সব প্রস্তুতি শেষ, নাইক্ষ্যংছড়ির ৩ ইউপির নির্বাচন সোমবার

কক্সবাজার জেলার পাশ্ববর্তী নাইক্ষ্যংছড়ির ৩ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সোমবার (১৪ অক্টোবর)। গত ১২ সেপ্টেম্বর রির্টানিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র দাখিলের পর থেকে নানা কার্যক্রম শেষে নির্বাচনী প্রচারণা। শেষ হয়েছে শনিবার রাত ১২টায়।

অপরদিকে প্রশাসন ভোট গ্রহণের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। এবারের নির্বাচনে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউপিতে চেয়ারম্যান প্রার্থী ২ জন, ভোট কেন্দ্র ৯টি ও ভোট কক্ষের সংখ্যা ৪০টি। এর মধ্যে ৩৬টি স্থায়ী ৮টি অস্থায়ী বলে নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে। সদর ইউপিতে ভোটার রয়েছে ১১ হাজার ১২৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫ হাজার ৬৫৬ জন আর মহিলা ৫ হাজার ৪৬৭ জন।

এ নির্বাচনে কে হবেন সদর ইউনিয়ন পরিষদের অভিভাবক জানতে অপেক্ষা করতে হবে সোমবার রাত পর্যন্ত। স্থানীয় তাহের ও শাহাজানের মতে সদরের ১ নম্বর নাইক্ষ্যংছড়ি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৯ নম্বর ফুলতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চাকঢালা মহিউচ্চুন্নাহ মাদ্রাসা কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের তসলিম ইকবাল চৌধুরী এগিয়ে রয়েছে।

তাংগরা বিছামারা ২নম্বর কেন্দ্রে এগিয়ে রয়েছে আনারস প্রতিকের নুরুল আবছার। আর অবশিষ্ট ভোট কেন্দ্রে নৌকা প্রতীক ও আনারস প্রতীকের মধ্যে তুমূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। শেষের কেন্দ্রগুলোতে নির্বাচনের শুরু থেকে এতোদিন আনারস মার্কা এগিয়ে থাকলেও গত কদিন থেকে উপজেলা সভাপতি অধ্যাপক শফিউল্লাহ ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা মন্ত্রীর পুত্র রবিন বাহাদুর নির্বাচনী মাঠে নামার পর এ অবস্থার পরিবর্তন হয়ে নৌকার দিকে ধাবিত হয়েছে বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ।

আওয়ামী লীগের উপজেলা সভাপতি অধ্যাপক শফিউল্লাহ বলেন, ‘যুবলীগ নেতা আনারস প্রতীকের নুরুল আবছার তার আপন খালাতো ভাই হলেও নৌকা প্রতীক মন্ত্রী বীর বাহাদুরের। তাই তিনি ৩ ইউনিয়নের নৌকাকে বিজয় করতে ভোটের মাঠে নামেন। তার মতে, নৌকার জয় হবে।

অপরদিকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদু রহমান প্রতিবেদককে বলেন, আনারস প্রতীকের নুরুল আবছার আমার ছেলে। বিএনপি-জামায়াত ছাড়া এ নির্বাচনে দু’জন প্রার্থী আওয়ামী লীগের। আমি ও আমার ছেলে দীর্ঘদিন ধরে নাইক্ষ্যংছড়ির মানুষকে জনসেবা দিয়ে আসছি। সেই জন্য ৯টি কেন্দ্রে জয় পাবে বলে তার বিশ্বাস।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান প্রার্থী ৩ জন। উপজেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন এ ইউনিয়নটি কক্সবাজার জেলা উখিয়া উপজেলা সদর এবং কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পূর্বপাশে মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায়। এছাড়া সীমান্তের শূন্য রেখায় বসবাসরত কয়েক হাজার রোহিঙ্গা। তারা তুমব্রু এলাকায় নানা কাজে আসেন। ভোট কেন্দ্রে যদি এমনই হয়। এসব কারণে এ ইউনিয়নটিতে ১৪ তারিখ যে কোন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা করছে স্থানীয় সচেতন মহল।

এ ইউনিয়নে ভোটার ৯ হাজার ৩০১ জন, ৯টি কেন্দ্রে ভোট কক্ষ ৩৪টি।

স্থানীয় ভোটার শফি আলম জানান, বর্তমান চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। তিনি ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান আর আওয়ামী পরিবারের সদস্য। ধনে-মানে সে এগিয়ে। তার অবস্থা প্রথমে খারাপ থাকলেও এখন দিনদিন ভালো হচ্ছে। তিনি আবারো অনেক ভোটের ব্যবধানে জিতবেন।

