দূর্ঘটনার কবলে পড়া ‘এমভি নিউ গোলাম রহমান’ নামে একটি জাহাজে বোঝাই ছিল মটর ডাল৷ এখন একমুঠো ডালও আর অবশিষ্ট নেই ওই জাহাজে। চোরের দল খালি করে ফেলেছে পণ্যে ভরপুর থাকা জাহাজটির ডেক। এখন খুলে নিয়ে যাচ্ছে জাহাজের যন্ত্রাংশ। ভারি ভারি পাটাতনগুলোও সরিয়ে ফেলা হচ্ছে সেই জাহাজ থেকে। দিনের আলোতে প্রকাশ্যে এ জাহাজটি অস্তিত্ব বিপন্ন করার উপক্রম এখন। কিন্তু চোরের দলকে ঠেকানোর সাধ্যও যেন নেই কারও। কারণ এই জাহাজটির রক্ষকই সেখানে পালন করছে ভক্ষকের ভূমিকা!
জাহাজের নিরাপত্তাকর্মী ও চোরাকারবারীরা হয়েছে একাট্টা। দূর্ঘটনার কবলে পড়া জাহাজের দিকেই তাদের লোভাতুর চোখ। এই লাইটার জাহাজ থাকা মালামাল সব নিয়ে যাচ্ছে তারা। জাহাজটি ভেড়ানো আছে পতেঙ্গা থানার আউটার রিং রোড সংলগ্ন বিচে।
জানা গেছে, গত ২১ জুন বন্দরের বহির্নোঙ্গর থেকে পণ্য বোঝাই করার পর আকস্মিক দূর্ঘটনার কবলে পড়ে বিএসএম গ্রুপের মালিকানাধীন ‘এমভি নিউ গোলাম রহমান’ নামে একটি লাইটার জাহাজ। এসময় জাহাজের তলার একটি অংশ ফেটে যায়। দূর্ঘটনার পর জাহাজটি পতেঙ্গা বিচ এলাকায় তীরে উঠিয়ে নিয়ে আসা হয়। জাহাজটিতে প্রায় ৮৫০ টন মটরডাল ছিল। চট্টগ্রাম থেকে যশোর যাওয়ার কথা ছিল জাহাজটির৷
এর মধ্যে গত ২৩ জুন রাত ১০টার দিকে বিজয়নগর এলাকার একটি চোরাইকারবারী দল ওই জাহাজের মটরডাল দুইটি বলগেট জাহাজে ভর্তি করে। সেখান থেকে তারা এসব ডাল নিয়ে নগরীর পতেঙ্গা থানার বিজয়নগর ঘাট এলাকায় নদীতে অবস্থান করে। এগুলো বিক্রি করতেই তারা এই ঘাটে নিয়ে আসে লাইটার জাহাজ থেকে চুরি করা মটরডালগুলো। ঘটনাটি জানাজানি হলে রাতের আঁধারে সেখান থেকে সরে যায় বলগেট জাহাজ দুটি।
চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে আসা একটি ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, মটর ডালগুলো ছড়িয়ে পড়েছে বিচ এলাকাজুড়ে। সেখানে থাকা বসতঘরের সামনে, ছাদে শুকানো হচ্ছে এসব মটরডাল। ওয়াকওয়ের উপর মজুদ করা হয়েছে শতশত ডালের বস্তা। এছাড়া নিরাপত্তাকর্মীদের উপস্থিতিতে জাহাজ থেকে বের হচ্ছে বড় বড় লোহার পাটাতন। জাহাজ থেকে এসব তোলা হচ্ছে ছোট বোটে।
অভিযোগ উঠেছে, পতেঙ্গা থানার বিজয়নগর এলাকার এয়ার মোহাম্মদ ও বাদশা নামে দুই ব্যক্তি এ জাহাজ থেকে মালামাল সরানোর ঘটনায় জড়িত। এছাড়া এয়ার মোহাম্মদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা রয়েছে।
জাহাজটির নিরাপত্তাকর্মী রেজাউল করিম রুবেল চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এই জাহাজ থেকে যেন একটি বস্তাও না সরে সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী। এ বিষয়টি স্থানীয় থানাকেও জানানো হয়েছিল। তবে এ পর্যন্ত থানার কোন কর্মকর্তাকে দেখিনি।’
বিএসএম গ্রুপের এক পরিচালক জাকির সুমন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হবে।’
পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল বড়ুয়া বলেন, ‘সেখানে পণ্য চুরির বিষয়টি আমার জানা নেই। তারপরও আমি দেখছি।’
এমএফও