছির অনুসারী অনেক নেতাকর্মীর। আবার নওফেল অনুসারীদের ধারণা, পকেট কমিটির মাধ্যমেই ওয়ার্ড কমিটি গঠনের পর নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করতে চান নাছির। তাই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে মহিবুল হাসান নওফেলের অনুসারীরা সম্মেলন করার পক্ষপাতী নন বলে জানা গেছে।

জান যায়, প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও কাজী ইনামুল হক দানুর নেতৃত্বাধীন কমিটির মেয়াদকালীন যে ১৮টি ওয়ার্ডের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি, সেই সব ওয়ার্ডের সম্মেলন আগে সম্পন্ন করারও চিন্তাভাবনা ছিল মাহতাব ও নাছিরের নেতৃত্বাধীন কমিটির। তারপর পর্যায়ক্রমে মেয়াদোত্তীর্ণ সব কমিটির সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। এদিকে সম্মেলনের দিনক্ষণ ঘোষণার পর ৪৩টি ওয়ার্ডের পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের মাঝে বেশ উচ্ছ্বাসও দেখা দিয়েছিল। বিভিন্ন সভা সমাবেশ নেতাদের উপস্থিতি বেশ লক্ষ্যণীয় হয়ে ওঠে।

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!