ভোটার শেখ সাহাব উদ্দীন বলেন, নৌকা প্রতিকের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী রশিদ আহমদ লড়ছেন ঘোড়া প্রতীক নিয়ে। তিনি সদ্য সমাপ্ত উপজেলা নির্বাচনে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক শফিউল্লাহর ঘুমধুমের অঘোষিত নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন। তার কারণে তিনি জিতেছেন। এখনও তাদের মধ্যে সে সম্পর্ক রয়েছে বলে এলাকাবাসী মনে করেন। এছাড়া বিরোধীদলবিহীন এ নির্বাচনে নৌকার ভোটও তার ভোট বাক্সে পড়তে পারে তাদের ধারণা। আর রশিদ আহমদ মেম্বার ২৭ বছর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ছিলেন। তিনি সৎ চরিত্র ও শান্ত প্রকৃতির মানুষ তাই তিনি সবার প্রিয়।

রশিদ আহমদ জানান, স্বচ্ছ ভোট হলে তার জয় সুনিশ্চিত। তিনি সাংবাদিকদের অভিযোগ করে বলেন ১, ২, ৩ এবং ৭, ৮ নম্বর কেন্দ্র তার কাছে ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে রোহিঙ্গারা ও উখিয়ার ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা ভোট ছিড়তে পারে। অপর প্রার্থী ছালেহ আহমদ আনারস প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। তিনিও জয়ের আশাবাদী বলে জানান। পাশাপাশি ছালেহ আহমদ প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠ ও নিরেপক্ষ নির্বাচন দাবী করেন।

তবে বর্তমান চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ এসব অস্বীকার করে বলেন, তিনি জয় পাবেন এ জন্যে এতো কথা। উপজেলা পর্যায়ের কয়েকজন নেতা মনে করেন। সবমিলিয়ে এবারে ৩ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হবে হাড্ডা-হাড্ডি।

সোনাইছড়ি ইউনিয়নটি উপজাতি অধ্যূষিত। এ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী ২ জন। ভোট কেন্দ্র ৯টি আর মোট ভোটার ৩৪৯৮ জন। ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান বাহান মার্মা। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। তবে তিনি প্রার্থী হয়েছেন আনারস প্রতীক নিয়ে। আর নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নবাগত এ্যানিং মার্মা প্রতিটি কেন্দ্রে এগিয়ে আছেন বলে স্থানীয় ভোটাররা মন্তব্য করেন।

তবে ভোটারের মাঠে শক্ত অবস্থানে আছেন বর্তমান চেয়ারম্যান বাহান। হয়তো জনগণ যদি চায় তিনিই জয় পেতেও পারে এ নির্বাচনে। এ পর্যায়ে তাকে আরো কৌশলী হতে হবে। কিন্তু ভোটে জেতার বিষয়ে এ দু’প্রার্থীই আশাবাদী।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও রির্টানিং অফিসার আবু জাফর ছালেহ বলেন, ‘সোমবার নাইক্ষ্যংছড়িতে নির্বাচন হবে দেশের জন্যে মডেল। পুরো নির্বাচনী এলাকা নিরাপত্তার চাদরে। প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশ ও আনসার-ভিডিপি থাকবে ১৯ জন করে। প্রতি ইউনিয়নে বিজিবি থাকবে ২ প্লাটুন। সব কেন্দ্রের আশেপাশে র্যাব থাকবে। ভোটার, কেন্দ্র ও সব বাহিনীর সার্বক্ষণিক পাশে থাকবে প্রতি ইউনিয়নে ৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। তারা খবর পাওয়া মাত্র ছুটে যাবেন ঘটনাস্থল। আর ঘুমধুমের রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও উখিয়া উপজেলার লোকজন যাতে প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্যে শুধু ঘুমধুম ইউনিয়নের চার পাশে ৬টি তল্লাসী ক্যাম্প থাকবে। তারা যে কোন বহিরাগত বা বেআইনী লোকদের সঙ্গে সঙ্গে আটক করবেন। সুতরাং নির্বাচন হবে স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ। কেউ এর বাঁধা হলে দায়ভার তাকেই নিতে হবে। এ নির্বাচনে কাউকে কোনো ধরণের ছাড় দেওয়া হবে না।

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!